(লেখাটা পড়তে বসে মনে হতে পারে অনিক আর আমাদের
মাঝে নেই- ধরনের কিছু। ব্যাপারটা অনেকটা তা-ই। অনিক বিয়ে করতে যাচ্ছে। বিবাহিত
স্বজনেরা ব্যাপারটাকে সমার্থক বলে স্বীকার করছেন।)
আমি
আর অনিক বন্ধু – এ কথা আমাদের শত্রুও সন্দেহ করবে না। কিন্তু সত্য হল আমরা এক
যুগেরও বেশী সময় ধরে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। লেখাঃ অনিক আঁকাঃ মেহেদী হক- এমন শ’
খানেকের ওপরে উন্মাদীয় আর্টিকেল পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। মানছি এক যুগের
জন্যে শ’ খানেক আর্টিকেল খুব বেশী না তাও শুধু সংখ্যাটা দেখলে সেটা যথেষ্ট বড়।
অনিকের
সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৯৮ সালে, ধানমন্ডি ১৯ নাম্বার রোডের তখনকার উন্মাদ
অফিসে। [সেই অফিসেই প্রথম আমি, অনিক খান, মানিক-রতন, তানভীর ইবনে কামাল ইত্যাকার সদ্য
গোঁফ ওঠা (তানভীর ভাই আমাদের কিছুটা সিনিয়র, ওনার হাল্কা দাঁড়িও উঠেছিলো তখন)
ইঁচড়ে পাকাদের দেখা হয়। তখন আমি মতিঝিল মডেল হাইস্কুলের ক্লাস টেনে (টেনেটুনে) পড়ি।
প্রতি বৃহস্পতিবার বাসে ম্যাক্সিতে দুর্গম গিরিকান্তার মরু পাড় হয়ে ধানমন্ডি ১৯ এর
স্টার কাবাবের সামনে নামতাম] অনিককে প্রথমদিন দেখি সে জুল জুল চোখে আহসান ভাই
রোমেন ভাই আর আজিজ ভাই (আহসান হাবীব, রোমেন রায়হান, আজিজুল আবেদীন) এর কথা গিলছে। তার ঠিক পাশে বিরক্ত মুখে এক মুশকো জোয়ান বসে
আছে (তার লোকাল
গার্জিয়ান-ড্রাইভার সাহেব)। সেই ফিনিফিনে
মংগোলিয়ান গোঁফের অনিককে দেখে তখন কল্পনাও করিনি এই ছেলে একদিন দেশের লাখখানেক তরুন তরুনীর নমস্য হবে। সেই
প্রথম দিকে একটা মজার ব্যাপার হয়েছিলো- কিভাবে কিভাবে যেন সে ধরে নিয়েছিলো আমি তার
চেয়ে সিনিয়র (যে সময়ের অথা বলছি তখন সিনিয়র জুনিয়রগিরি নিয়ে হরদম পাড়াতো
ঠ্যাঙ্গাঠেঙ্গি চলত) এবং আমার পঁচিশতম জন্মদিনে সে আবিষ্কার করে সে আমার চেয়ে দুই
বছরের বড়! সে এদ্দিন আপনি আপনি করেছে। এটা বুঝে সে বিনীতভাবে জানতে চায় এই ঘটনার প্রায়শ্চিত্ত
করতে সে এখন থেকে আমাকে ‘তুই’ করে ডাকতে পারে কি না। আমি ততোধিক বিনীতভাবে সেই
আবদার প্রত্যাখ্যান করি। অনিককে নিয়ে লিখতে বসে আসলে কোন একটা বিশেষ কিছু মাথায়
আসছে না। যদিও দাবী করছি আমরা বন্ধু কিন্তু আমি মনে করি আমাদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই
জায়গায় বিরাট বৈষম্য আছে। আমাদের দুইজনকে যদি দুইটা কম্পিউটার হিসেবে ভাবি তবে বলা
যায় আমার ‘র্যাম’ ও ‘প্রসেসর’ অনিকের চেয়ে অনেক কম। সে ভাবে ঝড়ের বেগে, কথা বলে
টর্নেডোর গতিতে (তবে কাজ করে মৃদুমন্দ বাতাসের বেগে- আমার সাথে এখানে মিলে যায়)। তার মেমোরি কার্ড প্রায় ৫০০ টেরাবাইট ও
প্রসেসর পুরো কোর টু ডু ও। আর হ্যাঁ
সবকিছু ছাপিয়ে এরকম আইডিয়াবাজ আর একই সাথে উইটি কোন সহকর্মী আমি আর পাই নি। এবং সে
যতই বাইরে একটা প্রফেশনাল ভাব ধরবার চেষ্টা করে (মানে কর্পোরেট ...) সে আসলে পুরোই
টঙ্গদোকানীয় দিশী জিনিষ। সব কিছু ফুঁড়ে সেটা বের হয়ে আসেই। আমি আগেও খেয়াল করেচি
এটা শুধু অনিকের বেলায় না, উন্মাদের কোর গ্রুপ (উন্মাদে দুইটা গ্রুপ থাকে সবসময়,
একটা গ্রুপ নিজেদের কাজে আসে, আরেকটা গ্রুপ উন্মাদের কাজের জন্যে আসে- আমি
উন্মাদের কাজে যারা আসে তাদেরকেই উন্মাদের কোর গ্রুপ বলছি) এর সব সদস্য যে যেখানেই
থাকুক তাদের আসল চেহারাটা তারা বেশীদিন লুকিয়ে রাখতে পারে না। আমাদের ‘কি আছে
দুনিয়ায়’ দর্শন আমাদের সবসময় বাঁচিয়ে রাখে। যাই হোক অনিকের দুই একটা প্রত্যুতপন্নমতিত্বের
উদাহরণ দেয়া যাক, সাধারণ প্রসেসর সম্পন্নরা যেখানে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সেখানেই ওর
বিশেষত্বটা টের পাওয়া যায়।
বছর
ছয়েক আগের কথা। হঠাৎ উন্মাদে এ এক বিদগ্ধ তরুনের
আগমন। সে এসে কথায় কথায় ক্ষোভ প্রকাশ করল কেন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা এ সব
আব্জাব করে চলেছি? কেন আমরা আরো ‘মিনিংফুল’ কিছু করছি না? বলতে বলতে সে তার নিজের
কিছু ‘মিনিংফুল’ লেখা তার ব্যাগ থেকে বের করলো। আমাদের গুরু আহসান হাবীব (ওনাকে
নিয়ে আমার গোটা একটা বই লেখার ইচ্ছা তাই এখানে বেশী না বাড়াই) এই ধরনের তরুন তাঁর
ইহজন্মে নিদেনপক্ষে কয়েকশ’ সামলেছেন। তাই এই ক্ষেত্রে সুবিধাজনক যে কাজ সেটাই
করলেন। বললেন- হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই রেখে যাও। (বোধকরি গৌতম বুদ্ধের পর এই আরেকজন মানুষ যিনি সর্বজীবে দয়া করেন) বলা
বাহুল্য সে আঁতেল চলে যাবার পর সেই লেখা জায়গামত (ওয়েস্ট পেপার বিন) চলে গেল।
সপ্তাখানেক পরের কথা। সেই বিদগ্ধ তরুন আবার এলেন। কথা বলতে বলতে হঠাৎ তার চোখ গেল ওয়েস্ট পেপার বিন এ! আহসান
ভাই অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসলেন, পাশে অনিক। সেই তরুন হাহাকারের সুরে বললেন-আমার লেখা!!
আহসান ভাই সাথে সাথে তাকিয়ে বললেন ও হ্যাঁ আপনার লেখা সিলেক্টেড আসলে আমরা
সিলেক্টেড লেখাগুলি ওখানেই রাখি, আর রিজেক্টেডগুলি টেবিলে’
বলতে
না বলতেই অনিক সটান দাঁড়িয়ে বিন থেকে কাছিয়ে সব কিছু তুলে ফেলে আহসান ভাইয়ের দিকে
সিরিয়াস মুখে তাকিয়ে বল- বস তাইলে কম্পোজে দিয়া দেই?
এই হল
অনিক।
(সেই
তরুন আর আমাদের অফিসে আসেননি- No wonder)
অনিকের
সেন্স অফ হিউমার, উইট ইত্যাদি ছাপিয়ে যেটা আমার সামনে সবার আগে আসে তা হল সে লায়ন
হার্টেড একটা ছেলে। এবং সে নিজে যতই বাস্তববাদী ভাব
ধরুক না কেন সে আসলে আবেগে চলে। মনপ্রাণ সব তার কবিতায় বানানো। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া একটা ছেলে বাংলা
কবিতার ভক্ত এটাই তো এক বিস্ময়। একই সাথে সে অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। আর, আর দশজন ক্রিয়েটিভের চেয়েও সে
অস্থিরচিত্ত। বাপ্পী (ওয়াহিদ ইবনে রেজা বাপ্পী ভাই)ভাই একদিন আমাকে বলেছিলেন- এই
ছেলেটাকে দেখে রাখো একদিন মনে পড়বে। কথা মিথ্যে
বলেননি। মাঝেমাঝে
মনে হয় আমার এই ছোট্ট জীবনের অর্জন আসলে কী? কেউ জিজ্ঞেস করলে আসলে বলতে হবে- কিছু
ভালো বন্ধু, যার মধ্যে অনিক একজন
পুনশ্চ
১: ভালো কথা, অনিক ভাল ছড়াও লেখে)
পুনশ্চ
২: ওর নামে ভাল ভাল এতগুলি কথা লিখতে আমার
প্রায় ৪ দিন লাগলো
hehe, I heard the waste paper bin story before. But abaar pore prothom barer anondo tai paisi.
ReplyDeleteVery good writing.
আমার প্রিয় মানুষদের নাম বলতে গেলে সেখানে অনিক ভাইয়ের নামও আসবে... এই মানুষটা সত্যিই খুব চমৎকার একজন মানুষ।
ReplyDeletehaha
ReplyDeleteঅনিক ভাইয়ের লেখা আমি অনেক পড়েছি। তবে লেখক অনিক এর চেয়ে উপস্থাপক অনিক আমার কাছে অনেক বেশি গঠন মুলক মনে হয়েছে ।হাজারো তরুন কে স্বপ্ন দেখাতে পারেন একজন অনিক খান।সাম্প্রতিক ইয়াং নাইট তারই প্রমান। তবে দুটোই অনেক enjoy করি
ReplyDeleteঅসাধারণ।মেহেদি ভাই ভাল আঁকেন না লেখেন ও
ReplyDeleteমেহেদিভাই ও অনিকভাই জখন এক সাথে আড্ডা দেন,তখুন তাদের আড্ডা আমরাও উপভোগ করি কারন তাদের আড্ডাই অনেক মজার মজার তথ্য,ডাইলগ থাকে।আমি অপেক্ষা করি ঐ মুহূর্ত গুলো তাদের সাথে কাটানোর জন্য।আমি গর্বিত হই তাদের সাথে একটু সময় কাটাতে পেরে।
ReplyDelete