প্রতিযোগীতার কল ফর এন্ট্রি। |
দারুণ একটা সেশন হয়ে গেল গত ক'দিন। পলিটিকাল কার্টুন কমে যাচ্ছে ইদানীং, একটা কারণ এই সরকারের তোষামোদীদের মারমুখি আচরণ, আর ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এর জুজু। অন্য কারণ- কার্টুনিস্ট রা এখন সচ্ছল। চাইলে বরং সরকার দলীয় কাজ করে বেশি ইনকাম পাতি করা সম্ভব। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন বাবা ডিম খাওয়া? তার চেয়ে সঠিক পথে ডিম পোচ বেটার অপশন। হাহা, যাই হোক। সিমু নাসের ভাই বেশ কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে আসলে আরো কত বৈরী সময়ে যে কত কার্টুন দেশে হয়েছে সেটা অনেক তরুণ কার্টুনিস্টরা জানেই না। তাহলে আমরা কি একটা শুধু রাজনৈতিক কার্টুনের প্রদর্শনী করতে পারি কিনা। আর সেখানে তরুণেরাও আঁকলো, তাদের থেকে বাছাই দলকে নিয়ে একটা কর্মশালা হল, কার্টুনিস্ট, লেখক, উকিল (আইন প্রসঙ্গে) এদের কিছু সেশন থাকলো। আইডিয়া দারুণ। তবে আমরা জোগাড়যন্ত্র করার আগেই জারি হয়ে গেলো করোনার শেষ লকডাউনটা। আইডিয়াটা অন্য ট্যাব এ রেখে দৈনন্দিন কাজে ঢুকে গেলাম।
ফাইনালি এবারের বইমেলা চলাকালীন আবার কথা হল সিমু ভাইয়ের সাথে, এখন ই না করলে আবারো বছর কয়েক পরে মাথা চাপড়ানো হবে। সুতরাং কাজে নেমে যাই। এ ক্ষেত্রে বড়ো মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে ভেন্যু বুক। ভেন্যু টাকা পয়সা দিয়ে বুক করলে কিছু একটা নামেই। অনেকে শুনেছি বিদেশ থেকে বিয়ে করার ঝটিকা সফরে যখন আসে আগে কমুনিটি সেন্টার বুক করে। মেয়ে হয়ত পাওয়া যাবে, কমুনিটি সেন্টার না-ও পাওয়া যেতে পারে। সেটা তখন একটা বিরাট মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে।
যাই হোক, মোটিভেশন ডান, আমরা-মানে আমি, ইআরকি সম্পাদক ও বহুদিনের বড়ভাইসুলভ বন্ধু সিমু ভাই, ফওজিয়া আর তার গৌতম বুদ্ধ টাইপ জামাই ম্যগনাস- একটা ঘরোয়া সভামত করে (মূলত খেয়ে দেয়ে ঢেঁকুর তুলে) ঠিক করলাম ই এম কে সেন্টার ই এই কাজে বেস্ট। কারণ তাদের একটা 'আড্ডা' নামে রুম আছে। সেখানে অনায়াসে ওয়ার্কশপ চালানো যাবে। যদিও সেখানে ঢোকা অনেকটা পুলসিরাত বা ইমিগ্রেশন পার হবার মত। রসকষহীন কিছু গার্ড তিন চারবার চেক করে ঢোকানোর পরে চোখ সরু করে তাকিয়ে থাকে যেন আমরা তার অজান্তে কোন একটা এক্সপ্লোসিভ নিয়ে ঢুকে গেছি, উদ্দেশ্য বিল্ডিং এর এক পাশ উড়িয়ে দেয়া।
তো সেই ইমিগ্রেশন সহ ইএমকে বুক করে এবারে কার্টুন খোঁজার পালা।
এবারে সহজ হল কারণ কাউকেই নতুন আঁকতে হচ্ছে না, যে যার সিলেক্টেড কিছু কাজ পাঠাবে, বিভিন্ন আমলের কাজ। আর তরুণেরা তো মেইলে পাঠাচ্ছেই। সেখান থেকে প্রাথমিক বাছাই করবেন আহসান হাবীব, আর শেষে গিয়ে শিশির ভট্টাচার্য।
ফাইনালি প্রায় ৫০০ কার্টুন (ছোটদের ও বড়দের মিলিয়ে) জমা পড়লো। সেখান থেকে গলদঘর্ম হয়ে কাটাই ছাঁটাই করে টিকলো ১৪৫ টা। পেশাদার কার্টুনিস্ট এর মধ্যে ২১ জন। বাকি সব নভিশ তরুণ। সব মিলে জমে গেল প্রদর্শনী। তবে এবারের সবথেকে দারুণ ব্যাপারটা হল এর ওয়ার্কশপটা। কে নেই সেখানে? রফিকুন নবী স্যার, আফসান চৌধুরী, আহসান হাবীব, শিশির ভট্টাচার্য, আনিসুল হক এঁরা ছিলেন প্যানেল ডিসকাশন এ! লাইফ টাইম অভিজ্ঞতা। এর বাইরে এক ঝাঁক তরুণ ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেশন নিয়ে, মাহা মীর্জা (তরুণ উন্নয়ন ও অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক) দারুণ একটা সেশন নিলেন বাংলাদেশের দুর্নিতী কে তথ্য উপাত্ত দিয়ে একোটা দারুণ ভিজুয়াল করলেন। আইন নিয়ে চমতকার সেশন নিলেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ইমতিয়াজ ফারুক। ডিজিটাল রাইট এর ফাউন্ডার মিরাজ আহমেদ চৌধুরী নিলেন ডিজিটাল তথ্য অধিকার নিয়ে একোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সেশন। আর শেষদিনে চলে এলেন আমার সম্পাদক নুরুল কবীর স্বয়ং! আর সুদূর বনশ্রী থেকে চলে এসেছিলেন আমাদের কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আমার দেখা অন্যতম অমায়িক মানুষ জাহিদ হাসান বেনু ভাই।
সব মিলে আমার জন্যেই প্রগ্রামটা দারুণ একটা স্মৃতি হয়ে থেকে গেল।
আর শেষের দিন নাসরীন সুলতানা মিতুর একটা জেন্ডার নিয়ে সেশন ছিল, অনেক কিছু শিখেছি।
যাই হোক কাজের মাঝেই আমার ফুসফুসের সংক্রমণ ইত্যাদীতে মাঝের খুব গুরুত্বপূর্ণ এক সপ্তাহ শয্যাশায়ী থাকায় সে সময়টুকু কিছুই করতে পারিনি, তবে শেষ মুহুর্তে সেটা ব্যাকাপ দিয়েছি বেশ খানিকটা। আর ইআরকি টিম দারুণ কাজ করেছে সবাই মিলে, আরেক ফওজিয়া (ফিজা) আমাদের আগের থেকেই বন্ধু মানুষ সে কার্টুন জোগাড়ের দুরূহ কাজটা করেছে, আর হঠাত হঠাত কল পেয়ে কাজীপাড়া টু কাঁটাবন ছোটাছুটি করতে হয়েছে। অন্য ফওজিয়া প্রথমত গুগল, মেটা আর এক্সেল সামলেছে (অন্যতম কঠিন কাজ) সমস্ত পেপার ওয়ার্ক ও প্ল্যান সাজানো প্লাস সব কোথায় কী হচ্ছে তার গুরুদায়িত্ব ছিল তার হাতে । আর এবারেই প্রথম আমাদের প্রদর্শনীর একজন কিউরেটর ছিল- আমাদের এস.এম. রাকিব, প্রথম আলোতে দারুণ সব ইলাস্ট্রেশন করছে এখন। আর অন্যান্য সব বারের মতই তুর্কী তরুণ মাহাতাব মূল কাজের সময় তার পুরো গ্যাং নিয়ে ছিল।
সার ইভেন্ট শুরুর সময় সবাই মিলে সর্বদা সজাগ ছিল, সবার নাম হয়ত মনে পড়বে না, ছিল আমাদের খাই-দাই মামা শিহাব, ছিল আনজু, রাজীব গান্ধী, শফিক হীরা (গ্রাফিক্স এর নীরব যোদ্ধা), সালমান সাকিব, সিয়াম, আর নাম ভুলে গেছি দুইজন।
তরুণদে কার্টুনিস্ট দের উৎসাহ ছিল অনেক বেশি, এবং আমার ধারনা এদের অন্তত কয়েকজন কার্টুন করাটা আরেকটু সিরিয়াসলি নেবে, তাহলেই এই সব খাটনি সার্থক।
শেষের দিনে পুরস্কার দেয়া হল, শর্ট লিস্ট দশজন পেল ক্রেস্ট, সবাই গণহারে সার্টিফিকেট। আর প্রথম তিনজন সাথে পেল যথাক্রমে ৫০,৩০ ও ২০ হাজার টাকা।
তারা হল জাহিদ জামিল, দুরন্ত সাদাত মাহবুব, অরিন্দম কুণ্ড অয়ন। প্রথম ও তৃতীয় জন চারুকলার। আর দুরন্ত পড়েন জাহাঙ্গীরনগর এ অর্থনীতি তে।
আশা করি কার্টুনগুলি একটা গ্যালারি আকারে এখানে তুলে দেব শিঘ্রী।
No comments:
Post a Comment