আমার গুরু নুরুল কবীর (সম্পাদক, দ্য ডেইলি নিউ এইজ) বলেন,
'বাংগালী মুসলমানের কিছু হয় না ক্যন জানেন?'
আমি, 'না'
নু.ক. "কারণ হ্যারা কতায় কতায় কিছু টার্ম ইউজ করে যেমন - 'আমি ভাবছিলাম' বা 'আমি তো মনে করছিলাম'।"
আমাকে মানতেই হল যে কথা সত্য, নিদেনপক্ষে গোটা পাঁচেক 'ওয়ার এন পিস' সাইজের সোশ্যু কালচারাল থিসিস করলেও তার ফাইন্ডিংস মোটামুটি এমনই দাঁড়াবে। আমি ইদানীং মাঝে মাঝেই ওই কথাটা ভাবি। আমাদের এইরকম ক্যান হয়? আমরা সেই এখনো ঢিলা, আইলসা পরনিন্দাপটিয়সী একটা জাত থেকে গেলাম ক্যান? এমনকি আমাদের মাস্টার্সের ক্লাসে জার্মান ফেরৎ দুঁদে টিচার তৌফিক স্যারও আমাদের প্রায় তিনটা ক্লাস নিলেন যে 'আমরা পারি না ক্যান?' তার ওপর। ডিউ ডে তে যেই আমাদের কয়েকজন এসাইনমেন্ট দিতে পারলাম না সেদিন উনি বললেন- 'ইহা আমাদের খাইসলত। আমিও এইরকম ছিলাম। জার্মানি গিয়া পরপর দুইবার গোল্লা খায়া সিধা হো গায়া।আমাদের দোষ উভয়পাক্ষিক, আমরাও গোল্লা দি' না, তোমরাও এসাইনমেন্ট দাও না।'
কথা সত্য।
গত বছর আমরা ছোটদের পত্রিক 'কাঠ্ পেন্ সিল' এর চার সদস্য শেকের টেক আট নম্বর রোডের এক টং দোকানে বিরস মুখে চা খেতে খেতে এই কথাগুলি মনে মনে ভাবছিলাম। আরো এক ফেব্রুয়ারি চলে এলো, আমরা চা খেয়েই যাচ্ছি, পুরি খেয়েই যাচ্ছি। কাঠ্ পেন্ সিল আর বের হচ্ছে না। অথচ বাইরের 'ওরা'কত কি করে ফেলছে। আমরা পারি না কেন? আমি অবশ্য একটা লাইনে এর জবাব পেয়েছি, সেটা ভাবে মনে সান্ত্বনা পাই
সেটা কবি জীবনান্দের লেখা, কী এক বিপন্ন বিস্ময় নাকি আমাদের রক্তের ভিতর ভিতর খেলা করতেছে, সেইটাই আমাদের এরকম আইলসা বানায়া ফেলতেছে। সো, ওই ... বিপন্ন বিস্ময়ের জন্যই যে কাঠ্ পেন্ সিল এর কোষ্ঠকাঠিন্য- (অর্থাৎ বাইরায় না)। তো এইসব কন্সটিপেশনের মাঝেও বছরে অন্ততঃ একটা যাতে বের হয় সে জন্য আমরা জানুয়ারি মাসে হঠাৎ ক্ষেপে উঠি। সেই ক্ষেপার অংশ হিসেবে আমি কাঠ্ পেন্ সিল এর জন্য একটা ক্রাউড সিন আঁকবার প্ল্যান করি। আর যেহেতু সংখ্যাটা ছিলো 'নদী' বিষয়ক তাই ক্রাউড হিসেবে সদরঘাট এর কথাই প্রথমে মাথায় আসে। আমরা আসলে আরো একটা প্ল্যান করেছিলাম এই সদরঘাট নিয়ে। সেটা ছিলো সেই বৃটিশ আমলের শিল্পী চার্লস ড'য়েলির আঁকা ১৫০ বছর আগের সদরঘাট সেই একই কম্পোজিশনে নতুন করে আঁকা। কিন্তু বুড়ীগঙ্গায় নৌকা নিয়ে দেখা গেল ড'য়েলি যেখান থেকে ড্রয়িংটা করেছিলেন সেখানে থেকে এখন খালি কিছু লঞ্চের পশ্চাদ্ভাগই দেখা যায়। নদী তীর দেখার কোন উপায় নেই। সেই আইডিয়াটা আমরা আপাততঃ ভুলে আছি, অপেক্ষা করছি কোন এক লঞ্চ ধর্মঘটের (সাম্প্রতিকটা মিস করেছি, সেটার কাহিনী আরেকদিন বলা যাবে।)।
যাই হোক এই সদরঘাট স্টাডিটা আরো অনেক কাজের মতই আমি পুরো একা করি। ওই সময় আমার সারভাইকাল রিবের যন্ত্রণা তুঙ্গে। প্রতিদিন কষ্টকর ফিজিওথেরাপির ট্রাকশান চলছে। বিকেলে বিকেলে গিয়ে কাজটা করতে হয়েছে সেই মাজুল হাতে। কথা আর না বাড়িয়ে সচিত্র প্রতিবেদন শুরু করি
কিছু ক্যারেক্টার স্টাডি
কম্পোজিশন স্টাডি
ফাইনাল ড্রয়িং।
গোটা কাজের ব্যপারে একটা কথা না বললেই না, সেটা হল বাংলাদেশের মানুষ। সদরঘাটের কুলি, ভিখারী, রুটি বিক্রেতা, সিকিউরিটি গার্ড, এমনকি লঞ্চের সারেং ও এত গ্যাঞ্জামের মধ্যে ঠিকই আমাকে আঁকতে দেখেছে। আর সবাই যথাসম্ভব সাহায্য করেছে যে কোথায় বসলে ভালো দেখা যাবে, কোন কোন ব্যপারটা আরো ভালো করে বোঝার আছে। বা আর কি কি জিনিষ আমি মিস করে যাচ্ছি- ইত্যাদী। সদরঘাটের ড্রয়িংটা করতে করতে আবার মনে হল খুব একটা খারাপ নাতো আমাদের দেশের আইলসা মানুষগুলা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
হ্যাংওভার কাটিয়ে
একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...
-
আইডিয়া পাওয়া বা ক্রিয়েটিভ কাজ ইত্যাদিকে এখনো আমাদের সমাজে একটা অলৌকিক প্রতিভা হিসেবে ভাবা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সত্যও বটে। ত...
-
দীর্ঘ দশ মাস পর ২০১৮ সালের বিজ্ঞান বিভাগের নবম-দশম শ্রেণির ৫ টা (গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান) ও আর্টস ও কমার্স বি...
-
এইবার আমরা হুইলের আসল কাজটা দেখি। মানে রঙ করার সময় এটা আসলে কি কাজে লাগে। একটা ছবি রঙ করার সময় আসলে মূল যে ব্যপারটা মাথায় আগে আনতে হবে সেটা ...
ওহ এটা করতে আপনি সত্যি সদরঘাটে গিয়েছিলেন?আমিতো যতবার ছবিটা দেখি ততবার টাস্কি খাই।এতো clumsy ছবি কি করে আকতে পারলেন!Good Job.
ReplyDeleteমেহেদী ভাই, আপনার অন্যতম দুর্দান্ত এই কার্টুন দেখে আমার মাসখানেকের জন্য বোধদয় হয়েছিল। তারপর আবারো সেই বাঙ্গালী মুসলমান আর কি!
ReplyDeleteএইতা তুই সদরঘাট গিয়া আকসস? সাবাশ! হাবীব ভাইরে দিলে দুই টান মাইরা উন্মাদ অফিসেই তো আইকা দিতো।রঙ কর !
ReplyDelete@A.R আকতে= আঁকতে (প্রতিশোধ মধুর)
ReplyDelete@Tanvir I Kamal হাহাহাহা!! মন্তব্যে পাঁচ তারা দিলাম!
ReplyDelete@Tarik হুমমমম, তাইলে এইরকম পোস্ট ঘনঘন দিতে হয় দেখছি...
ReplyDeletejotil hoise.......marattok jotil......
ReplyDeleteবৃষ্টি্র স্বাদ মধুতে মেটান।আবহাওয়া পূর্বাভাসের যে অবস্থা!
ReplyDeleteসত্যজিতের আঁকার মতন লাগলো আপনার ফাইনাল ড্রয়িংটা, অতি অসাধারণ :)
ReplyDeleteমেহেদী, আপনি সচলায়তনে লেখা শুরু করেন।
ReplyDeleteকাঠপেন্সিল ছোটোদের পত্রিকা নাকি? এটা নিয়ে কৌতূহল হচ্ছে। কাঠপেন্সিল কারা কেন কখন কীভাবে কোথায়?
এইটা একটা দুর্দান্ত কার্টুন। আমি প্রথমে দেখে ভেবেছিলাম ছবি দেখে আঁকা হয়েছে। চলন্ত মানুষগুলোকে ছবিতে আটকান কিভাবে?
ReplyDeleteআমি অনেকবার সদরঘাটে গিয়েছি, ঠিক এরকমটাই থাকে লঞ্চের সামনে !! অবাক হয়ে গিয়েছি। :) দুর্দান্ত :)
ReplyDeleteঅসাধারণ ছবি আর দুর্দান্ত লেখা। সবমিলে, চমতকার ভাই।
ReplyDelete