উন্মাদ এ ধারাবাহিক ভাবে
ক্যারিকেচার নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছি। তার প্রথম কিস্তি এখানে তুলে দি'
Caricature is rough truth.
George Meredith
প্যালিওলিথিক
যুগের গুহাচিত্র।
মানুষ ও পশুদের ক্যারিকেচার্ড ফর্ম লক্ষণীয়
|
আসলে আমরা যদি ক্যারিকেচারের ওপরের সংজ্ঞাটা মেনে নেই
তাহলে বলতে হবে ক্যারিকেচারের ইতিহাস প্রায় মানুষের ইতিহাসের সমান বয়সী! কারণ
গুহাচিত্রে আমরা যা দেখি তা আর যাই হোক কোনভাবেই রিয়েলিস্টিক ফটোফিনিশড ছবি না।
মানুষ তাদের শিকার করার ঘটনাগুলিকে অতিরঞ্জিত করে আঁকত। মানুষ আর পশুগুলির ফিগারের
ফর্ম আসল ফিগারের অতিরঞ্জন। অর্থাৎ ক্যারিকেচার। মানে কি না এই ছবিগুলিতে মানুষের
অবয়ব হুবহু না এঁকে তার ‘ভাব’ (Essence) টা ধরার চেষ্টা করেছে। মজার ব্যপার হল বর্তমানের
আধুনিক চিত্রকলাও কিন্তু সেই একই দিকে যাচ্ছে। আধুনিক চিত্রকলায় ফর্মের সরলীকরণ (Simplification) আর ভাবের
অতিরঞ্জন (Exaggeration) এই দুইদিকে জোর দিয়েই নিত্যনতুন গবেষণা চলছে। সেইদিক
থেকে দেখতে গেলে আমরা কার্টুন-ক্যারিচারকে আদিম আর আধুনিকের একটা দারুণ ককটেল বলে
চালিয়ে দিতে পারি। কারণ কার্টুন-ক্যারিচার এই দুইটা ব্যপারের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে।
এখানে সবচেয়ে জটিল ফর্মটাকে সবচেয়ে সহজে এঁকে ভেতরের ভাবটায় রঙ চড়িয়ে প্রকাশ
করাটাই আসল মুন্সীয়ানা। (এবারে ইতিহাসফাঁস অংশে প্রবেশ করা যাক)
বারোক যুগ ও আনিবেল কারাচচি
চিত্রকলার ইতিহাসে ষোড়শ শতকের দিকে মধ্য ইউরোপে একটি নতুন ধারা দেখা যায়। ধারাটির নাম ‘বারোক’ (Baroque). বারোক পেইন্টারদের মূল বৈশিষ্ট্য ছিলো তারা রোমান্টিক ঘরানা থেকে সরে এসে প্রকৃতির রূঢ় বাস্তবের কথা বলতে শুরু করেন। যেমন কোন একটা অসাধারণ নৈসর্গিক পেইন্টিং এর কোণা দিয়ে একটা মড়ার খুলি এঁকে দিলেন, মানে হল এই জীবন সুন্দর তা মানি, কিন্তু ভুলে যেও না একদিন মরতেও হবে। কিঞ্চিত ধর্মীয় ভাব ঘেঁশা বারোক যুগের পেইন্টাররা তাঁদের পেইন্টিংগুলি যাতে মানুষ দেখেই তার মেসেজটা চট করে বুঝে ফেলে সেভাবে আঁকতেন, আর তাঁরা পেইন্টিং এর মূল ভাবটাকে ‘অতিরঞ্জিত’ (exaggerated) করে আঁকতেন। এই বারোক যুগ নিয়ে এত কিছু বলার কারণ হল আমাদের ক্যারিকেচার বস্তুটার প্রাতিষ্ঠানিক জন্ম হয় একজন বারোক পেইন্টারের হাতে, তাঁর নাম আনিবেল কারাচচি (Annibale Caracci)। এই ইতালিয়ান পেইন্টার সর্বপ্রথম ক্যারিকেচার করা শুরু
আনিবেল কারাচচির আঁকা ক্যারিকেচার।
|
আরেক বারোক যুগের
শিল্পী এড্রিয়ান আট্রেখট এর আঁকা পুষ্প ও করোটি
Still Life with Bouquet and Skull– (Adriaen van
Utrecht)
|
বার্নিনির আঁকা নিজের ক্যারিকেচার
|
আগস্তিনো কারাচচির ক্যারিকেচার
|
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির করা ক্যারিকেচার স্টাডি
|
দ্যা বেঞ্চ, উইলিয়াম হোগার্থ।
|
প্লাম্বপুডিং, জেমস গিলারি
|
জর্জ ক্র্যুকশ্যাংক এর আঁকা রাজা
চতুর্থ জর্জ
|
আম্ব্রেলা, জর্জ ক্র্যুকশ্যাংক |
শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একেবারে নির্দয়ভাবে ব্যবহার করতেন। আঠারো শতকে এসে বৃটেনে মারি ড্যারিল আর জেমস গিলারি’র হাত ধরে ক্যারিকেচার আরো প্রসারিত হয়। আর সে সময় ফরাসী শিল্পী অনহ্র্যে ডোমিয়ে’ (Honoré Daumier) এসে ক্যারিকেচারের সংজ্ঞাই যেন পালটে দেন। ফর্মের এমন ভাংচুর তিনি করে দেখালেন যা এর আগে ক্যারিকেচারিস্টরা ভাবতেও সাহস করেননি। ক্যারিকেচারের ইতিহাস লিখতে গেলে ফ্রান্স এর এই দোমিয়েরদের
অনহ্র্যে ডোমিয়ে’র আঁকা ক্যরিকেচার
|
শার্ল ফিলিপঁ এর আঁকা নাশপাতি রাজা।
|
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ক্যারিকেচার
ঊনিশ শতকে এসে খবরের কাগজে ক্যারিকেচার প্রকাশের হিড়িক পড়লো। আর এবারে সেটা
শুধু রাজনৈতিক স্যাটায়ার নিয়েই বসে থাকলো না তার সাথে প্রকাশ পেতে থাকলো বিভিন্ন
সেলিব্রেটিদের মজাদার সব ক্যারিকেচার-ও। যদিও তার মধ্যে রাজনৈতিক সেলিব্রটিরাই
প্রাধান্য পেতেন। আর বলাই বাহুল্য যে সেইসব সেলিব্রেটিরা সেসব দেখে সবাই মজা পেতেন
না। তাই ঝামেলা এড়াতে ক্যারিকেচারিস্টরা বেশিরভাগ সময়েই ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর ক্যারিকেচার যেন পৃন্ট মিডিয়ার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠলো।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তখন এমনকি
ফটোগ্রাফের চাইতেও ক্যারিকেচারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেল। বিশেষ করে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে রীতিমত ক্যারিকেচার বিপ্লব ঘটে গেল। সে সময়টাকে ক্যারিকেচারের
রেনেসাঁ যুগ বললেও ভুল বলা হবে না। সে সময়ে আল হির্শফিল্ড, মিগুয়েল কোভারুবিয়াস এর
মত ক্যারিকেচার শিল্পীরা দেখালেন ক্যারিকেচার মানেই শুধু কারো চেহারা
ভয়ানক করে
আঁকা না, ক্যারিকেচার এমন রঙ্গীন ও কুশলীভাবে করা যায় যাতে যার ক্যারিকেচার করা হল
তিনি নিজেও ব্যাপারটা উপভোগ করতে পারেন। অর্থাৎ ক্যারিকেচার তখন তার নির্দিষ্ট গন্ডির
বাইরেও ছড়িয়ে গেল। বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যগাজিন, দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন
ইত্যাদিতে একজন ক্যারিকেচারিস্ট তখন লাগবেই। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে সে সময় ফাইন
আর্টস থেকে পাশ করেননি এমন ক্যারিকেচারিস্ট ছিলো না বললেই চলে। মানে রীতিমতন আর্ট
কলেজ থেকে পাশ করা আঁকিবুকির ব্যকরণ জানেওয়ালারাই তখন এই কাজটা করতেন। কারণ
একজন
ক্যারিকেচারিস্ট কে অবশ্যই প্রথমে একজন ভালো পোর্ট্রেইট আর্টিস্ট হতে হবে, আগে
জানা তারপর সেটা ভাঙ্গা। সে যাই হোক হির্শফিল্ড, কোভারুবিয়াস ছাড়াও সেই সময়ের এমন
দিকপাল ক’জন আঁকিয়ের মধ্যে আরো ছিলেন জন্মসূত্র
জার্মান-আমেরিকান কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট (Thomas Nast) স্যার ম্যাক্স বিরবঅম (Sir Max Birbohm) ইত্যাদি। ক্যারিকেচারের আধুনিক যুগ শুরুর আগে পর্যন্ত
এই হল এর ছোটখাট ইতিহাস।
আল হির্শফিল্ডের আঁকা হিচককের ক্যরিকেচার
|
মিগুয়েল কোভারুবিয়াস আঁকা ক্যরিকেচার
|
নিজের ক্যরিকেচার, থমাস নাস্ট
|
স্যার ম্যাক্স বিরবঅম
|
josh vai
ReplyDeleteদারুন লাগলো ভাইয়া... আরো চাই... মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিগুয়েল কোভারুবিয়াস আঁকা ক্যরিকেচারটার সাথে আপনার চেহারার একটুআধটু মিল আছে :D
ReplyDelete:) আসলেই @ Romel Barua
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteক্যারিক্যাচার করব কিভাবে? আমার খুব ইচ্ছা ক্যারিক্যাচার করার।কিন্তু পারি না।
ReplyDeleteবড়জোড় পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্যারিকেচার আঁকা শেষ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
Delete