টেক্সট
বইয়ের কাজ চলছে। জাফর
ইকবাল স্যার আর ইয়াসমিন ম্যাডামের
সাথে বলতে গেলে প্রায়দিনই
তাঁদের বনানীর বাসায় বসে থাকি। সেই
সাথে দুই বেলা নিয়মিত
তাঁদের অন্ন ধ্বংস করে
যাচ্ছি আমি আর মিতু।
দিন দিন স্যারের নতুন
করে ফ্যান হয়ে যাচ্ছি। এত
পজিটিভ মানুষ যে হতে পারে
আমার ধারনা ছিল না। কারো
সম্পর্কেই তাঁর কোন বাজে
মন্তব্য নেই, ভয়ানক বিরক্তিকর
মানুষকেও হাসিমুখে ডিল করেন তিনি।
এইরকম এক দিন নিজের
বাসা থেকে আমাদের এলাকার
মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজে গেছি। বাংলা বয়ান চলছে, অল্প
বয়সি এক নতুন ঈমাম,
কোরবানীর ঈদ সামনে রেখে
চামড়ার ভাগাভাগি বিষয়ক কোন আলোচনা করছেন।
এমন সময় হঠাত খেয়াল
করলাম তিনি উত্তেজিত চিতকার
শুরু করেছেন। সেটা এমন
- ‘আর এখন? এখন আমাদের দেশের নাস্তিক মুরতাদেরা কোরবানীর বিরুদ্ধে কথা বলে!’
আমি উৎকর্ন হলাম।
এমন বিরাট সংবাদ আমি সংবাদপত্রে কাজ
করেও মিস করে গেলাম?
শুনি কী বলে। তারপরের
কথা হল-
এই দেশের অনেক বড় শিক্ষিত, ঢাকা ভার্সিটির বড় পরফেসর জাফর ইকবাল, সে বলেছে গরু নাকিমানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ! এই সব নাস্তিকদের...
আমি
হতভম্ব হয়ে ব্যাপারটা বোঝার
চেষ্টা করলাম। এই মূর্খ লোকটা
মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান সেটাও জানে
না তা বোঝা গেল
কিন্তু পরের অংশটা কোত্থেকে
এল? গত ৪-৫
মাস স্যারের সাথে সাথেই ছিলাম,
গরু বিষয়ক কোন কথা উনি
কোথাও বলেছেন বলে শুনি নাই।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম,
কারণ ঈমাম বলছেন-
‘প্রথম আলো পত্রিকায় এই জাফর ইকবাল লিখেছেন গরুকে কোরবানী দেয়া যাবে না, সে মানুষের চেয়ে সেরা জানোয়ার’।
ঘটনাটা
হল কিশোর আলো তে শাহরিয়ার
ভাইয়ের একটা কার্টুন কে
পেঁচিয়ে ওইরকম একটা কিছু বানানোর
চেষ্টা হয়েছিলো। যেখানে একটা ভিন গ্রহে
মানুষ যায় সেই গ্রহে
গরুর মত দেখতে প্রানীরাই
সব চালায়। তারা বলে মানুষ
তো কোন ছাড় তারাই
বরং সেরা। কোরবানির আগে এটা থেকে
দুইয়ে দুইয়ে পাঁচ করার চেষ্টা।
কিন্তু সেই চেষ্টাটা করেছে
একটা অখ্যাত পোর্টাল, আরো অসংখ্য আগড়ম
বাগড়ম ভুয়া নিউজ বানানোর
মত পোর্টালের এই নিউজে আনিসুল
হক ও জাফর ইকবাল
স্যারের হাস্যোজ্জ্বল ছবি ও নিচে
লেখা জাফর ইকবালের পত্রিকায়
গরুকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা।
ক্লিক করে দেখা যাবে
আসল ঘটনা এমন কিছুই
না। জাফর স্যার এই
পত্রিকার উপদেষ্টা ছিলেন, সুতরাং এটা তাঁর পত্রিকা,
আর যে যা লিখছে
এটা আসলে তাঁরই কথা-
এভাবেই দূর্বল ব্যাখ্যার চেষ্টা সেখানে।
আমার
মাথায় মুহূর্তে যেটা এল এই
অল্পবয়সী ঈমাম সাহেবের তারমানে
অবশ্যই ফেইসবুক একাউন্ট আছে, এবং সেখানে
সে দিনের একটা বড় সময়
কাটায়। কারণ এই ফেইক
নিউজটা ওই পোর্টাল ছাড়া
আর কোথাও আসেনি, আর সেটা শেয়ার
হয়েছে শুধু ফেইসবুকে। আর
সেটায় ক্লিক করে সে ডিটেইল
পড়েনি ক্লিক বেইট লিংকটার।
কী ভয়ানক! আর এখন মসজিদ
ভর্তি তিনশো মানুষ যাদের অনেকেই নিরীহি মুসলিম। অনেকে সাধারণ ভ্যানওয়ালা, গার্মেন্ট কর্মী তারা জানলো জাফর
ইকবাল একজন ভয়ানক খারাপ
ইসলাম বিদ্বেষী।
এ সময় আমি আমার
চরিত্রের বাইরে গিয়ে একটা কাজ
করলাম, ঈমামের কথার মাঝে হাত
তুললাম। যদিও ভেতরে রীতিমত
ধুকপুক করছিলো কারন উপাসনালয়ে মূল
ব্যাক্তির বিপক্ষে হাত তোলা সাধারনত
ধর্মদ্রোহ। আসলেও তাই হল। আশেপাশের
অনেক বিস্মিত মানুষ আমাকে থামিয়ে দিল। যে এখন
না পরে বলেন, বয়ান
শেষ হোক। আমি বলতে
চাইলাম, উনি মিথ্যা বলছেন,
উনি ভুল তথ্য দিচ্ছেন,
উনি ঘৃণা তৈরী করছেন,
না জেনে। ফিতনা তৈরী করা মানুষ
বর্জনীয়। এই ধরনের মানুষ
মসজিদে ঢুকে ঈমাম হয়ে
যাচ্ছেন এটা মানা যায়
না। ওইদিন কিছু বলতে পারিনি,
চেয়েছিলাম ঈমাম সাহেবকে পরে
আলাদা বুঝিয়ে বলব, সবার সামনে
বলে তাঁকে অপদস্থ করা ঠিক না,
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে
সেটাই ভুল ছিলো।
জাফর
স্যারের উপর হামলাকারী কিন্তু
একজন ফয়জুর না, এমন হাজারো
, লক্ষ লক্ষ ফয়জুর তৈরী করছে বেশ
কিছু মূর্খ মানুষ। যারা ধর্মকে সামনে
রেখে ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে।
মসজিদে ঈমাম নিয়োগে আমার
মতে আরো সতর্ক ব্যবস্থা
নেয়া দরকার। সবচেয়ে স্পর্শকাতর চাকরীর এটা অন্যতম। এই
পোস্টের বেতন হওয়া উচিত
প্রথম শ্রেনীর, আর যারা আসবেন
তাঁরা ভাল শিক্ষিত হবেন।
বেশ মানসম্মত একটা নির্বাচনী পরীক্ষায়
পাশ করে তাঁরা ঈমাম
হবেন। সেটার প্রশ্নমালায় অন্য ধর্ম সম্পর্কে
প্রার্থীদের ভাবনা কেমন সেটাও জানা
হবে, তাঁর চিন্তাভাবনা ইসলামের
মতই সহনশীল কি না সেটাও
দেখতে হবে।
শুধু
গোয়েন্দা একটিভিটি করে দুই একটা
খুনের আসামী ধরে আদপে কোন
লাভ নেই। আর আমাদের
দিক থেকে যেটা করার
সেটা হল, যে যার
অবস্থানে থেকে ধর্মের নামে
মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, শুধু সাবধান সেটা
আবার আরেক ধরনের ঘৃণার
জন্ম দিলে তার সাথে
অপরপক্ষের পার্থক্য
থাকবে না।
হাইপেশিয়াকে যখন পাথর ছুড়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে খৃষ্টানরা মারে তখন কেউ বাঁধা দেয়নি। এর মানে কি এই না যে দু'হাজার বছর বা তারও আগে থেকেই আমরা দ্বৈত মানসিকতার সমাজে বাস করি যেখানে কনিক, প্যারাবোলা নিয়ে কাজ হয় আবার দাস প্রথাও থাকে। দু'হাজার বছর পরে যেখানে শিশুদের সংক্রামক রোগের উপর গবেষণা হয় আবার গবেষকদের বাসায় অনেক নিকটাত্বীয় বিবর্তনবাদকে মিথ্যা বলেন। ধর্ম আর জ্ঞান মিলেমিশে এই সমাজের বড়লোক ছোটলোকের রন্দ্রেরন্দ্রে প্রবেশ করেছে। পৃথিবীর কোন দেশে এমন ডুয়েলিস্টিক পারিবারিক মূল্যবোধ আছে বলুন? কোন শিক্ষা, কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কোন সরকার এই অবস্থার উত্তোলন ঘটাতে পারবে না। সবাই এই মূল্যবোধের অংশ এবং যে যার মত করে সুবিধায় রয়েছে। সমস্যা হলো, সময় কিন্তু থেমে নেই, সূর্য ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ২৫ কোটি বছরের হিসেবে ঘুরপাক খেয়ে চলছেে, আমাদের মন মানসিকতা থেমে আছে।
ReplyDeleteফালতু
ReplyDeleteThis dure giya mor.
ReplyDeleteOops, spelling mistake.
ReplyDelete