July 31, 2014
চেহারার রঙ
কালার করা নিয়ে আমার নিজের বিরাট ঘাপলা আছে। তবে মোটা দাগে কিছু ব্যাপার ধরতে পেরেছি। সেগুলি ছোট নোটস আকারে লেখা যাক। মানুষের মুখের রঙ করতে গেলে মূলতঃ তিনটা বেসিক শেড দরকার। মাথার ওপরের দিক বা কপাল অর্থাৎ যেটা আসলে খুলির সাথে লেগে আছে সেই অংশটা আসলে অনেকটা হলুদ রঙের হয়। তাই বলে একেবারে ক্যাটক্যাটা হলুদ না দিয়ে কিছুটা হলদে করে নেয়া ভাল। এর পরের অংশ মানে গাল অনেকটাই লালচে হয়। আসলে যে অংশে মাংস বেশী সে অংশই লালচে হয় আর হাড়ের কাছাকাছি জায়গা গুলি হলদে। এবারে শেষের যে অংশটা চিবুক সেখানে অনেকটা নীলচে রঙ হয়, এই পার্ট টা একটু টৃকি। কারন নীলচে বল্লেও এটা পুরোপুরি নীল না। এটা আসলে গালের লাল রংটারই ডিস্যাচুরেটেড মানে একটু গ্রে মিলিয়ে নিলে যা হবে (ওপেক কালার যেমন পোস্টার বা তেল গোয়াশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে জল রঙ এ কোবাল্ট ব্লু টাও মিলিয়ে দেখা যেতে পারে।) এবারে আস্তে আস্তে একটার সাথে আরেকটা ব্লেন্ড করে গেলেই একটা মজার প্যলেট হবে। সবচেয়ে ভাল হয় এটুকু বুঝে ওল্ড মাস্টারদের কিছু পোর্ট্রেইট পেইন্টিং দেখা।
আশা করি এই পোস্ট কালার চেহারা করতে কিছুটা কাজে দেবে।
July 29, 2014
July 24, 2014
July 22, 2014
July 17, 2014
নাটকের জন্যে করা পুরানো কমিশন
এক বছর আগে করা একটা কমিশন, শেয়ার দেবার আগেই হার্ড ডিস্ক ক্র্যাশ করেছিলো, হঠাৎ মনে হোল জিমেইল এ তো থাকার কথা। জিমেইল থাকায় বেশ কছু কাজ সেন্ট মেইল থেকে পেলাম। এই কাজটার জন্যে আমার ক্লায়েন্ট ছিলেন টিভি নাটকের অভিনেতা অপূর্ব। আমার এ পর্যন্ত ডিল করা সবচেয়ে ভদ্র ক্লায়েন্ট :)
তবে এটা আদৌ নাটোকে গিয়েছিলো কি না আমি জানি না।
July 16, 2014
মীনা, রামমোহন (আর আমি)
একটা দারুণ ব্যাপার কারো সাথে শেয়ার করা হয় নি। সেটা হল মীনার একটা পর্বের সাথে আমার কাকতালে যুক্ত হয়ে যাওয়া। ২০১০ এর অগাস্টে হঠাৎ মোকারম ভাইয়ের (উদ্ভিদ বিষয়ে লিখে যিনি গাছ ফুল লতা পাতার যে খাওয়া ছাড়া আরো ব্যবহার আছে সেটার নিরলস প্রচার করে যাচ্ছেন) ফোন। ইউনিসেফ এর মীনা কার্টুন সিরিজের একটা কর্মশালা হবে। সেটায় আমি থাকতে চাই কি না- থাকতে চাই না মানে?? মীনা বলে কথা। আর সেই প্রজেক্টে আসবে ভারতের বিখ্যাত এনিমেটর গুরু রামমোহন আর লেখিকা দীপা ভালসাভার। এই সুযোগ মিস করার প্রশ্নই আসে না। এক বাক্যে রাজী- তবে পরের পার্ট টা শুনে একটু দমে গেলাম সেটা হল আমি গেলে যেতে হবে গল্প লেখক হিসেবে। মানে আঁকিয়েদের কোটা নাকি ভরে গেছে, সিট খালি নাই। যাই হোক কোন এক ফন্দি ফিকির করে সেটা ম্যানেজ করা যাবে ভেবে এক বাক্যে রাজী হয়ে গেলাম। নির্ধারিত দিনে এক দঙ্গল গম্ভীর মুখের শহরে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ বিজ্ঞাপন ফার্ম এর কপি রাইটারদের সাথে আমাকে হাসিমুখে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখা গেলো- সামনে নেমপ্লেট, মেহেদী হক, রাইটার। (দেশ এইভাবেই চলছে) প্রথম দিনেই আমি মহা মুগ্ধ। তখনো রামমোহন আসেন নি।, এমনকি না আসারও ক্ষীণ সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। এসেছেন দীপা ভালসাভার নামের একজন চমৎকার মহিলা। আমি প্রথম দিনেই তাঁর ভক্ত হয় গেলাম। ভারতের একজন বিখ্যাত চিলড্রেন বুক রাইটার তিনি, বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্টাল টেক্সট বুকও লিখেছেন। আর সেই সাথে ইউনিসেফ এর একজন নীতিনির্ধারনী কনসাল্টেন্ট ও তিনি। তারপরেও কি চমৎকার সাবলীল আর সাধারণ মানুষ। সত্যিকারের কয়েক প্রজন্ম শিক্ষিত হলেই বোধহয় এমন বিনয়ী হওয়া সম্ভব। প্রথম দিনেই আমি বুঝে গেলাম লেখক হিসেবে ঢুকে কি ভালো কাজটাই না করেছি। কারণ আঁকাআঁকির চাইতে গল্প কিভাবে বলতে হয় আর সেটা যে মেথডিক্যালি শেখারো ব্যাপার সেটা এইখানে না এলে বুঝতাম না। এই মূহুর্তে কমিক্স এর গল্প লিখতে সেই কয়েকদিনের রসদই মূল কাজটা চালাচ্ছে। যাই হোক, মীনা এবার তিনটা মেসেজ দিবে তার দর্শকদের। একটা হল খাবার আগে হাত ধোয়া, আরেকটা হল নবজাতকের জন্মকালীন যত্ন, আর হল সুষম খাবার যাতে বাচ্চারা খায়- ইত্যাদি। প্রতিটা বিষয়েই কনসেপ্ট ডেভেলপের জন্যে এবার আমাদের চারজন চারজন করে কয়েকটা গ্রুপ এ ভাগ করা হল। আমার গ্রুপ পড়লেন টুশি আপু (দেশ টিভিতে তখন দূরপাঠ এর উপস্থাপনা করতেন, আসর জমানো মজার মানুষ), নাফিস ভাই (অগিলভি তে কাজ করেন-আমার দেখা দারুণ ভদ্রলোকের একজন) আমি আর মেহের নিগার আপা (উনি এক স্কুলের গম্ভীর ম্যাডাম কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখেছি ওনার মত কজন সিনিয়র যিনি একাধারে মা ও শিক্ষিকা- তিনি আসলে এ ধরনের প্রজেক্ট এ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি।) লটারিতে আমাদের গ্রুপের ভাগে পড়লো হাত ধোয়া। এবং আল্লা মাফ করুন তার পর টানা দুইদিন কেন হাত ধুতে হবে এবং সেটা কিভাবে তার উপর একের পর এক বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন শুরু করলেন। এবং সেই পাওয়ার পয়েন্টের গ্রাফিক্স এ তাঁদের সমস্ত প্রতিভা ঢেলে দেয়া কোনটার প্রতিটা শব্দ এনিমেট করে ঘুরতে ঘুরতে আসে, কোনটা ব্লার ইন করে ঢোকে। হাত ধোয়া নিয়ে শুনতে শুনতে পারলে দুই হাত কেটে ফেলি এই টাইপ অবস্থা। আমার চেনাজানা একজনই ছিলো- উন্মাদের অনুজ কলিগ স্পন্দন সে বুদ্ধিমানের মত প্রথম দিন মুখচোখ সিরিয়াস করে বসে থেকে পরেরদিনই ভাগলো। দ্বিতীয় দিনে আমি ওয়ান টাইম চামচ হাত ধোয়ার বিকল্প হতে পারে কি না সেটা ইউনিসেফের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলাম। উত্তর পেলাম না। যাই হোক। দ্বিতীয় দিনেও সকাল থেকে যখন আবার নবজাতকের পরিচর্যায় কী কী করতে হয় তার প্রেজেন্টেশন শুরু হোল তখন আমি আর নাফিস ভাই চা খাওয়ার কথা বলে ভাগলাম। দু'জনেই মেজাজ খারাপ করে নীচে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। উনি অনেক ভদ্রলোক তাই বললেন এরকম একটু হবেই। আমি সাফ বলে দিলাম ভাই আপনারা করেন, আমি এত ক্রিয়েটিভ না, আমি গেলাম। কিন্তু উনি জানালেন সামনে নাকি রামমোহন আসবেন। বাস এক কথায় চুপ। আর সেটাতে উনিও ঢুকবার তালে আছেন। বিনা বাক্যব্যয়ে ওপরে এসে 'হাত ধুয়ে' লাঞ্চ এ বসলাম। এরপর আসলেই স্টোরি লেখার কাজ। মানে যার যা ইচ্ছা তাই বা যাচ্ছেতাই লেখা। আমাদের গ্রুপ এ আমরা বসেই প্রত্যেকে যার যার মত করে আইডিয়া ভাবতে লাগলাম। এবং শেষে এসে আমার একটা ছোট আইডিয়া সবারই ভালো লাগায় সেটাই আরেকটু ডেভেলপ করে দেয়া হল। এর পর রিভিউ সেশন, সেখানে দীপা আমাদের গল্পটা দারুণ পছন্দ করলেন। এবং তারপর দেখলাম আসল মজা। সত্যিকারের একজন লেখক কিভাবে লেখেন ও গল্প বলেন তা টের পেলাম। আমাদের একেবারে সাদামাটা গল্পটা উনি এক ঘষায় একেবারে চমৎকার করে দিলেন। মানে যেখানে একটু ঝুলে গিয়েছিলো সেখানে অদ্ভূত ফান যোগ করলেন। যেখানে ঘটানাটা 'বিশ্বাসযোগ্য' হচ্ছিলো না সেখানে বিশ্বাসযোগ্য কিভাবে করা যায় সেটা বললেন। আর সব শেষে মূল মেসেজটা ঠিকভাবে যাচ্ছে কিনা তা ঠিকঠাক করে দিলেন। প্রথমবারের মত একটা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কিভাবে গল্প বানানো যায় তা দেখলাম। এবং দীপা জানালেন আমাদের গল্পটা ভালো। কারণ এটায় কিছু নতুন এলিমেন্ট আছে যা মীনা তে ছিলো না। মীনার আগের সব গল্প কিছুটা গোপাল বড় ভালো ছেলে টাইপ। এবং খুবই স্লো ফ্রেম রেট এ গল্প এগিয়েছে। এখানে ব্যাপারটা আলাদা। আমাদের সবার থেকে তাই যে ক'টা গল্প নেয়া হোল তার মধ্যে এটাও একটা। এবং ওয়ার্কশপ এর প্রথম পার্ট এভাবেই শেষ হল! মানে রামমোহন পর্ব এবার না :( ।
এরপর সেই অগাস্টেই-ততদিনে রোজা শুরু হয়ে গেছে বলে মনে পড়ছে। আবার ডাক এলো। এবং হ্যাঁ এবারে সত্যি সত্যি রামমোহন এসেছেন। কিন্তু আমি আবার সেই লেখক টিম এ। এবারে আর সম্ভব না। দীপা এবং পুলকদা' (পুলক রাহা আর মীরা মিত্রা ছিলেন এই পুরো আয়োজনের কো- অর্ডিনেটর হিসেবে) কে ধরে বলে কয়ে এক শর্তে সেই অনুমতি মিললো সেটা হল আরেকজন কোন লেখককে দিয়ে যেতে হবে রিপ্লেস হিসেবে। সাথা সাথে জানালাম খুব ভালো একজন লেখক আছেন। তাঁর নাম মিতু (বলাই বাহুল্য সে আমাদের কার্টুনিস্ট মিতু)। যথাসময়ে মিতুকে লেখদের গ্রুপে বসিয়ে চলে গেলাম রামমোহনের সাথে। এবং সেই গল্পে আসলেই সে বেশ কিছু দারুণ সংযোজন করেছে যেগুলি দীপা এড করে দিয়েছিলেন। রামমোহন পর্ব নিয়ে এই ব্লগেই আরো একটা লেখা লিখেছি তাই সেটা আর বড় না করি সেটা পড়তে পাবেন এখানে ।
যাই হোক অভিনব যে ব্যাপারটা ঘটলো সেটা হল আমি আর নাফিস ভাই আমাদের ওই গল্পটাই আবার গিয়ে ড্রয়িং সেশন এ গিয়ে পেলাম মানে নিজেদের গল্পের ক্যারেক্টার ডিজাইন আর এনভায়রন্মেন্ট ডিজাইন নিজেরাই করার একটা সুযোগ ঘটলো এবং সেটা আবার কিংবদন্তী রামমোহনের তত্ত্বাবধানে! এবং শেষে দেখা গেলো আসলে গল্প ক্যারেক্টার শেষে আমরা এমনকী জোশের ঠেলায় স্টোরিবোর্ডিং ও করে দিলাম। মানে পুরো কমপ্লিট স্কৃপ্ট। আমার জন্যে অসাধারণ অভিজ্ঞতা। কারণ এই সাইড টা নিয়ে আমার তেমন কোন আইডিয়াই ছিলো না। আমি এঁকেছি পলিটিক্যাল কার্টুন আর এঁকেছি উন্মাদের ফিচার। পুরোদস্তুর এনিমেশন শর্টফিল্ম এর সাথে কাজ করবো সেটা ভাবি নি। সেই সেশনে বাংলাদেশের বেস্ট এনিমেটরদের সাথে পরিচয় হোল। অপু ভাই, সুদি ভাই, ক্লিক হাউজের তমাল ভাই, আশীষদা', তৌফিক ভাই, সাব্বির ভাই আরো কতজন সবার নাম এই চার বছর পর মনেও নেই।
যাই হোক সেই সেশন শেষে সবাই বাড়ি ফিরলাম এবং বলা হল যার যার গল্প নিয়ে এনিমেশন হবে তাদেরকে জানানো হবে। আমাদের গল্পটা নিশ্চিতভাবে এনিমেটেড হচ্ছে। আর সেটা করবে ক্লিক হাউজ এনিমেশন। এবং যেহেতু গল্পটার প্লট এবং ক্যারেক্টার ডিজাইনের সাথে আমি জড়িত ছিলাম সেহেতু রামমোহন স্যার এবং ইউনিসেফ থেকে মীরাদি' বলে দিলেন যাতে এই প্রজেক্ট এ ক্লিক হাউজ থেকে আমাকে শর্ট টার্ম কন্সালটেন্ট হিসেবে নেয়া হয় (যদিও পরে তারা নিজেদের প্রতিভা দিয়েই কাজটা শেষ করেছে)। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই আমি খোঁজ নিতাম যে কার্টুনের কতদূর। খালি জানতাম যে হচ্ছে, কাজ চলছে ইত্যাদি। কিন্তু আসলে কবে হবে বা আদৌ হবে কি না তা বুঝতে পারছিলাম না। এমন করে করে বছরের উপরে চলে যাবার পরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে পুরো ব্যাপারটাই ভুলে গেলাম। অনেকদিন পরে শুনি মীনার নতুন সিরিজ চলছে। খোঁজ নিলাম- না আমাদেরটা না। আবার শুনি আরেকটা চলছে এবারেও সেই কাহিনীটা না। এভাবে চার বছর চলে গেলো। আমি সেই প্রজেক্টের কথা আসলেই ভুলে বসে আছি। সেদিন ঢাকা কমিক্স এর কাজে ব্র্যাক এর মেহেদী সাজ্জাদ ভাইয়ের কাছে গিয়েছি এমন সময় উনি হঠাৎ বললেন- আপনি কি মীনা সিরিজের কোন গল্প লিখেছেন? আমি অবাক। উনি জানালেন ওনার বাচ্চার দেখার জন্যে মীনার নতুন কছু সিরিজ উনি ইউটিউব থেকে নামিয়েছেন সেখানে একটার ক্রেডিট লাইনে আমার নাম দেখেছেন। কি বিস্ময়! তারমানে সেটা বের হয়েছে? আমি জানিও না। সেই মূহুর্তে মেহেদী সাজ্জাদ ভাইয়ের ট্যাব এ ভিডিও ক্লিপটা চালু হল- আমার আঁকা প্রথম সিন! একদল ভাইরাস আতংকে ছুটছে পেছনে পানির তোড়...রীতিমত আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম। আর কান্নাকাটি না বাড়িয়ে ভিডিওটা তুলে দেই। স্ট্যান্ডার্ড না হলেও আমার এক্সপেকটেশনের তুলনায় ক্লিক হাউজ ভালো কাজ করেছে সেজন্যে তাদের ধন্যবাদ। একটা কাজ এর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থকে সেটার এন্ড প্রডাক্ট দেখতে পারার অনুভূতি আসলেই অতূলনীয়। ধন্যবাদ ইউনিসেফ, ধন্যবাদ রামমোহন এবং ধন্যবাদ মীরাদি' পুলকদা' ও মিল্কি ভাই কে (যার নাম এতক্ষণ বলি-ই নাই, একমাত্র মিল্কি ভাইয়ের সাথেই বরং এই চার বছরে আমার টানা যোগাযোগ আছে।)
পুনশচঃ ওয়ার্কশপের শেষ দিনে লিফট এ উঠতে যাব এমন সময় গম্ভীর মুখের হ্যাংলাপানা একজন লিফট এ উঠলেন এবং লিফট এ যে আমিও আছি সেটা তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো না। পরে দেখি উনি রামমোহনের সাথে গুজগাজ করছেন। অপু ভাই জানালেন ইনি সব্যসাচী মিস্ত্রী- আমি বিমোহিত। ওই মূহুর্তেই তাঁর একটা ক্যারিকেচার করে দিলাম উনি গম্ভীর মুখে কথা না বলে সেটা ব্যাগে ঢুকিয় আবার রামমোহনের সাথে কথা শুরু করলেন। একটু দমে গেলাম। তার এক বছর পরেই তাঁর সাথে আমার খুবই গুরুশিষ্যসুলভ সম্পর্ক শুরু হোল। এক ফাঁকে আমি জানতে চাইলাম ওইদিন অমন করলেন ক্যান? উনি জবাব দিলেন 'আমি জানতাম তুই চারুকলার' । কথাটার ব্যাখ্যা বুঝি নাই কিন্তু চারুকলায় না পড়ার জন্যে একটু লাকি মনে হল নিজেকে :) ।
July 15, 2014
July 14, 2014
July 13, 2014
কার্টুনিস্ট শাহরিয়ারঃ বেসিক্যালি যিনি বেসিক আলী ছাড়াও আঁকেন
নিউ এইজ অফিস থেকে বের হয় সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে তেজগাঁ সাত রাস্তায় পৌঁছলাম। গন্তব্য উত্তরার গ্যালারি কায়া। সেখানে বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশনের অন্যতম উপদেষ্টা কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার ভাইয়ের রাজনৈতিক কার্টুনপ্রদর্শনী চলছে। শুরুর দিনেই তাঁর ফোন পেয়েছিলাম কিন্তু সেদিন পারিবারিক কাজে ঢাকার বাইরে রওনা দেবার কারণে আর সেখানে যাওয়া হয় নি। অবশেষে সুযোগ হল প্রদর্শনীতে যাবার।
আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ভক্ত। তার প্রধান কারণ তাঁর কিছু বক্তব্য। আমরা বাংলাদেশের কার্টুনিস্টদের নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি করতে ২০১৩ সালের নভেম্বার এ তাঁর ডেইলি স্টার এর অফিসে গিয়েছিলাম। উনি প্রথমেই কোনরকম সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানান। এবং কেন উনি বাংলাদেশের সমগ্র তরুণ কার্টুনিস্টকুলের অপর বিরক্ত তার কিছু পয়েন্ট বলেন। আমি তাঁকে বলি যাতে এইগুলি-ই উনি সাক্ষাৎকারের বদলে বক্তব্য হিসেবে ক্যামেরার সামনে বলেন। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল-
বাংলাদেশের তরুণ কার্টুনিস্ট রা অনেক কম আঁকে। উনি নিজে ডেইলি স্টারের সিটি এডিটর- এমন কি পেশাদার কার্টুনিস্ট ও বলা যাবে না তাঁকে, কিন্তু তাঁর যে পরিমাণ কাজ মূল ধারায় হচ্ছে, আমরা যারা তথাকথিত মূলধারা তারা তো এর ১০ আগের এক ভাগ ও আঁকি না। এবং এভাবে সপ্তাহে দুই তিনটা কার্টুন করে কোন 'মার্কেট ইম্প্যাক্ট' পড়বে না। টুকুর টাকুর করে দুইটা এঁকে বাহবা কুড়ানোর বদলে তাঁর ইচ্ছা মরার আগে এক শেলফ ভর্তি নিজের আঁকা কাজ রেখে যাওয়া।
এই কথাগুলি আসলে কতটা সত্য তা যতই দিন যাচ্ছে টের পাচ্ছি। জিনিয়াসদের কথা আলাদা। তারা হয়ত জীবনে দুইটা কাজ করেই অমর হয়ে যাবেন। বা ভালো কাজ ছাড়া করবেন না। কিন্তু আমি মনে করি আমরা যারা জিনিয়াস না তাদের মানুষের কাছে পৌঁছানোর বা মার্কেটে থাকার একমাত্র উপায় হল কাজের পরিমাণ। এখানে কার্টুনিস্ট আর্টিস্টদের একটা কমন ট্র্যাপ আছে। তারা টাকা পয়সা কামানোর জন্যেই এমন অনেক কাজ করতে বাধ্য হন যা আসলে তার নিজের পোর্টফোলিওতে যোগ হয় না। বিভিন্ন কম্পানীর কমার্শিয়াল আঁকা এড ফার্ম অথবা এনজিও'র প্রমোশনাল কাজ। দুঃখের বিষয় এগুলিতে টাকা পেলেও আসলে বছর দশেক পরে তারা টের পান যে নিজেদের কোন সৃষ্টি বা ব্র্যান্ডিং তাদের নেই। যেই ব্র্যান্ডিং তৈরী করতে চাইলে আসলে নিজের মনের মত করে একটা নিজের কিছু করা উচিত ছিল। যেমন টা করেছেন কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব (উন্মাদ) করেছেন কার্টুনিস্ট শিল্পী রফিকুন নবী (টোকাই), এবং করেছেন কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার (বেসিক আলী, বাবু) এখানেই এঁরা আলাদা। তাঁরা জীবনে আর কিছু না করলেও তাঁদের এই কারণেই ইতিহাসে লিখে রাখতে হবে। (তবে শুধু পলিটিক্যাল কার্টুন আঁকিয়েদের তাই বলে ফেলে দিতে হবে তা অবশ্যই না, পার্টিজান আচরণ আমলে না নিলে কার্টুনিস্ট হিসেবে অনেক ওপরে রেখে দিতে হবে কার্টুনিস্ট আসিফুল হুদা কে) এবং শুধু তা-ই না। তাঁদের সেই কাজের ভলিউম আমরা যারা ফুল টাইম কার্টুনিস্ট তারা দিনরাত এঁকেও ছুঁতে পারি না।
আমি মনে করি রাজনৈতিক কার্টুনের চেয়ে কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার এর অবদান অবশ্যই কমিক্স এ অনেক বেশী। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক কার্টুন যে কারণে অনন্য সেটা সেদিন গ্যালারি কায়া তে গিয়ে আরো নিঃসন্দেহ হলাম। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ আমাদের কার্টুন (অংকন) শিল্পে একটি 'শিশির ভট্টাচার্য' প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত থাকা। আশির দশকে রাজনৈতিক কার্টুনকে একটানে একেবারে অনেক ওপরে তুলে ফেলার কারিগর শিশির স্যার ইতিমধ্যে এ দেশের কিংবদন্তীতূল্য হয়ে গেছেন। কিন্তু একইভাবে উনি অনিচ্ছাকৃত যে সমস্যার তৈরী করেছেন সেটা হল এমন একটা ড্রয়িং মানদণ্ড বানিয়ে দিয়েছেন যাতে করে কার্টুনের আইডিয়া ছাপিয়ে ড্রয়িং এর দিকেই পাঠকের চোখ আটকে থাকে। তাঁর অসাধারণ কিছু কার্টুনেও পাঠকেরা তাই প্রথমে ড্রয়িং এর সুনাম করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে অপেক্ষাকৃত নতুন কার্টুনিস্ট রা অবচেতনেই তাঁকে হুবহু অনুকরণের চেষ্টা করতে থাকে। এমনকী পত্রিকার সম্পাদকদেরকেও বলতে শোনা যায়- শিশিরের মত করে আঁকেন। এ ক্ষেত্রে অনেক ভুলেই যায় যে কার্টুন মানে আসলে প্রথমে আইডিয়া পরে সাপোর্টিভ ড্রয়িং। এবং তাঁর প্রভাব এতই ব্যাপক ছিল যে সেই বলয় মোটামুটি দশ বছর সবাইকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এর থেকে একটা বড় রিলিফ আমরা পাই কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার এর রাজনৈতিক কার্টুনে। সিমপ্লিসিটি আর একই সাথে সরল স্যাটায়ার ফানটাই তখন মূখ্য হয়ে পড়ে। আরো একটা ব্যাপারের একটা ভিন্ন ব্যাখ্যা মনে এল। যদিও কার্টুনে ডায়ালগ বা টেক্সট এর অতি ব্যবহার কাম্য নয়। কিন্তু আমি মনে করি কার্টুন যে শুধু একটা ফিলার আইটেম না এটা বোঝাতে কিছুটা লেখালেখি এটাকে আলাদা ফিচার হিসেবে বরং শক্ত অবস্থান দেয়। শাহরিয়ার এর কার্টুন এ আমরা এই ধরনের সংলাপ ভিত্তিক কয়েক লেয়ার এর আইডিয়া দেখি। মূল চরিত্র হিসেবে হাসিন বা খালেদা একে অন্যের গুষ্টি উদ্বার এ থাকলেও আশে পাশে তাকালেই ফালু, জয় বা তারেক কেও খুঁজে পাওয়া যায়। এবং তারাও কার্টুনের একটিভ চরিত্র। হাসিনার চেয়ার এর আশে পাশে মাঝে মাঝেই ইউনুস এর সূঁই ফুঁড়ে রাখা ভুডু ডল খুঁজে পাওয়া যায়। তারেক কে দেখা যায় ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দন্তবিকাশমান হিসেবে। মানে একটা কার্টুন দর্শকেরা বেশ খানিকটা সময় নিয়ে দেখতে পারেন। তাঁর কার্টুনের কারিগরি দিক থেকে বলা যায় আমাদের নিউজপেপার প্রিন্ট এর কথা মাথায় রেখে পেশাদারি ডিজিটাল কালারিং তাঁর আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য। কোবাল্ট ব্লু ব্যকগ্রাউইন্ডে ওয়ার্ম ইয়েলো বা অরেঞ্জ এ কার্টুন ফ্রেন্ডলি রঙের ব্যবহার টা চোখে আরাম দেয়। রিডেবিলিটি কোথাও হারায় না। ভ্যালু নিয়েও ঘাপলা নেই। লাইট শেড এর বাড়াবাড়িও নেই। বোঝার জন্যে যেটুকু দরকার সেটুকুই আছে। সব মিলে তাঁর রাজনৈতিক কার্টুন বেশ মজাদার। আর কার্টুনের সেটাই প্রথম দাবী।
প্রদর্শনী থেকে ফিরে আসতে আসতে সেই কথাগুলি আবার মাথায় নেড়েচেড়ে দেখলাম- কাজের ইম্প্যাক্ট ফেলতে ভলিউম কতটা জরুরী। আমাদের সিনিয়ররা যা করে গেছেন এবং করে যাচ্ছেন আমরা এই পূর্ণ যৌবনে কেন যেন তার ধারে কাছে যাবার আগেই ভেবে ফেলছি বিরাট কিছু করে ফেলেছি। চার পাঁচটা কার্টুন এঁকে সেটার প্রচার করছি আরো বেশী, সাক্ষাতকারের সংখ্যা হচ্ছে বইয়ের চেয়ে বেশী। আঁকার আগেই কিভাবে 'লাইক' বাড়ানো যায় সেটা ভাবছি, অথবা সময় কাটাচ্ছি অন্যরা কত ফালতু সেটা নিয়ে গুলতানী মেরে। ইন্টারনেটে এই যুগেও আমরা যারা কূয়োর ব্যাং তাদের জন্যে ইতিহাসের করুণা ছাড়া দেবার আর কিছুই থাকবে না আসলে। সেটা শুধু কার্টুন না- সব ক্ষেত্রেই।
এই বছর তাই নিজেকে ফাঁকি না দেবার প্রতিজ্ঞায় বাড্ডাগামী তুরাগ সার্ভিসের বাসটায় উঠলাম।
গ্যালারি কায়ায় কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার এর কার্টুন |
আরেকটা মজার জিনিস ছিল তাঁর অরিজিন্যাল কপি। উনি প্রায় ১৫০% সাইজ বড় করে আঁকেন। |
আরো কার্টুন |
প্রদর্শনীর দর্শক হিসেবে আমার বন্ধু মহলকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে টেনে এনেছিলাম, বাঁ থেকে আফতাব (এর একটু পরেই সে সুইটজারল্যান্ড এ চলে যায় একমাসের জন্য), শহীদ, পিছনে সাকিব, সামনে আমি। |
শেষ মূহুর্তে প্রদর্শনী দেখতে পেরে মুখব্যাদানরত |
July 12, 2014
Rishad 03
এই একটা সিরিজ করে বেশ মজা পাচ্ছি, স্টোরি তো বটেই, আঁকতে গিয়েও যা ইচ্ছে তাই করে করছি। কোন টেনশন ছাড়া। টেনশন ছাড়া আঁকলেই আসলে মজার ড্রয়িং গুলি বের হয়। আর এটার আরেকটা মজা হল পুরোটাই সাদা কালোয়। এটার মাঙ্গা স্টাইলের একটা নিউজপৃন্ট ট্রেড পেপার ব্যাক বেরুতে যাচ্ছে। বলা যায় পুরোটাই ট্রায়াল রান। তবে এই ট্রায়াল রানটি বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছে পাঠকদের অপর। ক'দিন আগে বাকুমান নামের মাঙ্গা দেখলাম। দুই কমিক্স আঁকিয়ে হতে চাওয়া কিশোরের গল্প। দারুণ লাগলো। সেখানে কমিক্স এর একজন এডিটর থাকে (নাম মনে নাই) কথার ফাঁকে ফাঁকে সে কমিক্স আঁকিয়েদের জন্যে দারুণ সব উপদেশ দেয়। একটা ছিল 'কিভাবে জনপ্রিয় হবে সেটা ভেবে সিরিজ আঁকা যায় না। সেটার কোন সেট রুল নাই। যদি থাকতো তবে পৃথিবীর সবাই সেই নিয়ম মেনে একের পর এক জনপ্রিয় কমিক্স করে যেত। বরং আর্টিস্ট এর যেটা ভাল্লাগে সেটা শুনতে যতই আজব লাগুক না কেন দেখা যায় সেই যাচ্ছেতাই বা স্বতঃস্ফূর্ত কাজটাই কিভাবে যেন জনপ্রিয় হয়' সিরিজটা আমাকে বেশ প্রভাবিত করেছে।
July 11, 2014
July 10, 2014
কার্টুনের রান্নাঘর সিরিজঃ ডিম মানুষ
প্রথম আলো হাউজ থেকে বের হওয়া কিশোর আলো কি আ (নামটা শুনলেই এ তুনে কেয়া কিয়া টাইপ অনুভব হয়-যাই হোক) তে সিমু ভাইয়ের অনবরত চাহিদার প্রেক্ষিতে অবশেষে আমার 'ক্ষ' সিরিজটা শুরু করলাম, এই চান্স এ 'ক্ষ' হয়ে গেলে খারাপ কী?
লেখাটা তুলে দেই- মন্তব্য কাম্য।
ভালো কথা ডিম দুইটা আমরা বোঝার জন্যে দুই রঙ দিয়েছি। আর দুইটা ডিম কিন্তু দুই ভাবে রাখা। কালো বৃত্ত গুলি বোঝাচ্ছে সেগুলির মাঝ বরাবর যদি কোন লাইন টানা হয় তার পথটা। এখানে লাল ডিমটা আসলে মানুষে বুকের খাঁচা। এই অংশটাই শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আর নীচে নীল ডিম হল কোমর। এবারে তিন নাম্বার ছবিটায় দেখা যাচ্ছে এই দুইটাকে একটা কালো সূতো মতন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। বাস্তবে এইটা আসলে মেরদণ্ড। বোঝার সুবিধার জন্যে পাশে ছোট করে উলটে ব্যাপারটা বোঝানো হল মেরদণ্ড অনেকটা রাবারের মত এই দুইটা অংশকে আটকে রাখে। মাথার খুলির গোড়া থেকে শুরু করে কোমরের শেষ পর্যন্ত এটা নামে। বাস! পুরো শরীরের এইটুক ভালো অত যদি আমরা বুঝি তবে বাকিটুকু জলবৎ তরলং। এইটুক ভালোমত বুঝে আমরা এই জোড়াডিমের কিম্ভূত বস্তুটা বিভিন্ন ভাবে আঁকার চেষ্টা করব। দেখা যাক সেটা কেমন হয়।
লেখাটা তুলে দেই- মন্তব্য কাম্য।
কার্টুন শব্দটা শুনলেই একটা দারুণ চনমনে বোধ হয়। শুনলেই মনে হয় বেশ একটা মজার কিছু ঘটতে যাচ্ছে। একটা দারুণ কিছু, কিছু এডভেঞ্চার, কিছু রহস্য, কিছু ফান সব মিলে যেন কী একটা ব্যাপার ঘটে যায় একসাথে। কার্টুনের কতশত ধরন, কার্টুনের আছে কার্টুন ছবি (এনিমেশন), আছে কমিক্স, আছে স্ট্রিপ, আছে ক্যারিকেচার আর ডিজিটাল দুনিয়ায় তো এর ধরনের অভাবই নেই, একেকটা গেম ও তো আসলে একেকটা কার্টুন ছবি-ই। কার্টুনের এই বিরাট দুনিয়ায় আমরা আর পিছিয়ে থাকি কেন? কার্টুনের বিরাট যজ্ঞে কিভাবে তবে লগ ইন করা যায়? দেখা যাক। কার্টুন যাদের ভালো লাগে-বিশেষ করে যারা আঁকতে চায়-তাদের জন্যেই এই সিরিজ। কার্টুনের আসলে দুইটা অংশ। আঁকা আর লেখা বা আইডিয়া। মজার ব্যাপার হল আমরা আসলে খালি চোখে আঁকাটাই দেখি কিন্তু এর মূল মজাটা কিন্তু এর পেছনের আইডিইয়াটা কী সেটাই। আমরা এইখানে আগে আঁকা আঁকির পার্ট টা নিয়েই কথা বলব। আর শেষের দিকে গল্পের কথাও হবে। যেমন, কমিক্স কিভাবে আঁকা হয়, আইডিয়া কিভাবে আসে, গল্প কিভাবে বলে তার ওপর। আশা করি খুব একটা খারাপ হবে না ব্যাপারটা- 'কার্টুন' বলে কথা।
প্রথমে আমরা একেবারে বেসিক এ চলে যাই। কার্টুন এ সবচেয়ে বিপদ লাগে মানুষ আঁকতে। কোত্থেকে শুরম্ন করব, কিভাবে আগাবো এটা আসলেই বিপদের কাজ।এটা করার একটা সহজ পথ হল আগেই গোটা মানুষটা না এঁকে দুইটা গোল্লা আঁকা। মূলতঃ পুরো ফুটবলের মত গোল্লা না। অনেকটা ডিমের মত। আসলে এই দুইটা ডিম হল শরীরের দুইটা পার্ট। বুকের খাঁচা আর কোমর। আর এই দুই পার্ট একটা রাবারের মতও সূতো দিয়ে আটকানো থাকবে, যেটা আসলে মেরদণ্ড-। কথা না বড়িয়ে আমরা সরাসরি কাজে চলে যাই।
প্রথমে আমরা একেবারে বেসিক এ চলে যাই। কার্টুন এ সবচেয়ে বিপদ লাগে মানুষ আঁকতে। কোত্থেকে শুরম্ন করব, কিভাবে আগাবো এটা আসলেই বিপদের কাজ।এটা করার একটা সহজ পথ হল আগেই গোটা মানুষটা না এঁকে দুইটা গোল্লা আঁকা। মূলতঃ পুরো ফুটবলের মত গোল্লা না। অনেকটা ডিমের মত। আসলে এই দুইটা ডিম হল শরীরের দুইটা পার্ট। বুকের খাঁচা আর কোমর। আর এই দুই পার্ট একটা রাবারের মতও সূতো দিয়ে আটকানো থাকবে, যেটা আসলে মেরদণ্ড-। কথা না বড়িয়ে আমরা সরাসরি কাজে চলে যাই।
ভালো কথা ডিম দুইটা আমরা বোঝার জন্যে দুই রঙ দিয়েছি। আর দুইটা ডিম কিন্তু দুই ভাবে রাখা। কালো বৃত্ত গুলি বোঝাচ্ছে সেগুলির মাঝ বরাবর যদি কোন লাইন টানা হয় তার পথটা। এখানে লাল ডিমটা আসলে মানুষে বুকের খাঁচা। এই অংশটাই শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আর নীচে নীল ডিম হল কোমর। এবারে তিন নাম্বার ছবিটায় দেখা যাচ্ছে এই দুইটাকে একটা কালো সূতো মতন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। বাস্তবে এইটা আসলে মেরদণ্ড। বোঝার সুবিধার জন্যে পাশে ছোট করে উলটে ব্যাপারটা বোঝানো হল মেরদণ্ড অনেকটা রাবারের মত এই দুইটা অংশকে আটকে রাখে। মাথার খুলির গোড়া থেকে শুরু করে কোমরের শেষ পর্যন্ত এটা নামে। বাস! পুরো শরীরের এইটুক ভালো অত যদি আমরা বুঝি তবে বাকিটুকু জলবৎ তরলং। এইটুক ভালোমত বুঝে আমরা এই জোড়াডিমের কিম্ভূত বস্তুটা বিভিন্ন ভাবে আঁকার চেষ্টা করব। দেখা যাক সেটা কেমন হয়।
সোজা বাঁকা, উলটো, ডানে বামে মুচড়ে মোট কথা যতভাবে মাথায় আসে সেভাবে করে এটা আঁকা শুরু করতে হবে এখনই। আমরা যদি কার্টুন না এঁকে একেবারে রিয়েলস্টিক দ্য ভিঞ্চি স্টাইলেও আঁকতে চাই ত্তাহলেও কিন্তু বেসিক এটাই! সুতরাং এটা আরো যতভাবে মাথায় আসে এঁকে ফেলা যাক। তবে ব্যাপারটা অংক ক্লাসের মত- মানে কেন এই অংক করছি জানি না- টাইপ হবার আগেই এটা করে শেষে কী উপকার তা একটা চুরি করে দেখে নিতে পরের ড্রয়িংটা আড়চোখে দেখে নেই।
অর্থাৎ, যে ধরনের আঁকাই হোক না কেন, ডিটেইল বা সিম্পল- সবগুলি শরীর কিন্তু সেই ডিম দুইটার প্রথমে আঁকা একেবারে সিম্পল ভঙ্গীর ওপরেই ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। এখনই এসব দেখে মাথা গরম করার কিছু নেই। আশা করি আমরা এই সিরিজের শেষ নাগাদ এই ধরনের যে কোন ভঙ্গীর মানুষ আঁকতে শিখে যাব।
এবারে আমরা একটু ডিটেইল এ যাই। প্রথমে কিছু অস্ত্রপোচার করে নেই। ডিম দুটো (ধরে নিই সিদ্ধ ডিম :) চাক চাক করে কিছুটা কেটে নিই। মানে যেই দিক গুলি তাদের মুখোমুখি সেদিকে। তাতে করে ওপরের ছবিটার মাঝখানের মত একটা ব্যাপার ঘটবে। মানে মনে হবে দুইটা অংশই কিছুটা বাঁকা করা। পাঁজর ওপরের দিকে, কোমর নীচের দিকে। ব্যাপারটা আসলেই তাই। এবারে স্কন্ধকাটা ভুতটার একটা মাথা দেই। মাথা বলতে আসলে খালি খুলির ওপরের অংশটাই বলা হচ্ছে এখন। আসলে খালি মাথা আমরা পরে আরো ডিটেইলে দেখবো।
হুম। আর খুলির নীচের পার্টটা যদি বুঝতে চাই সেটা আসলে সহজ। বামে খেয়াল করম্নন। খুলির সাথে চোয়ালটা আসলে একটা স্ক্রু এর মত করে আটকে থাকে। কথা বলা বা হাঁ করার সময় খালি ওই পার্ট টাই নড়ে। কেউ যদি 'রোবটস' এনিমেশন টা দেখি তাহজলে দেখব ওখানে রডনি কপারবটম নামের মূল চরিত্রটা ঠিক আমাদের এই মিনিমাম ডিম মানুষের মতই
প্রথম পর্বের জন্যে আশা করি যথেষ্টই বলা হল। পরের পর্ব আসতে আসতে যদি এই সিদ্ধ ডিমগুলি মোটামুটি কড়া তেলে ভেজে ফেলতে পারি তবে অন্যান্য পর্বগুলি বেশ উপাদেয় হবে। ভালো কথা। চাইলে অন্যান্য সত্যিকারের ছবি বা আঁকা দেখে এখন তাদের ডিম গুলি কিভাবে কোনটার সাথে কোনটা আছে সেটা বের করে আঁকার চেষ্টা করলে এই পর্বের কাজটা আরো সরগড় হবে। আপাতত এখানেই থামি এবার।
কারিকাতুরেঃ শাকিব খান
প্রথম আলো'র রস + আলো কার্টুন সাপ্লিমেন্ট এর জন্যে আঁকলাম। সাপ্লিমেন্ট টা হঠাত করে ম্যাগাজিন থেকে ট্যাবলয়েড হয়ে গেছে। ভালো লাগলো না, আগেরটায় একটা ম্যাগাজিন ফিল ছিলো। সময় নিয়ে পড়ার আর সংগ্রহে রাখার ব্যাপার ছিল। এটায় তা নেই। ট্যাবলয়েডে বিজ্ঞাপন হার বেশী বলেই সম্ভবত এই প্রশস্তকরণ। নান্দনিকতা আর মুনাফার একটা অপটিমাম রেশিও থাকা উচিত, সেটা আমরা আজো শিখলাম না। আর নতুন করতে গিয়ে লোগোটা একেবারে আনরিডেবল লাগলো। যাই হোক, ক্যারিকেচারটা এঁকে মজা পেলাম।
July 06, 2014
July 05, 2014
July 01, 2014
নতুন ব্লগ!
ঘটনাক্রমে বেশ কিছু বিদেশী আঁকিয়েদের সাথে পরিচয় ঘটেছে (ইন্টারনেট মারফত) তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ আমার বাঙ্গাল ব্লগ তাঁরা বোঝেন না যদিও আঁকা দেখা যাচ্ছে। তাঁদের ও আরো অন্যান্য ইংরেজী পারঙ্গমদের জন্যে ফ্যান্সি ব্লগার টাম্বলার এ একটা একাউন্ট খুললাম। পাওয়া যাবে এখানে
ছবি
ছবি
Subscribe to:
Posts (Atom)
হ্যাংওভার কাটিয়ে
একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...
-
আইডিয়া পাওয়া বা ক্রিয়েটিভ কাজ ইত্যাদিকে এখনো আমাদের সমাজে একটা অলৌকিক প্রতিভা হিসেবে ভাবা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সত্যও বটে। ত...
-
দীর্ঘ দশ মাস পর ২০১৮ সালের বিজ্ঞান বিভাগের নবম-দশম শ্রেণির ৫ টা (গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান) ও আর্টস ও কমার্স বি...
-
এইবার আমরা হুইলের আসল কাজটা দেখি। মানে রঙ করার সময় এটা আসলে কি কাজে লাগে। একটা ছবি রঙ করার সময় আসলে মূল যে ব্যপারটা মাথায় আগে আনতে হবে সেটা ...