এটা উন্মাদের মে ২০১০ এর প্রচ্ছদ। সে সময় (এবং অদ্যাবধি) ঘন্টায় ঘন্টায় কারেন্ট যাচ্ছে। অনেকটা ডিজিটাল নিয়ম মেনে- আছে-নাই-আছে-নাই মানে কি না -0-1-0-1 এর বাইনারি। মানুষের ধৈর্য্যের পরীক্ষা করছেন আমাদের মাননীয় এসি বিলাসী ও প্রটোকলের বহরে আটকা পড়া সচিব মন্ত্রী সান্ত্রী আর যত অযোগ্য পুঁথি-পণ্ডিতের দল।অপরদিকে কৌতুকের চুড়ান্ত উদাহরণ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হল যে ওয়েবসাইটে কখন কোথায় লোডশেডিং হবে তার টাইমটেবিল দেয়া হয়েছে! বাহ, কি চমৎকার! আমাদের উন্নতি আর ঠ্যাকায় ক্যাডা? এখন কখন কোথায় ছিনতাই হবে সেটা যদি শুধু ডিএমপি থেকে বলে দেয়া হত তাহলে আমার এবারের মোবাইল সেটটা হয়ত বাঁচাতে পারতাম। যাকগে।
সঙ্গত কারণেই আমি এবারের প্রচ্ছদ লোডশেডিং এর ওপর করবার সিদ্ধান্ত নেই। দৃশ্যকল্পটা ভাবি যে উন্মাদ একটা হারিকেন জ্বালিয়ে তার পিসি'র মনিটরে সাঁটা লোডশেডিং এর টাইমটেবিল দেখছে।
তার আগে বলে নেই, প্রায় কাছাকাছি ধরণের একটা প্রচ্ছদ উন্মাদে হয়েছিলো(নিচের ছবি দ্রষ্টব্য) ১৯৮৫ সালে! (আমার বয়স তখন ১ ) অর্থাৎ আমরা খুব একটা এগোতে পারিনি। সেই প্রচ্ছদ আঁকেন উন্মাদ ইতিহাসের সেরা আঁকিয়ে 'সুলতানুল ইসলাম' (শিশু একাডেমির সামনে রাখা দুরন্তের ভাস্কর, তাঁর করা একটা কাজ তাঁর জীবদ্দশায় জাতীয় জাদুঘরে রাখা আছে!) কেউ যেন মনে না করেন নিজেকে ওই রেঁনেসিয় মাস্টারক্লাসের সামনে দাঁড় করাবার জন্য এটা বললাম, বললাম কারণ এই আইডিয়াটা আরো দশটার মত ওইখান থেকেই ধার করা।সঙ্গত কারণেই আমি এবারের প্রচ্ছদ লোডশেডিং এর ওপর করবার সিদ্ধান্ত নেই। দৃশ্যকল্পটা ভাবি যে উন্মাদ একটা হারিকেন জ্বালিয়ে তার পিসি'র মনিটরে সাঁটা লোডশেডিং এর টাইমটেবিল দেখছে।
যা-ই হোক এটাকেই ইদিক উদিক করে আমার আইডিয়াটা সাজালাম।
(একটা করুণ ব্যপার খেয়াল করুন, উন্মাদের প্রচ্ছদ এখন বিজ্ঞাপনের কোপে পড়ে আয়তকার থেকে বর্গাকার হয়ে গেছে।)
থাম্বনেইলগুলি সাক্ষ্য দেবে যে কম্পোজিশন নিয়ে আমি ভাবার চেষ্টা করি। :)
আঁকতে গিয়ে আমি দু'টো সমস্যায় পড়ি
১. হারিকেন কই পাই?
২. রঙ কিভাবে করি?
২. রঙ কিভাবে করি?
হারিকেন সমস্যার সমাধান করলেন আমার আম্মা। আমাদের এক ভাড়াটিয়ার বাসায় এই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এক বংশধর কিভাবে যেন টিকে ছিলো, সেটা ঝাঁড়পোছ করে আমার টেবিলে রাখা হল। (ঠিক ওইদিনই গ্রাম থেকে এক দুর্সম্পর্কের এক মামা এসেছিলেন, উনি জানতেন আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, তাই হঠাৎ আমাকে এক মনে হারিকেন আঁকতে দেখলে আমাকে দীর্ঘ বয়ানের মাধ্যমে তাঁর যৌক্তিক কৌতূহল নিবারণ করতে হয়) নিচে হারিকেনের দূর্বল স্টাডি। এই জিনিষ আঁকা যে এত জটিল তা আগে কল্পনাতেও আসে নাই। কার্টুনিস্ট ভাইদের বলব রিক্সা আর হারিকেন আঁকা শুরু করেন অনেক আঁকা তখন অনেক সহজ মনে হবে।এবার রঙ নিয়ে ঝামেলা, কারণ হারিকেনের ভুত-ভুত আলো জল রঙ এ আঁকবার প্রতিভা বা দক্ষতা কোনটাই আমার নাই। হঠাৎ খেয়াল হল 'বাঁশ' এর কথা (অর্থাৎ কি না আমার মিনিয়েচার ব্যাম্বু কম্পানির গ্রাফিক ট্যাবলেট, দুলাভাই আর্কিটেক্ট শহীদুল্লাহ ফারুকের দেয়া আমার জন্মদিনের গিফট) ঐটা নিয়া এখনো খুব একটা কাজ করি নাই। ঠিক করলাম প্রথমে গোটা ড্রয়িংটা একটা এম্বস পেপারে গ্রাফাইট পেন দিয়ে এঁকে নেব, তারপর স্ক্যান পূর্বক 'ফুটোশপে' কালারিং চলবে। এবার আরেক সমস্যা, হারিকেন ধরা হাত। এটা যথেষ্ট জটিল পোজ। নিজেই মডেল হয়ে নানা কসরৎ করে কয়েকটা ছবি তুললাম আমার বুড়ো cyber shot এ। তারপর স্টাডি (নিচের ছবি দ্রষ্টব্য)
একটা ব্যপার চেষ্টা ছিলো যে, এইটা যেন হুবহু সুলতানুল ইসলামের 'পোজ' টা না হয়ে যায়। আশা করি পেরেছি। এই পর্যায়ে এসে শুরু করি স্কেচ। কম্পিউটার টেবিল হিসেবেয়া আমার কাস্টমাইজড পিসি (যেটায় বসে এই ল্যাখাটা লিখছি) কেই বেছে নেই।(একটা ব্যাপার কেউ লক্ষ্য করেনি, আমার মনিটরের নিচে কিন্তু একটা পিঁড়ি রাখা! আমার চেয়ার এডজাস্টেবল না বলে এই বাংলা বুদ্ধিতে মনিটর এডজাস্ট করা হয়েছে)। এবার গ্রাফাইট পেন এ নিচের স্কেচটা করি-
এরপর সেই থোড়বড়ি খাড়া- লিখে তাড়াতাড়া, অর্থাৎ স্ক্যানং করনং গচ্ছামি, রংঅং করনং গচ্ছামি। এটা শুধু একটা নিউ লেয়ার মাল্টিপ্লাইড করে ইয়েলো 100% আর ম্যাজেন্টা 45% মিলিয়ে ঝিলিয়ে করা।
এরপর সেই থোড়বড়ি খাড়া- লিখে তাড়াতাড়া, অর্থাৎ স্ক্যানং করনং গচ্ছামি, রংঅং করনং গচ্ছামি। এটা শুধু একটা নিউ লেয়ার মাল্টিপ্লাইড করে ইয়েলো 100% আর ম্যাজেন্টা 45% মিলিয়ে ঝিলিয়ে করা।
এবার আসল কথা, সেটা হল এই গোটা প্রক্রিয়া টানা ৫ দিন ধরে চলেছে (যদিও নিরবচ্ছিন্ন নয়), তো এইবার বোধহয় কিছুটা হলেও বোঝানো যাচ্ছে যে 'হারাদিন কি এত আঁকস ...(অশ্রাব্য)' বন্ধুমহলের ইত্যাদী প্রশ্নের কোন জবাব আমি কেন দেই না?
আমি সত্বর (প্রথমত) শ্রীমান আহসান হাবীব ও অতঃপর আমার সকল শুভাকাংখীদেরএই পোস্টে ট্যাগ করিতে চাহিতেছি। কিন্তু তাহা কেমনে করে বা আদৌ করা যায় কিনা তা এখনো জানি না।
খোদা ও f1 বাটন সহায়।
আমি সত্বর (প্রথমত) শ্রীমান আহসান হাবীব ও অতঃপর আমার সকল শুভাকাংখীদেরএই পোস্টে ট্যাগ করিতে চাহিতেছি। কিন্তু তাহা কেমনে করে বা আদৌ করা যায় কিনা তা এখনো জানি না।
খোদা ও f1 বাটন সহায়।
আপনার শুধু ছবি আঁকার হাত অসাধারন তাই নয়, আপনার লেখার হাতও মারাত্নক রকমের মজাদার। পড়ে মজা পাইছি। চালিয়ে যান মেহেদি ভাই। আমি আপনার নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলাম।
ReplyDeleteamio holam mehedi bhai.
ReplyDeleteMehedi vai, next boi melar jonno ekta prostuti nen. erokom aro 5/6 ta lekha milie jhilie boi ber koren. Illustration ami koira dibone :B
ReplyDeleteসু ন্দ র। চলুক।
ReplyDeleteপড়ে বেশ ভালো লাগলো। দারুণ কাজ।
ReplyDeleteহা হা হা। হাসতে হাসতে শেষ! জোশ লিখেছেন। :)
ReplyDeletenext time jokhon dekha hobe kamon kore kajta korechen jante chaibo vebechilam; apnar blogta porei jene gelam. thank you sir.i enjoyed it very much.
ReplyDeleteBhai apni aken bhalo.lekhen o valo
ReplyDelete:D
Delete