March 31, 2017

আমার পড়া ভাল বই: সুখ

আইডিয়া পাওয়া বা ক্রিয়েটিভ কাজ ইত্যাদিকে এখনো আমাদের সমাজে একটা অলৌকিক প্রতিভা হিসেবে ভাবা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সত্যও বটে। তবে আমি মনে করি মহা ট্যালেন্টেড হয়েও লাভ নেই যদি আপনি নিজে না পড়েনবা না দেখেন। ধরা যাক আপনি দারুণ শক্তিশালী একটা কম্পিউটার এর মত। দুর্দান্ত প্রসেসরটেরা টেরা স্টোরেজর‍্যাম এর তো কথাই নাইগ্রাফিক্স ও সেই রকম। আমি বলতে পারি আপনি দারুণ ট্যালেন্টেড একটা কম্পিউটার- বা মানুষ। কিন্তু সেই কম্পিউটার এ যদি কোন সফটওয়ার ই না ইন্সটল করিযদি কোন ডেটাই না থাকেতবে আপনি কী প্রসেস করবেনকাজই বা কী করবেনতার মানে আপনার কাজ করার জন্যে দরকার উপাদান। সফটওয়ার লাগবেলাগবে ডেটা। সেই ডেটা প্রসেস করে ভাল গ্রাফিক্স এর পর সেটা আপনি পুর্নাঙ্গ একটা কাজ আকারে শেষ করবেন।  মানুষের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হল সে কোন কম্পিউটার না যে কয়েকটা সিডি বা পেন ড্রাইভ থেকে কিছু জিনিস কপি পেস্ট করে ভরে দিলামআর সে সব বুঝে গেল। তার বুঝতে হয় নিজের চারিদিক থেকে দেখে দেখেশুনে শুনে। তবে কেউ যদি সারাজীবন তার আশপাশ থেকে সব দেখে ফেলে বা শুনে ফেলে তারপরেও কিন্তু বিশাল যেই মানব সভ্যতার ইতিহাস তার কিছুই তার জানা হবে না। এই সমস্যার একটা দারুণ সমাধান হল বই। যে বই চাইলেই হাজার বছর আগের একটা মানুষ বা একদল মানুষ কী ভাবতো তা জানিয়ে দিতে পারে।

বই এর এখনো কোন বিকল্প মানুষ তৈরী করতে পারে নি। যতই ভিডিও দেখিগান শুনিআলোচনা করিবইয়ের একটা আলাদা জায়গা থেকেই যাচ্ছে। যেখানে লেখকের আর পাঠকের মধ্যে আর কারো আনাগোনা নেই।  তাই আমাকে যখনই কেউ জিজ্ঞেস করে- এমনকি কার্টুনের ক্ষেত্রেওযে কিভাবে আইডিয়া পাবআমার একমাত্র উত্তর হয়- বই পড়া। এর পরেই যেই প্রশ্নটা আসে সেটা হল কী বই পড়বআসলে এটা বলা কঠিন। যে যেই জিননিসটা সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে চায় তাকে সেই ধরনের বই পড়তে হবে। আর শুধুমাত্র আনন্দের জন্যে পড়াও অনেক জরুরী। তারপরেও আমার পড়া বেশ কিছু দারুণ বই ধীরে ধীরে ছোটোখাট রিভিউ ধরনের করে তুলে দিতে চাচ্ছি। তার ফলে পরিচিত অপরিচিত কেউ হয়ত উপকার পেতেও পারেন।

আজকের বই -
সুখের সন্ধানে
মূল বইটি পৃথিবী বিখ্যাত বৃটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের লেখা The Conquest of Happiness। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সার্থক অনুবাদে সেটা বাংলায় নাম পেয়েছে 'সুখ'। রবীন্দ্রনাথ থ্রিবেদী এটার আরেক অনুবাদ করেছেন 'সুখের সন্ধানে' নামে। সেটা আরো সার্থক নামকরণ আমার মতে। যাই হোক, এই বইটি আমি বেশ কয়েকবার পড়েছি। খুবই ছোট একটা বই, কিন্তু অনায়াসে তা কথা বলেছে মানুষের দুঃখের কারণ আর কিভাবে তার সমাধান করা যায় তা নিয়ে। কেন জীবনে ভাল কিছু বন্ধু থাকা অনেক জরুরী, এবং সেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে প্রয়োজনে কয়েক যোজন পাড়ি দিয়ে যাওয়াও যে স্বাস্থ্যকর, কেন প্রতিযোগিতা এড়ানো দরকার। কেন নির্লিপ্ততার সাথে সাথে আবার অনেক কাজ করে যাওয়াও জরুরী। প্রবল আঁতলামী দিয়েই যে জীবন ভরে ফেলা ঠিক  না, একেবারে সহজ স্বাধারণ সবকিছুকেই উপভোগ করার যে দরকার আছে, এবং সেই সাথে কেন অন্যের দোষারোপ না করে সুস্থ জীবন বেশী কাম্য- ইত্যাদি।


গৌতম বুদ্ধ কত হাজার বছর আগে মানুষের দুঃখের কারণ ও তার বিনাশের কথা অনেক সহজে বলে গেছেন, সুখের সন্ধানে পড়ে আমার মনে হয়েছে পাশ্চাত্যের এই বিখ্যাত দার্শনিক প্রাচ্যের সেই পুরোনো দর্শন নতুন করে সহজভাবে আবার বলেছেন। 

বইটি একেবারেই ছোট, এক বসাতেই পড়া শেষ হয়ে যাবে, তবে বার বার পড়তে ইচ্ছে হবে। মাথায় অনেকদিন। এবং পড়ার পর একটা ফুরফুরে মেজাজ চলে আসা উচিত। বইটি পাওয়াও বেশ সহজ। পপুলার রিড বলে প্রায় সব বড় লাইব্রেরিতেই পাওয়া উচিত। 

No comments:

Post a Comment

হ্যাংওভার কাটিয়ে

একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...