October 24, 2018

ক্রিয়েটিভ সেক্টরের টক্সিক 'ভাইয়া' : যেভাবে চিনবেন।

মেঘে মেঘে বেলা বয়ে যাচ্ছে, এখন আর টিআইবি তে কার্টুন জমা দিতে পারি না, এখন আর কেউ বলে না প্রতিশ্রুতিশীল। সময়ের সাথে আসলে মানুষের কিছু করার ক্ষমতা নেই, সময় তো আর হাতিরঝিলের ড্রেন না যে থেমে থাকবে, তাকে তার নিয়মে বয়ে যেতে হবে। আর এই চলার ফাঁকে ফাঁকে সে আমাদের একের পর এক বাস্তব সত্য শিখিয়ে আক্কেল গুড়ুম বানিয়ে বানিয়ে চুল পাকিয়ে দিতে থাকবে। আমি তো প্রায় দিনই নতুন নতুন সত্য জেনে তব্দা মেরে যাই। ও ব্যপারটা তাহলে এই ছিল? এদ্দিন ভেবেছি ওই? যেমন আমি আমার ছোট কার্টুন আঁকার জীবনে বেশ কিছু মজার জিনিস দেখেছি, আর মধ্যে একটা হল 'বড় ভাইয়া'। বড় ভাইয়া আর কিছুই না কোন একটা সেক্টরে (সাধারণত ক্রিয়েটিভ) কেউ একজন কিছু অধস্তন জোগাড় করবে এবং তাদের ঘাড়ে চেপে তার নিজের একটা (বা একাধিক) প্রজেক্ট হাসিল করবে। আর বিনিময়ে ছোটদের যেটা দেবে সেটা হল শর্ট টার্মে বায়বীয় 'এক্সপোজার' ও লং টার্মে 'অভিজ্ঞতা' অনেকটা সেই কৌতুকের মত, ব্যবসার আগে আমার ছিল টাকা, পার্টনারের ছিল অভিজ্ঞতা, এখন সেটা উলটে গেছে। তো এই ধরনের বেশ কিছু বড় ভাইকে আমি একটু দূর থেকে (কাছে যাইনি কারণ আমি এদের ভয় পাই) দেখেছি। আর তাদের সাথের সবার হাল ও পরিণতি ও শেষমেশ তাদের নিজেদের অবস্থা সবই কেস স্টাডি টাইপ ফাইল হয়ে মাথায় জমা হয়েছে। সেগুলি থেকে দেখেছি এই ধরনের টক্সিক (টক্সিক কারণ তারা অন্যের ক্রেডিট ও কাজ নিজের কাজে লাগিয়ে নিজের যশ ও অর্থ বাগায় ও অন্যদের মন ভেঙ্গে দিতে থাকে) ভাইয়াদের কিছু কমন বৈশিষ্ট্য থাকে। দেখে নিন, নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যেতে পারে, অথবা হতে পারে এই মুহূর্তে আপনি এরকম কারো সাথেই আছেন-


১. টক্সিক ভাইয়া অতি আদর করবে   

ভদ্রতা জনিত ভাল ব্যবহার আর অতি আদরের পার্থক্য টের পাবার মত বুদ্ধি আপনার না থাকলে বাকিটুকু পড়ার দরকার নেই। এই ভাইয়ারা (একটু জেন্ডার বায়াসড হয়ে যাচ্ছে তবে আমি কোন আপুকে এখনো এরকম পাইনি।) সাধারণত আপনাকে না চেনার ভান করবে, তবে কোনভাবে যদি আপনার কোন রকম যোগ্যতা তার কাজে আসতে পারে বলে তারা বুঝতে পারে তবে মধুর ব্যবহারে আপনার জান ঝালাপালা হবে। সেটা অনেকটা মামু-মামু ব্যাপার, মানে আমরা আমরাই তো। এরকম একটা সম্পর্ক হবে, মাঝে মাঝেই পার্টি, খেতে যাই চল। চল আজকে আড্ডা দেই, ইত্যাদি চলতে থাকবে। হঠাত হঠাত আবার সময় বুঝে গম্ভীর মোটেভিশনাল স্পিচ চলবে যে আমাদের কাজটা কত বড়ো মাঝে মাঝেই আমাদের কাজটা যে কত সিরিয়াস দেশের (আসলে নিজের) জন্যে সেটা বলবে। 

২. অনেক কাজ করাবে  
ভাইয়া এবার অন্নেক অন্নেক কাজ করাবে, অন্নেক এক্সপোজার এর কথা বলবে, কিন্তু কাজের বিনিময়ে প্রাপ্য টাকা দেবে না, বিপ্লবের কথা বলবে। টাকা দিলেও সেটা কোন কাজের জন্যে কী হিসাবে দেয়া হচ্ছে সেটা পরিষ্কার থাকবে না। এবং কাজ করিয়ে সেটার ক্রেডিটের পুরো ভাগে থাকবে সে নিজেই, এবং মূল প্রচার প্রসারের চ্যানেল বা মূলধারার লিংক টিংক থেকে খুব সাবধানে আপনাদের সরিয়ে রাখবে।

৩. ক্রেডিট সাকার  
এরা আপনার সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক আছে এমনটা হলেই আপনার যে কোন কাজ যে আসলে তার আর আপনার যৌথ একটা আলোচনারই ফল এটা বলে বেড়াবে, আপনি স্বীকার করুন বা না করুন। যদি কোনভাবে বাগে আনতে না পারে তবে সম্পর্ক খারাপ হবার পরে বলবে যে সেটা আসলে তারই করা ছিল।

৪. কাজ ফুরিয়ে গেলে অন্যরকম  
আপনার থেকে তার যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে গেলে বা আপনি কোন কারণে তার ওপরে বিগড়ে গেলে তার আসল চেহারা দেখিয়ে গালাগাল করবে ও ত্যাগ করবে ও অন্যান্যদের বলবে আপনি কত অযোগ্য। আর কোনভাবে যদি আপনি তার চাইতে কোন কিছু একটু ভাল করে ফেলেন তবে সাথে সাথে আপনাকে পঁচানো হবে, আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু হবে কিন্তু মূল প্রচারের প্ল্যাটফর্মে আপনার কাজটাও তাঁর সফলতা হিসেবে দেখানো হবে।

৫. নিজের কাজ ভয়ানক  

এরা সন্তর্পনে তার নিজের কাজ কী সেটা গোপন করে, মানে সবই তার কাজ এরকম একটা ভাব কিন্তু আসলে তার নিজের ক্রিয়েটিভ ধরনের কাজ তার জুনিয়রদের চাইতেও খারাপ, মূলত এটাই অন্যদের ঘাড়ে সওয়ার হবার কারণ।

সবার প্রতি আমার সাজেশন হচ্ছে এমন যে কোন একটা বৈশিষ্ট্য পেলেই এ ধরনের কারো থেকে সাবধানে থাকবেন। নাইলে এক সময় এর উপর ভয়ানক বিরক্ত হয়ে আপনার যা নিজের জন্যে করার কথা ছিলো তা আর করা হবে না, এমনকি আপনি আপনার ড্রিম প্রজেক্ট বা ড্রিম ক্যারিয়ারের অপরেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে দূরে চলে যেতে পারেন। সত্যি বলতে আপনার পরিচয় আপনার কাজ, বড় ভাইদের ধরে লিংক টিংক করে এগিয়ে যাব এটা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে, কিন্তু ক্রিয়েটিভ সেক্টরে সেটা হলেও হবে ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং নিজের কাজ ভালো করুন, এ ধরনের ধান্দাবাজ ভাই থাকুক বা না থাকুক, নিজে কাজ করে যান, প্রতিদিন কাজ আগের চেয়ে ভাল করার চেষ্টা করুন, সেখানে আপনাকে কেউ থামাতে পারবে না।

পুনশ্চ:
আর এই ধরনের টক্সিক ভাইদের আমি যদ্দুর দেখেছি নিজেদের পরিণতি সবচেয়ে খারাপ হয় কারণ প্রথমত অন্যের ঘাড়ে চাপতে চাপতে নিজের কাজ আর করা হয় না, যাও হত তাও খারাপ হয়। এবং শেষে একে একে সবাই  তাকে ত্যাগ করে, কারণ এই ধরনের ঘটনা জানাজানি হয় বিদ্যুতবেগে। একটা সময় সে একা হয়ে যায়। পরিণত হয় অনেক নাম করা ট্র্যাশে। নাম বা টাকা দিন শেষে উদ্বায়ী, থেকে যায় মানুষের সম্পর্ক, থেকে যায় কাজ। এই টক্সিক মানুষগুলি তাই শেষমেশ সবথেকে বড়ো লুজার।

6 comments:

হ্যাংওভার কাটিয়ে

একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...