October 16, 2022

দৈনন্দিন

অক্টোবরের বিষন্ন বাতাস, কালচে গাঢ় হয়ে সন্ধ্যা নামছে। ঘণ ছাই চাদরের মত ধোঁয়া আর ধুলো মিলে একটা মতিভ্রম বুনে যাচ্ছে সামনে। পৃথিবীর দূষিততম শহরে উন্নয়ন চলছে। শৈশবে দেখা দূর পৃথিবীর অন্য সময়ের একটা যে ছবি আঁকা হত হলিউডি সিনেমায়, মানুষ সব বিষন্ন, মুখে মুখোশ। গ্যাস মাস্ক নিয়ে একদল জিন্দা লাশের মত চলছে- বর্তমান ঠিক যেন তাই। দূর পৃথিবী এখন সন্নিকটে। চামড়া থেকে ঘি মাখন উপচে পড়া দুই মেয়র এর মধ্যে মাঝে মাঝেই হুমকী দিয়ে যাচ্ছে- কারো বাসায় এডিস মশার লার্ভা পেলে দেখে নেবে। দক্ষিণের জন আবার হতদরিদ্র ফুটপাথের বিক্রেতাদের বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদে ব্যাস্ত।
এর মধ্যে বাসায় ফিরছি। পাঁচতারা হাসপাতালে মা (আমার শ্বাশুড়ি) জীবন সংকটে আই সি ইউ তে। সেই আগে দেখা সাই-ফাই সিনেমার মত বিভিন্ন কলকব্জাযোগে বেঁচে আছেন। ঠিক তার আগেরদিন আমরা একত্রে গুলশানের ব্যাম্বু শুট রেস্তোরায় খেলাম। তাঁর ছোট বোনের স্বামীর হৃদয়বিদারক বিয়োগের পরে বছর ঘুরে এই একত্র হওয়া। তার পর কী থেকে কী হল। হার্নিয়ার পেলে পুষে বড় করা সমস্যাটা এরকম হুট করে প্রাণঘাতী হয়ে গেল,। এখন ঝুঁজছেন ফুসফুসের সংকটে। ভেন্টিলেশন ছাড়া দম নেয়া যাচ্ছে না, পৃথিবীর দূষিততম শহরে এদ্দিন দম নিতে পেরেছেন এই তো বেশি। 

জীবন ক্ষণস্থায়ী- মানছি। কিন্তু সেটুকু সময়ে কিছু মানুষের অবহেলা আর দুরাচারে নিরীহ মানুষ যে অকালে চলে যায়, ভয়ানক কষ্ট পায় তা মানছি না। মাঝে মাঝে নিজেকে স্বার্থপর লাগে, এই সমস্যা নিয়ে কাজ করার মত একটা বিষয়ে পোড়াশোনা করে যেই বুঝেছি সেদিকে কাজ করার মানে নাই, এক জীবনে খুব বেশি কিছু হবে না, চলে এসেছই আরেকদিকে। ঠিক করেছি কী?
কে জানে।

গত রাতে মহাখালী ফ্লাইওভারে রাত সাড়ে এগারোটার সময় পার করতে করতে অনেককিছু মনে এলো। কত কী ফেলে এসেছি। বিশেষ করে আব্বা।
আব্বা ঠিক ওই আই সি ইউ তেই মারা গেছিলেন।  

October 13, 2022

নিউ এইজ এর কার্টুন

 

এবারেই প্রথম বাংলাদেশের নির্বাচনে ব্যবহার হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। নির্বাচন কমিশন (ও ক্ষমতাসীন দল) দাবী করে আসছিলো এটা নিশ্ছিদ্র একোটা ব্যবস্থা। জালিয়াতির সুযোগ নেই। গতকালের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সেটা হাস্যকর ভাবে ভুল প্রমাণিত করেছেন বাংগালি জনপদ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসিক্যামের মাধ্যমে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ে বসে বসে সবাই দেখেছে কিভাবে বুথের মধ্যে অন্যান্য লোক ঢুকে নির্দেশনা দিয়ে ভোট দেওয়াচ্ছে। নজীরবিহীন ভাবে এবারে সেই উপ নির্বাচন বাতিল (স্থগিত নয়) ঘোষণা করেছে ইসি। গতকাল সন্ধ্যায় নিউ এইজের জন্যে তাই নিয়ে করা কার্টুন।

October 11, 2022

UNMAD cover October 2022

বিভিন্ন কাজের ফাঁকে প্রতিদিন ড্রয়িং স্টাডি করে চলেছি। আঁকতে গেলে ইদানীং তার একটা ফল টের পাই তা হল, আগের চেয়ে আঁকায় সময় কম লাগছে। আর আগের চাইতে কিছুটা সাবলীল হবার জন্যে আঁকতে আগের চাইতে মজা লাগছে। স্টাডি তবে চলুক।

উন্মাদের এবারের প্রচ্ছদ বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল টিমের সাম্প্রতিক সাফ গেম জয়ের উপর। দারুণ একোটা ম্যাচ খেলে নেপালকে হারিয়ে জিতেছে তারা, সাবাশ! 
 

October 06, 2022

বিদায় কিম।



নতুন বাসা গুছিয়ে বসার আগেই মিতুর প্রবল জ্বর ও পেটের গণ্ডগোল। অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছিলো যে ডাক্তার বন্ধু মানিক পরামর্শ দিল আইসিডিডিআর, বি এ একটা বুকিং মেরে রাখা যেতে পারে। কী করি না করি ভাবছি এমন সময় ৪ তারিখ ঠিক দুপুর দুইটা থেকে প্রায় পুরো দেশে ব্ল্যাক আউট! জেনারেটর ঘোঁ ঘোঁ করে বেশ কিছুক্ষণ সামলানোর চেষ্টা করে পরে ফুরিয়ে গেলো। কিছুদিন একটা হালকা ভেজা ভেজা ভাব থাকায় অতটা গরম না হলেও দুর্যোগের এরকম জাতীয় ও বাসাতো প্লাস পাড়াতো সংস্করণ সবাই হাত ধরাধরি করে একত্রে চলে আসায় ভেবড়ে গেলাম। অবশ্য রাত সাড়ে ৯ টার দিকেই আবার মোটামুটি সব রি-স্টোর হল। এর মধ্যে মোবাইল ফোনের নেটোয়ার্ক বা ইন্টারনেট ও ছিলো না বললেই চলে। 

এসব চুকিয়ে পরদিন উঠে অবশেষে আমার ভীনদেশীয় ক্লায়েন্টদের অবশেষে একটা বলার মত অজুহাত শোনাবো বলে যেই না পিসি খুলেছি, দারুণ এক দুঃসংবাদ। এ যুগের অন্যতম- না বলা যায় প্রধানতম আর্টিস্ট, দক্ষিণ কোরিয়ান কিম জাং গি  প্যারিসে হঠাত হার্ট ফেইল করে মারা গেছেন।

ক্ষণজন্মা জিনিয়াস সম্ভবত একেই বলে। বয়স হয়েছিলো ৪৭, এ বয়সেই যা-তা কাজ করে গেছেন। অবিশ্বাস্য আঁকিয়ে ছিলেন। যাইহোক। হুট করে মাথায় ঢুকলো কত সহজ এই চলে যাওয়া। আমি এখন ৩৮ এ আছি। অর্ধেকের বেশি জীবন কত কী করা যেতে পারে ভেবে শেষ করে ফেলছি। বেস্ট কাজ বড় হলে করা যাবে ভাবতে ভাবতে বড় হয়ে হয়ে বুড়ো ও হয়ে যাচ্ছি। কিছু করা তো হয় নি, এবং সামনের দিনে দিন দিন কিছু করা আরো কঠিন ই হবে মনে হচ্ছে। যতই নিজের এত এত কাজ নিয়ে একটা ছদ্ম অহং লাগুক না কেন। আসলে তো গভীরে জানি কত আলসেমিতে অকারণ নষ্ট হচ্ছে একটা জীবন।

এমন মানব জনম কি আর হবে?

যা করো মন তড়ায় করো

এই ভবে।

----- 

ভালো থাকুন কিম

October 02, 2022

Tollabagh: A new start

নতুন ঠিকানায় এখনো সব অগোছালো। মিতু আর আমি মিলে আমাদের প্রবল অ-বৈষয়িক জীবনের মধ্যেও কিভাবে কিভাবে একটা ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছি। এখনো সেটা হজম হয়নি। বাকি জীবন খুব সম্ভব আমাদের ঠিকানা হবে এই তল্লাবাগ, সোবহানবাগ। জায়গাটা বেশ পুরোনো আবাসিক। পুরোনো আবাসিক এলাকায় একটা আলাদা ঘ্রাণ আছে, সেটা খুবই হালকা কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন সেটা টের পাওয়া যায়। চকচকে এপার্ট্মেন্টের মাঝে হুটহাট দুই একটা দোতলা বারান্দা ওয়ালা বাড়ি। গ্রিলের কারুকাজ সেই নব্বই দশকের কথা মনে করিয়ে দেয়। বারান্দায় ঝুলছে প্রায় তিন প্রজন্মের কাপড় চোপড়। তার মাঝে বাচ্চাদের অনেকগুল ছোট ছোট কাপড়। আর পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই কিছু 'যুবক' মোড়ে মোড়ে পাড়াতো আড্ডা গুলতানি মারছে। হাতের কাছেই হাতে লেখা সাইনবোর্ডের সেলুন। রাজাবাজার মসজিদের গেটে নকশী তোলা আগের আমলের সিরামিক মোটিফ। সব মিলিয়ে বেশ না চাইতেই আপন আপন একটা ব্যাপার। ওদিকে মিরপুর রোড টা পার হলেই আর এই বাতাস টা নেই, সব সেখানে অতি মসৃণ। পাখি বসছে না, মেঘ আটকে আছে কাঁচের দালানে। রাস্তাটা পাড় হলেই এপাড়ের মানুষও কেমন গম্ভীর হয়ে যায়। অবশ্য তারও দরকার আছে। চারিদিক বিচিত্র না হলে নিজের সমস্ত কিছুকে আলাদা করে খেয়াল করা ভার।

সেপ্টেম্বর  ৩০, ২০২২ এ আমাদের এই পুরোনো গন্ধমাখা আবাসিক এলাকায় একটা নতুন জীবন শুরু হল। আশা করি খুব একটা খারাপ কাটবে না এবারে। 

আমাদের নতুন ঠিকানায় (বাসা অগোছালো তাই ছাদে উঠে ছবি তোলা,
পেছনে তাকালে সংসদ ভবন দেখা যায়, এই ছবিতে অবশ্য নেই)


October 01, 2022

Kolaboti Rajkonnya Concept sketch


 ঠাকুরমা'র ঝুলি নিয়ে কমিক্স শুরু করলাম। সব বাদ দিয়ে নিজেদের যা আছে সেটাতে মনযোগ দেয়াই আসল কাজ। কারণ এটা আর কেউ করবে না। 

September 30, 2022

Mongla project

  

মোংলা ঘুরে এসে স্টোরিবোর্ড করছি প্রজেক্ট এর। ঘরে বসে আঁকলে কখনই কেন জানি আসল জায়গার মেজাজটা আসে না। সকাল থেকে আজ টানা আঁকছি। মোট ২৪ টা ফ্রেম এভাবে পেন্সিল করলাম। এগুলোর ফিডব্যাকের পরে ফাইনাল। আসলে পরের রেন্ডার পার্ট টা বরং সহজ। স্ক্রিপ্ট দেখে প্রথম কম্পোজিশন আর ক্লিন আপ টাই মূল কাজ, আর আমার ইদানীং এই ধাপের পরে আর করতে ইচ্ছে করে না। এর মধ্যে আগামীকাল নিজেদের ফ্ল্যাটে উঠবো, গ্রিন রোডে প্রায় সাড়ে চার বছরে কাটিয়ে দিলাম!  খুবই অদ্ভূত কিছু বছর আমার জন্য। আজ সারাদিন বাঁধাছাদা চলল।
আগামী মাসে একটু বিশ্রাম নেব। 

September 29, 2022

Concept art for a game

 

বছরখানেক ধরে একটা আমেরিকান গেম কম্পানির সাথে কাজ করছি, ক্যারেক্টার আর প্রপস। গেমটা অলরেডি নতুন কন্সেপ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে কী একটা পুরস্কার ও জিতেছে। কাজ করে খুবই মজা। এরা সাধারণত ক্লায়েন্ট হিসেবে খুব ই টু দ্যা পয়েন্ট পেশাদার। গেমটা নিয়ে পরে বিস্তারিত লিখবো। 

September 28, 2022

New Graphic novel!


 খুবই লোভনীয় একটি প্রজেক্ট। আমার খুব পছন্দের একজন লেখকের গল্পে (কাজ কিছুদুর এগিয়ে পরে ঘোষণা)। তবে মনে হয় না এটা পুরোটা করা হবে। স্টোরিবোর্ড আর পেন্সিল এর কিছু অংশ করতে পারি। আজ গল্প পড়ত পড়তে কিছু রাফ স্কেচ। 

September 27, 2022

নতুন কমিকস ইরাবতী শেষ

ফাইনালি শেষ হল আমার নতুন নিহিলিন সিরিজের কমিকস। কিশোড় আলো ম্যাগাজিনে আঁকার একোটা মজ আহল সমস্ত কাজের ফাঁকেও ঠিক ই বছরে একটা মোটামুটি ৬০-৭০ পৃষ্ঠার কমিকস হয়ে যায়ে। 

এবারে ড্রয়িং নিয়ে কিছুটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়েছিলাম, খুব একটা জমে নাই। পরের কমিক্স টা করবো মজার কিছু। অনেক দিউন টাইট ধরনের গল্প করা হচ্ছে। এর থেকে বের হতে হবে।


September 24, 2022

শুভ সকাল

 

বেশ ব্যস্ত শিডিউল চলছে। তিনজন ক্লায়েন্টের কাজ চলছে পাশাপাশি, আর কিশোর আলো ম্যাগাজিনের জন্যে আঁকছি আমার ইরাবতী কমিকস এর শেষ কয়েক পাতা। এর মাঝে চলছে নতুন বাসায় যাবার প্রস্তুতি। তারপরেও গত দুই বছরের রপ্ত করা প্রতি সকালে কিছু না কিছু প্র্যাকটিস চলছেই। কবে পিসি ডাউন হয়ে যায় কে জানে, তাই মনে হল সে সব এখানে মাঝে মাঝে আপ করে দেই। 

September 22, 2022

মোংলায় ঝটিকা সফর

ছোটবেলা থেকেই ঝটিকা সফর শব্দটা দারুণ লাগতো। আগে ভাবতাম হুট করে ঝটপট গিয়ে ফিরে আসা। এখন জানি ঝড়ের বেগে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা। সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষ এইরকম ঝটিকা সফর দিয়ে থাকলে। ঘটনাক্রমে গতকাল আমি এরকম একটা ঝটিকা সফরে ঘুরে এলাম মোংলা সমুদ্র বন্দর, কেন? কী কাহিনি?

কাহিনি সেই ঘুরেফিরে এক- কমিক্স! ইংল্যান্ডের কমিক আর্টিস্ট কারি ফ্রান্সমান  এর সাথে বেশ আগে পরিচয় হয়েছিলো, সেও এসেছিলো ঢাকায় আমিও গিয়েছিলাম লন্ডনে, যোগসূত্র সেই কমিক্স ও গ্রাফিক নভেল। এত বছর পরে হঠাত তাঁর মেইল। একটা গ্রাফিক নভেল কাম কমিকস প্রজেক্টে আমি কাজ করব ও কি না। ইউকের PositiveNegatives সংগঠন বাংলাদেশের মোংলার নির্দিষ্ট একটি এলাকার পানি সংকট নিয়ে একটা গবেষণা করছে। সেটার একটা অংশ হবে এনিমেশন কাম কমিক্স। মোট চারটা দেশে এই প্রজেক্ট চলবে, বাংলাদেশে তারা আমাকে চাচ্ছে।

না করার কথাই নেই। বেশ মজা পেলাম স্ক্রিপ্ট দেখে আর ওদের কাজ ও ভালো। তো সেই কাজের যে মূল জায়গা মানে যেখানের সমস্যা সেটা দেখতে চাইলে আর্টিস্ট সেখানে ঘুরে আসতে পারেন তাদের খরচে। এই সুযোগ কে মিস করে? সকালে সায়েদাবাদ জনপথের মোড় থেকে বি.এম লাইনের বাসে সোজা মোংলার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, উপড়ি দেখা হয়ে গেল বাংলাদেশের অন্যতম দারুণ স্থাপনা পদ্মা সেতু।  প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে বাসে করে যেতে যেতে হঠাত মনে হল হলিউডি কোন সাই-ফাই মুভির মধ্যে ঢুকে গেছি। আর ঠিক ঘণ্টাচারেক পরে যখন বাইরে তাকিয়ে দেখি বাগেরহাট তখন রীতিমত অবিশ্বাস্য ঠেকলো। আসলেই দারুণ ব্যাপার। বরিশালের মানুষ আমার আব্বা বেঁচে থাকলে নিশ্চই এই সেতু উপলক্ষ্যে একবার হলেও সবাই মিলে বরিশাল যেতে চাইতেন। যাই হোক।

মোংলা ব্যাঘ্র দ্বার 

এই টাংকিতে উঠেছিলাম (মাঝামাঝি)

বাঁ থেকে লুৎফর, মেহেদী ও মেহেদী

শুধু মেহেদী

সিগনাল টাওয়ার কলোনির ম্যাপ



মাঝে এই টং এ সবাই মিলে কফি খাওয়া হল।


মোংলায় এর আগে গিয়েছিলাম সেই ২০০৪ এ (যদ্দুর মনে পরে)। একেবারে যা-তা অবস্থা ছিল তখন। এবারে খুবই অন্যরকম সব। পশুর নদী পাড় করে অন্য পাড়ে যেতে মনে হল একটা ছোট খাট সেইন্টমার্টিন আইল্যান্ডে চলে এলাম। ছিমছাম শহর, কংক্রিটের বাঁধাই রাস্তা খান খন্দ নেই বললেই চলে। এখানে ওখানে ছিমছাম পুরোনো নতুন সব দোকান, তেমন একটা ময়লাও নেই। মানে বাংলাদেশের অন্যান্য অনেক শহরের চাইতে বেশ পরিষ্কার। যেই প্রতিষ্ঠানের সাথে এখানে মূল কাজ (ICCCAD) তাঁদের প্রতিনিধি এখানে লুৎফর আর মেহেদী (হ্যাঁ, আমি জানি)। ঘটনাক্রমে লুৎফর আবার আমার জাহাঙ্গীরনগরের জুনিয়র, তাই জমে যেতে সময় লাগলো না। অনেকটা ট্যুরের মতই ঘুরে বেড়ালাম। মূল কাজ পশুর নদীর কোল ঘেঁষে থাকা পুরোনো একটা স্লাম সিগনাল টাওয়ার কলোনি।  সেই 1962 এর দিকে যেটার বসতি শুরু (এর আগেও হতে পারে, ওখানে গিয়ে এই সালটাই সবচেয়ে



 আগের বলে জানা গেল)। এখানে বছরে ৪ থেকে ৫ মাস পানির কষ্ট। শুষ্ক ঋতুতে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। আর চারিদিকে সমুদ্র+ লবণাক্ত পশুর নদী। তাই এখানের বাসিন্দাদের খাবার পানির ভয়াবহ সংকট। এই সংকটের তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে একটা প্রেজেন্টেশন বানানোর কাজ চলছে যাতে এটার সমাধান করা যায়। সেটার একটা অংশ হল আমার কমিক্স ও এনিমেশন। গিয়ে যেটা লাভ হল প্রথম বুঝলাম ঢাকায় বসে লেখা রিপোর্ট বা স্ক্রিপ্টে তাদের যেমন প্রায় মুমূর্ষু একটা গোষ্ঠী মনে হচ্ছিলো আসলে ব্যাপারটা তেমন না। জায়গাটা বাংলাদেশের অন্যান্য আর দশটা গ্রামের মতই শুধু পার্থক্য হল সেটা একটা খাস জমিতে, ফলে কাগজে কলমে সেটা বেআইনি। আর সে কারণেই লিগ্যাল কোন পানির লাইন সেখানে যাচ্ছে না। সেই ঢাকার সব বস্তির মত একই সমস্যা। অন্যদিকে সেখানের মানুষজন বেশ হাসিখুশী, আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, বাচ্চারা বা কিশোর কিশোরীরা বেশ প্রাণবন্ত, তাদের আত্মবিশ্বাস বেশ ভাল। নতুন প্রজন্মের গ্রামের সবাই ও বেশ একটা আত্মসম্মান নিয়ে বেড়ে উঠছে এটা দেখতে ভাল লাগলো।

যাই হোক, আমি কিছু স্কেচ করে নিলাম, খুবই ডকুমেন্টেশন টাইপ। ওখানে কিভাবে মাছ ধরে, নৌকা কেমন, সবাই কী ধরনের কাপড় পরে ইত্যাদি। মাঝে একটা বিরাট পানির রিজারভয়েরেও উঠলাম। হাইট ফোবিয়ার কারণে মাঝামাঝি পর্যন্ত উঠেছি। আর তখন জানতে পারলাম একাধিক বড় পুকুর কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে খোঁড়া হয়েছিলো, কিন্তু সে দুটোর গভীরতা যতটা হবার কথা 'বিশেষ কারণে' সেগুলো অতটা গভীর করা হয়নি। ফলে পানির সমস্যা থেকেই গেছে। কী আর করা, আনো এখন বিলাতি ফান্ড। বাংলাদেশের সমস্যাগুলি এতই গোড়ায় যে বুঝতে খুব বেশি মাথা খাটাতে হয় না। 

কাজ টাজ গুছিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার ফিরতি বাস ধরার আগে এ পারে ফিরে সবাই মিলে সাঁটিয়ে মাছ ভাত খেলাম, লুতফর আবার মিতুর জন্যে এক বোতল 'অরিজিনাল' সুন্দরবনের মধুও দিয়ে দিল পর্যটনের হোটেল থেকে কিনে। কথা রইলো আবার কখনো হুট করে চলে আসবো।

ফেরার রাস্তা রিভার্স রিপিট, তবে বাসায় সাড়ে দশটারে মধ্যে এসে ডিনার টিনার করে ফেলতে পেরেছি। জয় পদ্মা সেতু! 

September 20, 2022

বেঁচে থাকার জন্যে দারুণ সময়!

বাংলাদেশে এখন একটা তরুণদের রেনেসাঁ চলছে। শুধু ক্রিয়েটিভ সেক্টরে না, শ্রমবাজার আর নতুন নতুন উদ্যোগে চারিদিকে সবাই যেন কে কার চেয়ে এগিয়ে নতুন কিছু করবে তার একটা প্রতিযোগিতা। দেখে বুঝতে পারি এই জিনিসটা নিজের তারুণ্যে মিস করতাম। কী যে দারুণ লাগছে তারপরেও। কয়েকটা ব্যাপার এখানে কাজ করেছে-
 
১. অনেকদিন ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানে একই সরকার আছে (যেভাবেই থাকুক সেটা সাপোর্ট করি বা না করি) ফলে প্রজেক্ট শুরু হয়ে দেরিতে হলেও সময় পেয়ে শেষ হচ্ছে। টাকা মারার জন্যে হলেও অনেক অনেক বিনিয়োগ হচ্ছে, অবকাঠামো হচ্ছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা দারুণ উন্নত হচ্ছে, আর সেই সাথে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে আগের চাইতে নিশ্চিন্তে।

২.  ইন্টারনেট। আসলে এটাই অনেক কিছু পালটে দিয়েছে। গ্রাম গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট। অনেক বিপত্তি ঘটছে তা সত্য তবে তার সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। আর ক্রিয়েটিভ সেক্টরে যে আগে কিছু দারোয়ান বসে থাকতো বিভিন্ন দরজায় যেমন সিনেমা, সাহিত্য, গান সেগুলো ঘুচে যাচ্ছ। ওভার দ্য টপ বা ওটিটি প্লাটফর্ম, বা অনলাইনে এখন পৃথিবী জুড়েই সব ভিজুয়াল কন্টেন্ট দেখার অভ্যাস পালটে দিচ্ছে। কিছুই আর সেন্সরে আটকাচ্ছে না। ফলে যে যার গল্পটা বলতে পারছে। আর মৌলিক গল্প সৎভাবে বললে সেটা মানুষকে টানবেই। একেবারে সাম্প্রতিক উদাহরণ মেজবাউর রহমান সুমনের  'হাওয়া' সিনেমাটা। তথাকথিত আর্ট ফিল্ম তকমা দিয়ে যেই ধরনটাকে আলাদা করা হয় দেখা যাচ্ছে নিজের মত করে মুন্সিয়ানার সাথে বলার কারণে সেরকম একটা গল্পও মূলধারায় রীতিমত বাণিজ্য করে ফেলছে। এটা একটা ভাল শুরু।

৩. গ্রাম থেকে প্রথম শহরে আসা বাবা মায়েদের যে একটা পিছুটান ছিল বা সব আনন্দ বাদ দিয়ে শুধু সঞ্চয় করতে হবে সেই জিনিসটা ছিল তা পরের প্রজন্মে অনেকটা কমে গেছে। ফলে জীবন মান আরো ভাল করতে মানুষ একটা বাজেট বরাদ্দ রাখছে আগের চেয়ে বেশি, উদাহরণ-  তরুণেরা এখন অনেক বেশী ভ্রমণ করে। অনেক বেশি অন্যরকম কিছু অভিজ্ঞতা নিতে চায়। 

আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্মের ৫০ বছর পার করে আমরা খুব সজীব একটা সময়ে আছি। আর এত তরুণ একত্রে আগে কখনো এই দেশে ছিলো না। আরো ৫০ বছর পরে এরা (আমি সহ :P চান্সে ঢোকার চেষ্টা) একটা সমস্যা তৈরী করবো বটে- বুড়ো অকর্মা  হিসবে দেশের অন্ন বস্ত্র ধ্বংস করবো। তবে তার আগে আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার এটা একটা দারুণ সুযোগ। আমি এটা দারুণভাবে অনুভব করছি। 

September 19, 2022

আমার 'বাঘা' আর নেই

 ব্লগে বা অন্য কোথাও আগে বলা হয়নি, বাঘা আমাদের বাসায় এসেছিলো করোনার লক ডাউন উঠতে না উঠতেই। তার আসার ইতিহাস মজার। এর আগে জিমে ব্যায়াম করার সময় এক ফাঁকে ইন্সট্রাকটর মুনির ভাইকে বলেছিলাম একটা বিড়াল থাকলে দিতে। কারণ করোনার লক ডাউনে ঢাকা কমিক্সের অফিস প্রায় ৮ মাস তালা মারা থাকায় ভেতরে ইঁদুরের দাপট শুরু হয়েছে। সেই সূত্র ধরে একদিন মুনির ভাই একটা রাস্তায় পাওয়া বিড়ালের ছোট বাচ্চা দিলেন। তার নাম রাখি টুটি। টুটি এতই দারুণ একটা বিরাল যে তাকে দিয়ে ইঁদুর তাড়ানোর কথা আর মাথায় আসেনি। আর ওদিকে লক ডাউন শিথিল হওয়াতে আমরাও অফিসে টুকটাক যাওয়া আসা শুরু করেছি, তাই আর ইঁদুর জনিত সমস্যাও নেই। এদিকে আমরা যতক্ষণ বাসায় নেই ততক্ষণ ছোট্ট টুটি খুবই আতঙ্কে থাকে, সে ঘরের কাগজপত্র টিস্যুপেপার ফাল ফাল করে ফেলে। মিতু গুগলে পড়ে টরে দেখে ছোট বাচ্চা বিড়াল একা একা ভয় পেলে এমন করে। অগত্যা আমরা অনেক খুঁজে টুজে রীতিমত বিক্র্য ড ট কম থেকে পরে আরেকটা বিড়াল খুঁজে বের করি। সেই হল আমাদের বাঘা।

সে দেখতে খুবই সুন্দর অরেঞ্জ ট্যাবি প্রজাতির বিড়াল। গারফিল্ড নাকি এই জাতের ছিল। চার্চিল ও এজাতের একটা বিড়াল পুষতেন, এসব জেনেছি অনেক পরে। তার আগে টুটি- বাঘার ফ্যাশঁফ্যাঁশ থেকে আস্তে আস্তে ভাব হওয়া পর্ব দেখাটাই ছিল দারুণ আনন্দের ব্যাপার। কিযে পছন্দ করত সে আমাদের। ভোরবেলা চলে আসতো, আস্তে আস্তে ডেকে আমাদের ওঠাতো, উঠতে দেরি করলে ডাকতে ডাকতে গালে থাবা বুলিয়ে ওঠাত। মাঝে মাঝে চোখের পাতাতেও থাবা রাখতো কিন্তু নোখ বের হতনা। খুবই ভদ্র আর শিশুসুলভ তার ব্যবহার আর ডাক। আমাদের বাচ্চা কাচ্চা যেহেতু নেই এই টুটি বাঘাই আমাদের সব। 

দেখতে দেখতে তারা বড় হয়ে গেল, তাদের দুজনের একত্রে চারটা বাচ্চাও হল। আর সেগুলি বড় হতে হতেই দেখা গেল বাঘা কেমন কোণঠাসা হয়ে গেল। সে দিন দিন মনমরা হতে লাগলো। আসলে বিড়াল একা থাকা প্রাণি। অনেক বেশি বিড়াল একত্রে হলে তাদের এলাকা নিয়ে একটা গণ্ডগোল লাগেই। তুলনামূলক ভদ্র বলে বাঘা আস্তে আস্তে সিঁটিয়ে যাচ্ছিলো। এটা টের পেয়ে আমি তাকে সবসময় চেষ্টা করতাম আলাদা করে আমার সাথে রাখতে। কিন্তু সারাদিন তো আর বাসায় থাকা সম্ভব না। তাই দিন দিন তার মনমরা ভাবটা বাড়তে লাগলো। আমরা বাচ্চা বিড়ালগুলি একটু বড় হতেই তাই তাদের দিয়ে দেবার চেষ্টা করতে থাকি, কিন্তু কেন যেন দেশি বিড়াল নিতে মানুষ আগ্রহী হয় না। ফলে সমাধান হল না।


এর মধ্যে হঠাত একদিন আবিষ্কার করলাম বাঘার পেটের লোম পড়ে যাচ্ছে। আসলে অনেক দিন ধরেই পড়েছে কিন্তু আমরা খেয়াল করিনি! এটা কেন হল বুঝলাম না। পরে দেখা গেল গায়েও অল্প সল্প ঘা হচ্ছে। ভেটের কাছে নিয়ে গেলাম যত আগে নেয়া উচিত ছিল তা নেয়া হয়নি। এটা অবশ্যই আমাদের গাফিলতি। তাও নিয়ে গেলাম যখন ধানমণ্ডির কেয়ার এন্ড কিওর ভেট থেকে ওষুধ দিলো। বেশ কিছু ওষূধ আর একটা মলম। মলমে ভালই কাজ হয়েছে কিন্তু ওষুধ সে কিছুতেই খেতে চায় না, আগেও এমন করতো। সাধারণত এমন করলে আমি খাওয়াই না। কিন্তু এবারে যেহেতু চর্মরোগ সারাতেই হবে জোর করে খাওয়ালাম। আর তখন থেকেই সে আমার দিকে খুব কষ্ট নিয়ে তাকাত। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না আমি কেন এমন করছি। একটা খাওয়ালে বিছানার নিচে লুকিয়ে থাকে, আমি আবার টেনে বের করে আরেকটা খাওয়াই, সে আবার আরেক কোণায় গিয়ে লুকিয়ে তাকিয়ে থাকে, আমি আবার টেনে বের করি। ক'দিন পরেই দেখি সে অনেক নিস্তেজ। আমি ইন্সটিংক্ট থেকে ওষুধ বন্ধ করে দিলাম, মলম চালু আছে। আর ঘাও শুখাচ্ছে একটু একটু। ভালই লাগলো। কিন্তু সে কেমন মনমরা হয়ে থাকে। বুঝলাম আমার ওপর অভিমান করেছে। তাই দুই দিন বাসাতেই থাকলাম প্রায় সারাদিন,। তাকে সময় দিলাম বেশি বেশি। কিন্তু না, নড়াচড়াও কম। খেলছেও না তার প্রিয় খেলনা নিয়েও। ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে ভাবছি উত্তরাতে যাব। অনেকদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা নেই। রুমে বসে ভাবছি যাব নাকি নতুন কমিক্স প্রজেক্টের কাজ শুরু করবো। এমন সময় হঠাত খেয়াল হল বাঘা কেমন হাঁফাচ্ছে। অবাক লাগলো। আজ তেমন গরম ও না, গরমে তার এমন হয়ে মাঝে মাঝে। আরো কিছুক্ষণ দেখে মনে হল কিছু একটা গড়বর হয়নি তো? তখন সাতটা বাজে প্রায়। ভেটকে কল দিলাম তারা বললো চলে আসেন নিয়ে। নিয়ে যাবার পরে প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ডাক্তার যখন দেখলেন তখন সে আরো হাঁফাচ্ছে। ডাক্তার দেখে বললেন ফুসফুসে কিছু একটা হয়েছে। এবং হতে পারে ফোর্স ফিড করায় ওষুধ তার লাংসে চলে গেছে!...

আমি কী বলবো বুঝলাম না, আমি কি নিজের হাতে বাঘার ফুস্ফুসে বিষ ঢুকিয়েছি? চারদিক দুলে উঠলো। ডাক্তার আবার বললেন এটা নাও হতে পারে। তবে একটা এক্স রে করান, এক্স রে আবার তাদের ওখানে নেই সেই রায়ের বাজার টালী অফিসের কাছে একটা ডায়াগনস্টিকে করতে হবে জলদি। তার তাড়া দেখে বুঝলাম আসলে অবস্থা সিরিয়াস। মাথা কাজ করছিলো না, এর মধ্যে মিতু আবার একটা ওয়ার্কশপে সাভারে, আমি একা। দ্রুত বাঘাকে নিয়ে গলি তস্য গলি পেরিয়ে এক্স রে করিয়ে আনলাম, ততক্ষণে ওর অবস্থা আরো খারাপ। এক্সরেতে দেখা গেল ফুস্ফুসে ভালই সংক্রমণ!। হয়ত আমার কারণেই এটা হয়েছে। আমার মাথা কাজ করছিলো না, ডাক্তার দুটো ইঞ্জেকশন দিয়ে বললেন আগামী  ৬ দিন টানা ইঞ্জেকশন দিতে। কেন শ্বাসকষ্টের একটা রোগী বিড়ালকে নেবুলাইজ করলো না সেটা জানি না, বা ফুসফুসে পানি বের করার অন্য উপায় ও কিছু কেন সাজেস্ট করেনি জানি না। যাই হোক, বাসায় নিয়ে এলাম, আমি আর বাঘা। আমি কী করবো বুঝছি না, বাঘার শ্বাসকষ্ট আস্তে আস্তে ঘড় ঘড় শব্দে পালটে গেল রাত ১১ টার দিকে, আবার ভেট কে কল করলাম, অবস্থা দেখিয়ে হোয়াটসএপে ভিডিও দেখালাম। উনিও চিন্তিত। বললেন সেঁক দিতে, ঠাণ্ডায় না রাখতে। ফ্যান অফ করে ইস্ত্রি করে করে একটা টি শার্ট দিয়ে সেঁক দিচ্ছি আমার নিস্তেজ বাঘাকে আর কাঁদছি। আমি কি না বুঝে ওকে মেরে ফেলছি? আমি কী করবো কিছুই মাথায় আসছে না। রাত দেড়টা পর্যন্ত বসে মনে হল সে একটু ভাল। মনে হল আগামীকাল হোক আরো ভালো কোন জায়গায় নিয়ে যাব। নেবুলাইজ করাবো। এই ডাক্তারের কাছে নেবুলাইজার নেই। শুয়ে পড়লাম, বাঘা নিচে একটা কাঁথার ওপরে, যদিও সে সেখানে থাকতে চাইছে না, খুব অস্থির করছে। বিছানায় আমার সাথেও থাকবে না, মনে হল এক তীব্র অভিমান নিয়ে সে  আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে বারবার। 

ঘুম ভাংলো ঠিক রাত ২.১৫ তে। একটা অশরীরি ঘরঘর শব্দ! লাইট অন করে দেখি বাঘা জিব বের করে মাটিতে গড়াচ্ছে, আর মুখ দিয়ে ঘরঘর করে পানি বের হচ্ছে। জিব কালচে হয়ে বের হয়ে গেছে। আমার হঠাত করে হার্টবিট অফ হয়ে গেল যেন। নেমে তাকে হাত বুলিয়ে একটা কিছু করার চেষ্টা করলাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম ও বেশিক্ষণ আর নেই। কাউকে কি কল দেব? বাইরে যাব? কী করবো? এত অসহায় লাগলো, এত ভয়ংকর অসহায় লাগলো। মনে হল চিতকার করে কাঁদি। আমি আমার বাঘাকে মেরে ফেলছি। একটু পরে দুই একবার হেঁচকি তুলে বাঘা চুপ করে গেল।

সেই রুমে, কতবার আমার সাথে খেলেছে, আমি কাজ করছি সে আমার টেবিলে চুপ করে ঘুমিয়ে। মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে আস্তে আস্তে ডেকে আদর করে দিতে বলতো। কাজ করছি, মেঝেতে বসে থাবা দিয়ে কাপড় টেনে ডেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যেত, সিঁড়িঘরে যাতে তাকে নিয়ে ঘুরে আসি। সেই বাঘা লালা ভর্তি মুখে স্থির পড়ে আছে সেই রুমে, আমার সামনে। আর ফিরে আসবে না। আমি প্রায় আধা ঘণ্টা কাঁদিনি। ওভাবেই বসে ছিলাম। কী করবো জানি না। মিতু থাকলে হয়ত কাঁদতাম। কিন্তু কাঁদতে পারছি না, বরং মাথায় এল এখন ওর ডেডবডি কী করব? আগামীকাই বা কী করব? ডাস্টবিনে ফেলে আসবো? সেটাও সম্ভব? আমাদের দেশে পেট সিমেটারি একটা বিলাসিতা। তাই ডাস্টবিন ছাড়া পোষা প্রাণীর ভাল কোন গন্তব্য নেই। উঠে বাঘার নিথর দেহটা একটা তোয়াল দিয়ে মুড়ে ওর প্রিয় কাগজের কার্টোনে ভরলাম। অনেক্ষণ বসে থেকে নিশ্চিত হলাম সে আসলেই নেই। তারপর কেমন ফাঁকা একটা অনুভূতি নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। স্বপ্নে দেখি সে আসলে মরেনি, উঠে বসেছে, কিন্তু মারা যাচ্ছে আমার আশে পাশের অনেকে। অদ্ভূত একটা স্বপ্ন। সকালে উঠে মিতুকে জানালাম, কিভাবে জানালাম জানি না।

তারপরে আরেক জার্নি, ডাস্টবিন থেকে তাকে বাঁচালেন সিমু নাসের ভাই, তাঁকে কল করতে তাঁর এক বন্ধুর জমির খোঁজ দিলেন। ঢাকার অদূরে ঘাটারচরে। আমরা উবার করে বাঘার নিথর শক্ত হয়ে যাওয়া দেহটা তার সবথেকে পছন্দের বস্তু বড়ো একটা পলিথিনে করে আরেকটা পছন্দের বস্তু কাগজের প্যাকিং বক্সে করা নিয়ে গেলাম, মাটি খুঁড়ে তাকে পলি থেকে বের করে মাটিতে রাখলাম, সেই সুন্দর চিরচেনা ডোড়াকাটা প্যাটার্ন ছাইরঙ্গা বালিমাটির মধ্যে কী সুন্দর দেখাচ্ছিল। শুধু বিস্ফারিত দুই চোখে তখনো রাজ্যের অভিমান। কতবার যে ক্ষমা চেয়েছি, বলেছি বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি বুঝে করি নি। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। মানুষের থেকে অনেক বিশ্বাসঘাতকতা পেয়েছি। তোমার থেকে শুধু ভালোবাসাই পেয়েছিলাম। বিনিময়ে ফেরত ও দিতে চেয়েছি কিন্তু নিজেও মানুষ তাই গাফিলতি আর নির্বুদ্ধিতায় তোমাকে মেরে ফেলেছি। 


পরবর্তীতে মিতু ও ডাক্তার আমাকে স্বান্ত্বনা দিতে বারবার বলেছে এত দ্রুত নিউমোনিয়া হয় না। খুব সম্ভব লোম পড়ে যাওয়া পেট টাইলস এ লাগিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে এটা হয়েছে আরো আগেই, কি জানি। কী যায় আসে তাতে। বাঘা নেই এটাই হল বাস্তবতা। সেই বাস্তবতা মেনে নেয়া সম্ভব না। আর জোর করে তাকে ওষূধ খাওয়ানোর শেষ দিন বা তার মৃত্যুর রাত কিছুই কি আমি ভুলতে পারব?

নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবো জানি না। আমার ভয়ানক মানসিক পীড়ার জীবনে একটা সুন্দর জানালা হয়ে যে ছিল তাকে আমি নিজের হাতেই হয়ত মেরে ফেলেছি। 

আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা। 


বাঘা



তার সবথেকে পছন্দের জায়গা আমার কাঁধ।

গায়ের ডোরার জন্যেই তার এমন নাম দিয়েছিলাম

বসার খুব উদ্ভট কিছু ভঙ্গী ছিল তার।

ড্রয়িং ক্লাস, আঁকতে গেলেই মাঝে মাঝে এভাবে বসে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতো যখন ছোট ছিল

আমাদের কম্বলে বাঘা শীতকালে ক্যামোফ্লেজড অবস্থায়।

বাঘা যখন প্রথম এল। তখন আকাশ এর কানেকশন নিচ্ছিলাম, তার সেটাতে খুব আগ্রহ। 

June 22, 2022

এসেছে নতুন উন্মাদ: UNMAD new issue with MOON KNIGHT parody Cartoon

জীবনের সবচেয়ে দারুণ অনুভূতির প্রথমটা আমার এখনো উন্মাদে যখন কোন কাজ বের হয়।
মনে আছে ক্লাস টেনে জীববিজ্ঞান পড়তে পড়তে হঠাত মাথায় আইডিয়া চলে আসলো যে কোনভাবে কার্টুন এঁকে যদি উন্মাদে ঢুকে যেতে পারি তাইলে আর চিন্তা নাই, করলাম না আর পড়াশুনা। ছোটবেলার ভাবনা যে সত্যি সত্যি এভাবে সত্যি হয়েযাবে সেটা আসলেই ভাবি নাই।
ধন্যবাদ উন্মাদ।

এবারে উন্মাদের MOON KNIGHT সিরিজের প্যারোডি করেছি সংলাপ সহ। আর সেই সাথে আগের বাতিল একটা প্রচ্ছদ চলে এসছে কিঞ্চিত 'পরিমার্জিত' রূপে। 

ভাল কথা- কিভাবে সংগ্রহ করবেন কপি? এই পেইজে ইনবক্স করে দিতে পারেন সরাসরি আপনার নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার। 



 


May 13, 2022

ওয়ার্ল্ড প্রেস কার্টুন এর সংকলনে আমার কার্টুন।

 অবশেষে হাতে পেলাম! ওয়ার্ল্ড প্রেস কার্টুন প্রতি বছর পৃথিবীর সেরা সব কার্টুন নিয়ে একটা সংকলন করে। সেখানে শুধুমাত্র প্রেস-নিউজপেপারে প্রকাশিত কাজ স্থান পায়। ২০১৫ এর সংকলনে আমার একটা কাজ স্থান পেয়েছে। সেটা এতদিন পর সবাইকে জানানোর কারণ হল- এতদিন আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না! কারণ নিয়ম মেনে যাদের কার্টুন প্রকাশিত হবে তাদেরকে একটা সৌজন্য কপি পাঠানোর কথা। আমি পাইনি।

মাঝে তাবরিজ কার্টুনের একটা সাইটে বইটার একটা সূচী দেখি, তাতে দেখি মেহেদী হক, বাংলাদেশ। তারপর থেকেই নানা ভাবে জানার চেষ্টা করেছি, তাদের মেইল করা, ফেইসবুক পেইজে নক করা। মানে শুধু ইউরোপে যাওয়া বাকি রেখেছি। বুঝতে পেরেছি সবদেশের কার্টুনিস্ট ই আসলে এক জিনিস। আমাদের মতই অলস টাইপ। যাই হোক, শেষে হঠাত সেদিন কী একটা খোঁজ করার ফাঁকে দেখি এই বইয়ের একটা কপি সেল হচ্ছে। সাথে সাথে কার্টুনিস্ট কাম তুখোর ইঞ্জিনিয়ার Zahid কে নক। সে থাকে নেদারল্যান্ডস, সে বলার সাথে সাথে অর্ডার ঠুকে দিল। আর এক সপ্তাহের মাথায় চলে এল বই। এবং হ্যাঁ, সেখানে আমার কার্টুনটি আছে। এলফাবেটিকালি এ এর পরেই বি, আর বি ফর বাংলাদেশ।
এই অর্জনটা আমি উৎসর্গ করতে চাই আমার দুই গুরু আহসান হাবীব ও আমার পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর কে। বিশেষ করে Nurul Kabir যিনি না থাকলে আমি কার্টুনিস্ট হতাম বটে তবে পলিটিকাল কার্টুনিস্ট হতাম কি না জানি না। ধন্যবাদ সবাই।






পুনশ্চ: কার্টুনের প্রেক্ষাপট, নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে এটা আঁকি। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গড়সে ছিলো উগ্রপন্থী আর এস এস সমর্থক। আর সেই মতাদর্শের একটি দল ক্ষমতায় এলো। যা গান্ধীর অহিংস দর্শনে আবারো চরম আঘাত।
কার্টুনটি ডেইলি নিউ এইজে ১৭ মে, ২০১৪ তে প্রকাশিত।



May 07, 2022

ক্যারিকেচার টিউটরিয়াল: আফজাল হোসেন

বেশ অনেকদিন পরে আবার ক্যারিকেচার। যা বুঝলাম গ্রামার ট্রামার আয়ত্ত্বে আনতে গিয়ে 'মজা' কমে গেছে কাজে। মজা আনার উপায় খুঁজছি।

May 06, 2022

চলে এলেন সত্যজিৎ

দারুণ ব্যাপার, সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ‍্যায় সম্পাদিত, 'ব‍্যঙ্গদর্শনে সত‍্যজিৎ' বইটিতে আমার আঁকা সত্যজিৎ রায়ের ক্যারিকেচার স্থান পেয়েছে। ভাবতেই শিহরণ, সত্যজিৎ রায়ের কলকাতায় আমার আঁকা তাঁরই ছবি। দিনটা দারুণ শুরু হোল। ধন্যবাদ চন্দ্রনাথ দাদা।

 







January 18, 2022

বিদায় নারায়ণ দেবনাথ Goodbye Narayan Debnath


বাংলা কমিকস কার্টুন এর কিংবদন্তী নারায়ণ দেবনাথ আজ সকাল ১০.১৫ তে মারা গেছেন। জীবনের সবচেয়ে দুর্লভ ও অসামান্য স্মৃতির একটি হল তাঁর সাথে দেখা হওয়া। ২০১৬ সালে স্বয়ং তাঁর হাত থেকে নারায়ণ দেবনাথ কমিকস পুরস্কার নেবার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। এই পর্যাইয়ের মানুষেরা অনেকটা পর্বতের মত হয়ে যা। স্থির, শান্ত সৌম্য এবং মেঘের মত শুভ্র। প্রায় পুরো জীবন পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও কখনই জন্মস্থান বাংলাদেশের বিক্রম্পুরের কতাহ ভুলতে পারেন নি তিনি। ঘরোয়া আড্ডায় প্রাণখুলে অনেক স্মৃতিচারণ চলেছিল পর পর দুইবার। 

করোনার জটিলতায় শেষে আরেকবার দেখার সুযোগটা আর হলো না মিতু বা আমার কারোরই।

চলছে ফরেন কমিকস