February 26, 2012

পদ্মা সেতু


আমাদের নাকি টাকা নাই 
তাই 
অন্যের কাছে টাকা চাই

February 21, 2012

দোরায়মন, মুন্নীর বদনাম ও মোবাইলে বাংলা কি-প্যাড


আমি থাকি ঢাকার শহরতলী মতন একটা জায়গায়। (জায়গাটির প্রমিত নাম ‘রূপনগর’ কথ্য নাম ‘বাড্ডা-নামাপাড়া’)। এখানে আমি আছি আজ ১৭ বছর। অর্থাৎ নিজেকে এখানের স্থানীয় বলে দাবী করলে তার বিরোধিতা করবার খুব বেশী লোক পাওয়া যাবে না। এতদিন এখানে থাকার কারণে এলাকায় অনেকের সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। গলি ধরে প্রতিদিন যখন বের হই নিদেনপক্ষে গন্ডাচারেক মানুষের সাথে কুশল বিনিময় হয়। আর এলাকাটা এখনো সেই ‘মহল্লা’ ধরনের। মানে কি না ‘আমগো মহল্লা’ ‘ওই পাড়াত্তে পোলাপান আইসিল’ ইত্যাদি এখনো বেশ শুনতে পাওয়া যায়। এই সেদিনও বিলের মধ্যখানে এক বাড়িতে ডাকাত পরেছিলো (আমার ছোটবেলার বন্ধু মুনিরের বাসায়) শুধু একটা ডাকের অপেক্ষা, পাড়া ভেঙ্গে সবাই লাঠিসোঁটা নিয়ে উপস্থিত। ডাকাতেরা পালিয়ে রক্ষা পেল কোনমতে। অর্থাৎ আমাদের এখানে এখনো ‘সভ্যতা’ এসে ঢুকতে পারেনি। ছোটবেলা থেকে এই এলাকার প্রায় গোটা পঁচিশেক সমবয়েসী পোলাপান এর সাথে (সংখ্যাটা আরো বেশী) আমি বড় হয়েছি। সেই দলের কেউ এখন বাস চালায়, কেউ মুদী দোকানী, কেউ মহাস্থানগড় থেকে তরকারী কারওয়ানবাজার পাঠায়। সে যাই হোক, এত ভুমিকা দেবার কারণ হল সেই রূপনগরে ইদানীং অনেক কিছুই ঠিক আগের মত মিলছে না। যেমন এখন অনেককেই চিনি না। খেলার মাঠগুলি ডেভেলপারদের বালুর তোড়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে, কয়েক হাজার গার্মেন্ট কর্মীর চলাফেরায় মেঠো পথ আর অন্যান্য গলি তস্য গলি হয়ে থাকে নরক গুলজার। আর সবচেয়ে বিরক্তিকর ঘটনার একটা হল হঠাৎ হঠাৎ কোন এক বাড়ির ভেতর থেকে বিকট স্বরে বেজে ওঠা গান। ইদানীং এত এত ঘরবাড়ি উঠে গেছে যে সেই গান কোথায় বাজছে তা বের করতে করতে সেটা থেমে যায়। বিশেষ করে কোন পালা পার্বণ হলে তো কথাই নেই। পাল্লা দিয়ে সবাই  বাজিয়ে যায়। সে এক ভয়ানক ব্যাপার। তবে সেটার সবচেয়ে ভয়ানক দিকটা হল সেই গানের নব্বই ভাগই হিন্দী...। জানি সবাই বলবেন এ আর নতুন কি? নতুন তখনই যখন সেটা বাজে সব উৎসব ও উপলক্ষ্যে। মানে গত ১৬ই ডিসেম্বর এ একগাদা ‘পোলাপান’ হিন্দী গান ছেড়ে নাচছে এই দৃশ্য আমাকে আমার রূপনগরে দেখতে হয়েছে। ঈদ, বিজয় দিবস, বিয়ে, ... আমি আতংকে ছিলাম এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতেও এই ব্যাপার ঘটবে। কপাল ভাল সেটা ঘটেনি। এখন এই গোটা ব্যাপারটাকে আমি কিভাবে দেখছি? মানে আমি কি এখন ‘এই সময়’ এর দোষারোপ করব? যারা এটা করছিলো তাদের মুন্ডুপাত ঘটাব? নাকি কানে তুলো গুঁজে কার্টুন এঁকে যাব?  আসলে কি করব সেটা না ভেবে আমি গত ১৬ই ডিসেম্বরেই যেটা করেছি সেটা হল সরাসরি যারা এটা বাজাচ্ছিলো (১৫-১৮ বছরের কিছু-কানে ইয়ারফোন থুতনীতে দাঁড়ি) তাদের কাছে যাই। তাদেরকে জিজ্ঞেস করি এটা তারা কেন করছে। তারা যে জবাবটা দেয় সেটার মধ্যে আসলে এই সমস্যার একটা দিক পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা বলে- বাংলা গানের এইরকম সিডি নাই। মানে যা শুনে মজা করে নাচা যাবে। যেহেতু বিজয় আনন্দের, সেহেতু তারা আনন্দের গান ছেড়ে নাচতে চাচ্ছে। এটার কি উত্তর দেব বুঝিনি, তবে তাদেরকে বুঝাতে সমর্থ হয়েছিলাম যে অন্য ভাষার গান বাজিয়ে যাতে না নাচতে হয় সেজন্যেই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে তারা গান বন্ধ করে দিলেও আনন্দের মাঝে বাগড়া দেয়ায় নিজেরও খারাপ লাগছিলো। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল ক’দিনের মাঝেই, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একাধিক বন্ধুর বিয়েতে হিন্দী গানের সাথে গুঁড়ি, বুড়ী, ধাড়ী সবাই মিলে ভুমিকম্প তুলে নাচানাচি করল। আমি উৎসবে নাচানাচির বিপক্ষে না, কিন্তু যখন আমার আন্টি গোছের কেউ বা বন্ধুস্থানীয়রা ‘মুন্নী বদনাম হুয়ি’ গানের সাথে কোমর দোলায় তখন ব্যপারটা পরাবাস্তব মনে হয়। এখন ‘এগুলো খারাপ’ ‘হিন্দী এসে সব নষ্ট করে দিল’ ‘আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে’ ইত্যাদি সস্তা সংলাপ না ভেঁজে আমরা যদি সমস্যার গোড়ায় তাকাই তাহলে দেখব সে  পাড়ার চ্যাংড়ার দল যা বলেছিল তা-ই ঠিক। আমাদের ‘জোশিলা’ গানের দুর্ভিক্ষ আছে। জানি বলবার সাথে সাথেই একগাদা প্রগতিশীল পিউরিটান সচেতক (সচেতন-চেতী-লেখক) একটা লম্বা তালিকা ফেঁদে বসবেন যে আমাদের কত কত ভাল গান আছে আমরা জানি না-ইত্যাদি। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হল সে তালিকা যত লম্বাই হোক সেটা আমাদের  এই সময়কে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কোন উৎসবে হিন্দী গান বাজাটা তারই প্রমাণ। অর্থাৎ সচেতনভাবে আমরা অবশ্যই বিজাতীয় সংস্কৃতি বর্জন করব কিন্তু সেই সাথে এর একটা বিকল্পও আমাদের দিতে হবে। যেমন বিয়ের গান- এই সিরিজে কি ঝিনচ্যাক বাংলা গান হতে পারে না? হাই-বিট, দ্রুত লয়, আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমে? দেশের সেরা ব্যান্ড দল, সেরা সোলো গায়ক গায়িকারা কি সেটা ভেবেছেন? আমি বিশ্বাস করি সেটা মন দিয়ে করতে পারলে হিন্দী গান বাজানোর সংখ্যা কমতে বাধ্য। মাঝে কিন্তু অনেক বিয়ে বাড়িতে হাবিব, মাকসুদ, ন্যান্সি এদের গান আমি নিজে শুনেছি। আমাদের অসাধারণ সব গায়ক গায়িকারা বসে আছেন, ভেবে দেখুন- শুধু এইসব পালা পার্বণ উপলক্ষ্যে যদি আইয়ুব বাচচু, যেমস, মাকসুদ, হামিন-শাফিন, সুমন, লিংকন, সুফী, মিরাজ, টুটুল ইত্যাদী তেজী গলার গায়কেরা নতুন গানের এলবাম করেন? আর সেটার প্রচারণা করেন শুধুমাত্র এইসব বিশেষ দিবস সামনে রেখেই? আশা করি তখন মুন্নীর সাথে নাচার লোক কমবে। সত্যি বলতে অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। ঘরে ঘরে সবাই হিন্দী সিরিয়াল দেখছে। আমাদের জ্ঞানী গুণীরা দর্শকদের নিম্ন রুচীর কথা বলেই খালাস। কিন্তু তারা কি ‘উচচ রুচীর’ কোন নাটক তাদের দিচ্ছেন যাতে দর্শক চ্যানেল ঘুরিয়ে দেশে ফিরবে? হালে ‘দোরায়মন’ কার্টুন নিয়ে কথা উঠছে, সেটার ডাবিং হিন্দীতে হওয়ায় তার প্রভাব আরো ভয়ানক। বাচচারা খেতে বললে জবাব দিচ্ছে- বাদ মে। কিন্তু এর দায় কি বাচচাটার? মানুষ যেটা সুবিধার যেটা আনন্দের সেটাই গ্রহণ করে। তার জন্যে তাকে দোষ দেয়া যায় না। কিন্তু সেটাকে একটা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ‘দোরায়মন’ বা এমন অসাধারণ আরো কিছু কার্টুন কি আমরা কেউ বাংলায় ডাবিং করার কথা ভেবেছি? যদি না ভেবে থাকি তো এটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। আমাদের বুঝতে হবে ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা মানে বছরে একটা দিন খালি পায়ে হাঁটা না। বা ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো...’ লেখা না। এর মানে আসলেই ভাষার জন্যে কিছু করা। আমরা যে যেখানে আছি সুযোগ থাকলে এ ধরণের কাজ আমরা শুরু করি।

 (আমি এই ভাষা দিবসে কথা দিলাম এই বছর আমি বাংলাদেশী কমিকস নিয়ে ঝাঁপ দেব, যদিও সেটা শূন্যে ঝাঁপ- তাও বাংলাদেশের শিশুরা যেন দোরেমন পোকেমন বেন টেনের পাশাপাশি বাংলায় বাংলাদেশী কিছু কার্টুনচরিত্র পায় সে জন্যে আমি আর কাউকে না পেলেও একাই কাজ করব।)

জানতে পেলাম সরকারও এ ব্যপারে কম করছেন না, হিন্দী সিরিয়াল বা দোরেমন বা মুন্নীর দাপাদাপির জবাবে সমস্ত মোবাইল সেট এ বাংলা কি-প্যাড বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে- সাধু! মানে কি না ভবিষ্যতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যখন হিন্দীতে এসএমএস লিখবে তখন বাংলা দেখে দেখে কষ্ট করে টাইপ করতে হবে,
কেমন বোঝো?!

February 14, 2012

বাসন্তি খাম


গতকালের খাম। পুরো মেলায় কাল বসেছিলো বাসন্তি হাট, বছর তিনেক আগেও বসন্ত এত ঘটা করে ঢাকায় নামতো না। এই ১৩'ই ফেব্রুয়ারিতে আমাদের নিজেদের একটা উৎসব থাকাটা আমার কাছে দারুণ লাগছে। এর হলদে রঙের নীচে যেটা আমাদের না এমন- ১৪'ই ফেব্রুয়ারিটা অনেকটা চাপা পরে।

February 12, 2012

বইমেলাঃ ২০১২


প্রতিদিন অফিস ফাঁকি মেরে বইমেলায় পরে থাকছি। স্টলে বসে থাকতে থাকতে বিচিত্র সব ক্রেতাদের কর্মকান্ড দেখে প্রবল 'কৌতুকানন্দ' উপভোগ করি। সেই সাথে উন্মাদের টাকায় কেনা খাম (যাতে করে স্টিকার, ম্যাআগাজিন ইত্যাদি দেয়া হয়) ধ্বংস করে চলেছি। এত এত চরিত্র একসাথে পাওয়া এমনিতে অসম্ভব। স্টলে বসে প্রতিদিন একাধিক ব্রাউন খাম শেষ করি। কাল হঠাৎ কি মনে করে তার একটা নিয়ে এলাম। এখন থেকে প্রতিদিন একটি করে খাম ও সেই সাথে খামের গল্প বলার চেষ্টা করব।

February 10, 2012

আগুন রঙ বরফ রঙ: (রঙ সিরিজ-৪)

 [বেশ দেরি হয়ে গেল এবারের পোস্ট টা দিতে। ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। ফেব্রুয়ারির এক তারিখ থেকে প্রকাশক লেখক-ইত্যাদি ব্যক্তিরা উঠে পরে লাগেন যে কোন মূল্যে তাদের 'প্রডাকশন' দিতে। আর সে সময় (অর্থাৎ হাতে যখন আর এক সপ্তাহ আছে) খোঁজ পরে আঁকিয়েদের। তাদের বলা হয়- 'ভাই কইরা দ্যান না, আপনার তো দুই টান দিলেই হয়া যায়' এই অশ্লীল বাক্যটা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। এই শ্রেনীর লোকজনের কারণে দেশে এখনো আঁকিয়ে গোষ্ঠীও পেশাদার হয়ে উঠতে পারেনি। প্রথম কথা- কেন তাদের শশব্যস্ততা আঁকিয়েদের ঘাড়ে চাপবে? দ্বিতীয় কথা- তারা কেন ধরে নিচ্ছে এটা সবচেয়ে সহজ ও কম সময়ে করে ফেলা যায়- দুই টান দিলেই হয়। আমি শুধু বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের জড়দ্গবতা আর কুপেশাদারীত্ব নিয়ে অচিরেই একটা পোস্ট দিচ্ছি-
আজ এখানেই থামি।]

রঙের তাপ




রঙ চাক্কিতে আমরা মোটামুটি রংধণুর সব রঙ পেয়েছিলাম। এই চাক্কিটা আবার চাইলে দুইভাগে ভাগ করা যায়-রঙের তাপমাত্রার ভিত্তিতে। শুনতে আজব লাগলেও ব্যপারটা আসলেই তাই। রঙ এরও ঠান্ডা-গরম আছে। ওপরের ছবিটা দেখুন। এখানে নীলের দিকের রঙ গুলিকে বলা হচ্ছে ঠান্ডা আর লালের দিকেরগুলি গরম। খুব সম্ভব বরফের রঙ নীলাভ আর আগুনের রঙ লালচে বলে আমাদের অবচেতন ব্যপারগুলি এভাবে দেখে। আঁকাআঁকির ক্ষেত্রে এই দুই ধরনের রঙের একটা ভারসাম্য রাখলে সেটা দেখতে ভাল লাগে। দক্ষ আঁকিয়েরা এই দুই ধরনের রঙ একটার সাথে আরেকটা ভেবেচিন্তে ব্যবহার করেন। আর গরমের সাপেক্ষে ঠান্ডা, বা ঠান্ডার সাপেক্ষে গরম রঙ অনেক ভাল 'ফোটে'।



রঙ আরেকটু গুলিয়ে নিয়ে চাক্কিটা খেয়াল করুন, এমনকী সবুজ, টিয়া কমলা এগুলিও অনায়াসে গরমের দিকে জায়গা করেছে। একইভাবে বেগুনী থেকে ফিরোজা সবই আবার গিয়ে পরেছে ঠান্ডা এলাকায়। ব্যপারটা আসলে আরো সুক্ষভাবে বোঝার আছে তবে সেটা আমরা পরে দেখব। এই সিরিজের শেষে গিয়ে আমরা যা যা দেখলাম তা দিয়ে মাস্টার পেইন্টারদের কাজগুলি আমরা বিশ্লেষণ করব।


 
এই ছবিটা দেখলেই আসলে ব্যপারটা সহজে বুঝে ফেলা যায়। এখানে একেবারে মোটা দাগে আকাশের ঠান্ডা নীল রঙ আর তার সাথে সামনে উষ্ণ টিয়া ঘাস। অর্থাৎ প্রকৃতিতেই ব্যাপারটার একটা ভারসাম্য থাকে। আমরা পারলে পরে কিছু ফটোগ্রাফ নিয়ে আরো খুঁটিয়ে ব্যাপারটা দেখব।


ঠান্ডা আর গরম কি আলাদা করা যাচ্ছে? -LION KING

এখানে

খেয়াল করুন, এ সব ডিজাইনে ওয়ার্ম আর কুল রঙের প্রয়োগ একেবার মোটা দাগেই করা হয়েছে। এটা খুবই কাজের একটা জিনিস। মানে যদি আপনি মূল ক্যারেকটারকে 'ফোটাতে' চান তাহলে তার গায়ে যদি ওয়ার্ম রঙ দ্যান তো তার পেছনের রঙ হবে তার উলটা, মানে কুল।

ওয়ার্ম কুল নিয়ে আপাততঃ এখানেই থামা যাক। আসলে ব্যাপারটা এতটা মোটাদাগের লাল নীল চাপানো না, এমনকী একই রঙের সাথে একটা ধুসর মিলিয়ে সেটার কুল রঙ পাওয়া যায় একইভাবে আবার সেটার স্যাচুরেশন এ গেলে তা ওয়ার্ম মনে হয়। আশা করি সেই ডিটেইলে যাবার সুযোগ আমাদের ঘটবে। আমরা এখন রঙ করবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ VALUE নিয়ে একটু ঘাঁটি।


ভ্যালু ড্রয়িং

কারো বাসায় কি সাদা-কালো টিভি আছে? এখন না থাকলেও এক সময় ছিল না এমন কাউকে হয়ত পাওয়া যাবে না। সেই সাদা কালো টিভিতেই কিন্তু আমরা বিটিভির স্বর্ণযুগের সব অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। এবং রঙ না থাকায় তখন আমাদের কারো কোন সমস্যা হয়নি। ভ্যালু নিয়ে লিখতে গেলে এই ব্যাপারটাই আমাদের আগে বুঝতে হবে। কোন রকম রঙ না থাকলেও এমন কী ছিল যাতে কোন কিছুই বুঝতে সমস্যা হয়নি? রঙ না থাকলেও সেখানে যা ছিল তার নাম -VALUE. সোজা বাংলায় পরিমাণ। আসলে রঙের ভিত্তি এই VALUE। রংকে বরং আমরা আঁকিবুকির একটা দ্বিতীয় শ্রেনীর উপাদান বলতে পারি যা আঁকার ভাব (MOOD) ছাড়া আর তেমন কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে না। সুতরাং VALUE যদি আমরা একবার বুঝে ফেলি তাহলে রং করার ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে যাবে।

(এখানে ফটোশপে কাজটা করা হয়েছে, কিন্তু নিয়ম সব ক্ষেত্রে একই)




প্রথমে মিডটোনে একটা সলিড ফিগার আঁকা হল
এবারে একটা বেসিক শেড দেয়া হল, ধরে নেয়া হল আলো ওপর থেকে আসছে। (ওয়াটার কালার, পোস্টার কালার, পেন্সিল সব ক্ষেত্রেই নিয়ম এক)
এবার আরেকটু বেশী VALUE দিয়ে ওপরের জিনিসপাতি আঁকা। খেয়াল করুন, এখানে প্রথমে কালো রঙ্গটার হয়ত ২০% VALUE নেয়া হয়েছিল। তারপর ওপরের শেডটা দেয়া হয়েছিলো ৪০% এ। আর এখন বাকি সব আঁকা হচ্ছে ৬০% এ- মানে একই রঙের বিভিন্ন পরিমাণ বা VALUE দিয়ে আমরা আঁকছি।
টুকটাক ডিটেইলিং ও ১০% VALUE দিয়ে হাইলাইট ফেলা হল






এবারে সবচেয়ে মজার অংশটা (এটা অবশ্য কম্পিউটার সফটোয়ার ছাড়া করা যাবে না)। আমাদের করা VALUE ড্রয়িং এর ওপর এবার একটা লেয়ার নিয়ে সেটাকে COLOR MODE  এ নিয়ে আসতে হবে।

এরপর ম্যাজিক! যেখানে যে রঙ চান শুধু সেটা নিয়ে চাপিয়ে দিন। 
আপনি সেটা যত গাঢ়ই নিন না কেন সে পরবে ঠিক তার আগের সাদা কালো VALUE অনুযায়ী। 
অর্থাৎ আপনি আসলে সাদ-কালো টিভির ওপর একটা রঙ্গীন পর্দা ফেলছেন।
VALUE আগেরটাই রয়ে গেছে।
শেষ! (ঠান্ডা আর গরম রঙ কি আলাদা করতে পারছেন?)

এই VALUE নিয়ে এও কিছু বলার কারণ হল আপনার আঁকার সব ঠিক থাকলেও যদি VALUE ঠিক না থাকে তবে মাঠে মারা। যদি কম্পিউটার এ আঁকেন তো এটা আগে থেকে করে নেয়া অনেক সহজ। (মাস্টার আঁকিয়েরাও এই পদ্ধতিতে আঁকছেন আজকাল, মানে আগে সাদায় কালোয় এঁকে নিয়ে) আর হাতে-কাগজে করলে আগে পেন্সিল বা চারকোল এ VALUE কোথায় কত হবে সেটা ছোট্ট করে করে নিতে পারেন।
আজ এইটুকুই, পরের পোস্ট হবে এক রঙের সাপেক্ষে আরেক রঙ কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে। ভাল থাকুন সবাই।

February 04, 2012

হারমোনি (এমনি পোস্ট)


কালার হারমোনি-(রঙ সিরিজ-৩)

এবারে কয়েক ধরনের হারমোনি মেনে একই ছবি কয়েকবার আঁকা হল। পার্থক্যগুলি দেখুন। চিলড্রেন বুক এ সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় আসলে প্রথম দুইটাই। আর একটা সময় এগুলো হাতে এসে গেলে আপনি সহজেই সব ধরনের হারমোনি মিলিয়ে একটা ছবি আঁকতে পারবেন, সেটা আরো মজার। এখানে আমি নিজে যে সব ঠিকমত এঁকেছি তা ঠিক নিশ্চিত না। কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে খুশী হব।





February 02, 2012

কালার হারমোনি (রঙ সিরিজ-২)

এইবার আমরা হুইলের আসল কাজটা দেখি। মানে রঙ করার সময় এটা আসলে কি কাজে লাগে। একটা ছবি রঙ করার সময় আসলে মূল যে ব্যপারটা মাথায় আগে আনতে হবে সেটা হল ছবিটা কিসের? মানে সেটার 'ভাব'টা কী। সেটা কি আনন্দ? দুঃখ? ক্রোধ? লালসা? রঙ করার আগে আসলে সেটাই প্রথম কাজ। সেটা করার জন্যে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তার প্রধান কয়েকটা আমরা একটু দেখি,


COLOR HARMONY  (এখানে ক্লিক করে মুল সাইটটায় যেতে পারেন যেখান থেকে এই সব কিছু নেয়া)


Complementary Harmony বা উলটা হারমোনি  
হুইলের যেকোন রঙের সাথে যদি ঠিক তার উলটো দিকের রঙ নেয়া হয় তবে এই হারমোনি ঘটে।
সাধারণতঃ উজ্জ্বল, চড়া দাগের ভাব ধরতে এই প্যালেট টা ব্যবহার করা হয়

Analogous Harmony বা পাশাপাশি হারমোনি
হুইলের পাশাপাশি কমপক্ষে তিনটা রঙ নিয়ে যদি রঙ করা হয় তবে এটা ঘটবে।
নরম কোমল ভাবের ছবি- ল্যান্ডস্কেপ, স্বপ্নালু দৃশ্যপট ইত্যাদিতে এই প্যালেট বেশ কাজে দেয়
Triadic Harmony বা ত্রিভূজ হারমোনি-
এই ধরণের একটা সমবাহু ত্রিভূজ ভেবে নিয়ে যদি হুইল থেকে রঙ নেয়া হ।
এটা আর পরের Split complementary আসলে complementary' র মতই
তবে কম চড়া


Rectangle (tetradic) color Harmony বা বাক্স হারমোনি-
এ ক্ষেত্রে একই কাজ করা হয় একটা আয়তক্ষেত্র এঁকে
চিল্ড্রেন বুক এ বা কমিক্স এ এই রঙের প্রাধান্য দেখা যায়।
বেশ ঝলমলে একটা অনুভুতি আনে এই প্যালেটটা


Square color Harmony বা 
বর্গ হারমনি আসলে এ পর্যন্ত এসে আপনি বুঝে যাবেন যে কালার হুইলের ওপর
যে কোন একটা জ্যামিতিক অবয়ব ফেলে দিলেই সেটা কিছু একটা হয়ে যায়, আর রঙের সবচেয়ে
মজাদার জগৎ এখান থেকেই শুরু হবে কারণএখন আপনি নিজেই নিজের
মত করে বিভিন্ন হারমনিয়াস স্কিম বানাতে পারবেন।


পরের পোস্ট টা হবে রঙের উত্তাপ আর সাদা কালোর ভ্যালু নিয়ে। ততক্ষণ সাথেই থাকুন :)

_________________________
ডিস্ক্লেইমার- রঙ সম্পর্কে আমি নাদান ব্যক্তি। তাও যা জানি এ পর্যন্ত তা সবার সাথে না বলে থাকতে পারছি না, কেউ যদি কোন ভুল ধরিয়ে দেন বা নতুন কিছু যোগ করে(ন) তাহলে খুবই খুশী হব।

February 01, 2012

রঙ চাক্কি (Color Wheel)-১

আমি কালার হুইল কখনই বুঝতাম না ( তার মানে এখন যে বুঝি তাও না-Disclaimer 1)। যতবারই আস্তিন গুটিয়ে বসেছি-হুঁহুঁ বাবা, এইবার বুঝেই ছাড়ব- ততবারই একটা সময়ে এসে তালগোল পাকিয়ে যেত। প্রাইমারি কালার ক্যান ক্যাট ক্যাট করে, টারশিয়ারি কালার কেন ম্যাদ ম্যদা- ইত্যাদি না বুঝেই বছরের পর বছর রঙ করে গেছি। তার ফলে কখনই রঙ করাটা হাতে আসে নাই (তার মানে এখন যে আসে তাও না-Disclaimer 2) । অনেক মন মিশায়ে রঙ করার পরেও প্রকাশক বলতেন- আরিট্টু 'উজ্জ্বল' করা যায় না? সম্পাদক বলেন- 'এইরম মরা কালার ক্যান?' আমিও আসলে সেটা টের পেতাম। এবং অনেক ভেবে চিনতে আবারো সেই কালার হুইল নিয়ে বসতাম, কিন্তু সত্যি বলতে থিওরির ভীড়ে খালি ডুবেই যেতাম, বুঝতাম না (আবার Disclaimer 1 হবে)। যাই হোক। অবশেষে ব্যপারটা বোঝা শুরু করি সব্যদা (সব্যসাচী মিস্ত্রী) দ্যা গ্রেইট এর কাছে। গ্রাফার CONCEPT ART কর্মশালায় সব্যদা আধা ঘন্টার মধ্যে ব্যাপারটা বুঝায়ে হাত নেড়ে বল্লেন-'শিইম্পল খুব শিম্পল'- আসলেও ব্যপারটা শিম্পলই। অন্ততঃ এই মুহূর্তে আমি যেভাবে বুঝি। তো এইবেলা 'শিম্পলি' সেটা সবার সাথে ভাগ করে নেয়া যাক।




প্রথমে মৌলিক তিনটা রং-লাল, নীল, হলুদ। ইংরেজীতে Cyan, Magenta, Yellow মানে কি না CMYK এর C M আর  Y.    k বা BLACK * আসলে কোন রঙ না- এটা আসলে অন্ধকার বা আলোর অনুপস্থিতি। এই CMY রঙ তিনটাকে বলা হয় মৌলিক রঙ বা Primary Color


এবারে আমরা যদি পাশাপাশি দুটো কালার মেশানো শুরু করি- অর্থাৎ লাল-হলুদ, লাল-নীল, নীল-হলুদ, তবে আমরা আরো তিনটা নতুন রঙ পাব। এই তিনটা যথাক্রমে কমলা, বেগুনী আর সবুজ। যেহেতু এদেরকে প্রাইমারি বা মৌলিক রঙ মিশিয়ে পেতে হয়েছে তাই এদের নাম  সেকেন্ডারি রঙ


একইভাবে আমরা যদি আবার পাশাপাশি দুট করে রঙ মিশিয়ে নতুন আরো রঙ বানাতে থাকি তবে সেটা হবে এইরকম- এবং এদের বলা যায় টারশিয়ারি রঙ (কেউ কি সেকেন্ডারি, আর টারশিয়ারির ভাল বাংলা জানেন?)


একইভাবে ব্যপারটা উপর্যুপরি করে গেলে তা অনেকটা এমন রঙধনুর রুপ নেবে, আর এটাই আসলে কালার হুইল। বলা হয় এখানে প্রায় ১৬ বিলিয়ন রঙ পাওয়া সম্ভব। (এখানে একটা ব্যপার মনে রাখা ভাল- এই বৃত্তের রঙ্গগুলো একেবারে খাঁটি রং, একে বলে HUE। এর সাথে সাদা আর কালো মিশিয়ে এবার অন্যান্য 'শেড' তৈরি করা হবে)





আর সেই ১৬ বিলিয়ন রঙ পেতে  হলে পরের ধাপটা বুঝতে হবে।

 TINT SHADE TONE
মনে করুন এই রঙের বৃত্তের ঠিক মাঝখানে রাখা হল কালো কালি। আর তার চারিদিকে রাখা হল সাদা রঙ। এবারে ক্রমান্বয়ে প্রতিটা রঙ যদি দু'পাশে ছড়িয়ে দেয়া হয় অর্থাৎ ভিতরের দিকে যত ছড়ানো হবে তত এতে কালো কালি মিশতে থাকবে আর চারিদিকে যত ছড়ানো হবে তত মিশবে সাদা রঙ। তাহলে ব্যাপারটা অনেকটা এমন দাঁড়াবে।





খেয়াল করুন এবার একই রঙের (HUE) সাথে শুধু সাদা আর কালো মিশিয়ে অসংখ্য রঙ তৈরি হচ্ছে।  এমন করে যত কালো মেশানো হবে তত বলা হবে এর TONE বাড়ছে, যত সাদা মিলবে তত বলা যাবে রঙ TINT এর দিকে যাচ্ছে। আর ধুসর রঙ মিশানো হলে সেটা যেদিকে যাবে তার নাম SHADE. নিচে ব্যাপারটা সহজে বুঝবার চেষ্টা করা যাক।




এই কালার হুইল যে কোন মাধ্যমের জন্য সত্য। আপনি জল রঙ তেল রঙ পোস্টার এক্রিলিক যাই করেন কথা একই। এটা রঙের একেবারে প্রাথমিক ব্যকরণ।

এবারে ডিজিটাল আর্টিস্টদের মধ্যে যারা ফটোশপএ রঙ করেন তাদের জন্যে কিছু কথা। এখানে আপনি কিছু অদ্ভুত ব্যাপার দেখবেন যেমন- এখানের হুইলটা লম্বা একটা ফিতার মত (আমি জানি না কেন)আমি এখানে পাশে সেটা গোল করে এঁকে দেখালাম। আর এখানে আপনি TINT SHADE TONE এর একটা চারকোণা বাক্স পাবেন(COREL groupএর সফটোয়্যার এ এটা একটা ত্রিভূজাকারে থাকে সেটা বোঝা আরো সহজ)। যার ওপরের ডান কোণায় HUE বা সবথেকে উজ্জ্বল, ক্যাটক্যাটা, ব্রাইট বা খাঁটি রঙ। বামের কোণাকুণি গেলে সাদা মিশতে থাকবে অর্থাৎ TINT . বামের নিচের কোণায় যেতে থাকলে ধুসর রঙ মিশতে থাকবে- SHADE আর ডান দিকের নিচের কোণায় মিশবে কালো, মানে -TONE





খবরের কাগজে যারা কাজ করেন, অর্থাৎ নিউজপ্রিন্ট কাগজে যাদের আঁকা ছাপা হয় তাদের জন্যে ছোট্ট একটা থাম্ব রুল- এই ফটোশপ বাক্সটাকে চারভাগে ভাগ করলে বাম দিকের ওপরের আর ডান দিকের নিচের বাক্স থেকে রঙ করাই ভালো। মাঝে মাঝে ডান দিকের ওপরেরটা ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দেশী নিউজপ্রিন্ট এর ছাপায় এটা ভাল ফল দেয়।
(পরের পর্বে কালার হারমোনি নিয়ে বলা হবে-ততক্ষণ আমাদের সাথেই থাকুন)
________________________________
*BLACK কে K দিয়ে লেখা হয় দুটো কারণে ১. B দিয়ে BLUE ও হতে পারে ২. প্রেস এ চার রঙের প্লেট মেলানোর সময় কালো প্লেট টাকে KEY registration কালার ধরা হয়- এজন্যে K

হ্যাংওভার কাটিয়ে

একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...