বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশনের বার্ষিক প্রদর্শনী অবশেষে ত্রি-বার্ষিকী আকারে হলেও শুরু হতে যাচ্ছে। মানে মাঝে প্রায় আড়াই বছর আমাদের কোন প্রদর্শনী নেই। কারণ? কারণ আর কিছুই না, স্পন্সর জটিলতা। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট যাদের করার কথা তারা বার বার শেষ মুহূর্তে জানাচ্ছিলো যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু টাকার অভাবে কার্টুন প্রদর্শনী হবে না এটা ভাবতেই আমার মনে পড়লো সেই বছর ১৫ আগের করা প্রথম কার্টুন প্রদর্শনীর কথা। আক্ষরিক অর্থে পকেট ভোঁ ভোঁ। তখন মনে আছে আঁলিয়স ফ্রাঁসেজ গ্যালারি ছিল ফ্রি (এবং আমার ভুল না হয়ে থাকলে উলটো তখন যারা প্রদর্শনী করত তারা টাকাও পেত।) অন্য অনেক কার্টুনিস্টের মত আমারও কোন মোবাইল ফোন ছিল না। মনে আছে সবার নাম ঠিকানা নাম্বার অনেক কষ্টে জোগাড় করে একটা খাতায় লিখে নিয়েছিলাম, যেদিন সবাইকে কল দিতে হবে সেদিন সেই খাতা নিয়ে বের হয়ে মোড়ের ফোনের দোকানে যেতাম। ল্যান্ড ফোনে পার মিনিট ২ টাকা ছিল তাদের। এক টানা প্রায় তিরশটার মত কল করে থামতাম। দোকানদার ছেলেটা খুবই সন্দেহের চোখে তাকাতো যে ঘটনাটা কী? আমি তার সন্দেহ ভাঙ্গাতাম না।
ফোনের পরের পর্ব ছিলো আরো কষ্টের, তখন ডিজিটাল কার্টুন বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। দুই একজন বিত্তশালী যাদের স্ক্যানার আছে তারা মাঝে মাঝে কার্টুন স্ক্যান করে ফটশপে কিছু রঙ চং করত, ওইটুকুই। তার মানে সবই ট্রাডিশনাল হার্ড কপি। অর্থাৎ প্রত্যেকের বাসায় গিয়ে গিয়ে নিয়ে আসো। আমার তখন খুবই গরিবী দশা (এখনো)। ভাগ্য ভাল লোকাল বাসে তখনো ওঠা যেত, আর ছিল গরীবের বন্ধু টেম্পো। সব মিলিয়ে দিন দশেক ছোটাছুটি করে কার্টুনও জোগাড় করে ফেলা যেত। সমস্যা হত ফ্রেম নিয়ে। এটা তো আর ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে না। গুরু আহসান হাবীব বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লাগসই প্রজেক্ট হাতে নেন। তার একটা অংশ হিসেবে একবার করা হল ইলেকট্রিক চ্যানেলের ফ্রেম। মানে যেই প্লাস্টিকের ফাঁপা নল দিয়ে ইলেকট্রিকের লাইন ওয়ারিং করা হয় সেগুলি-ই ৪৫ ডিগ্রিতে কেটে কেটে জোড়া দিলে ফ্রেম বানানো যায়। এর চেয়ে সস্তা আর হয় না (যদিও প্রজেক্টটা প্রথমে সফল হয়নি, কেন জানি ফ্রেমগুলি কোণায় কোণায় ভালমত জোড়া লাগছিলো না) । এতেই কিন্তু শেষ না। প্রদর্শনীর লাগে পোস্টার, লাগে দাওয়াত কার্ড, লাগে ব্রোশিওর। একটা কাগজেই কিভাবে কেটেকুটে জোড়াতালি দিয়ে তিনটা জিনিস বের করা যায় সেটা সেবার দেখলাম। এবং আশ্চর্য ব্যাপার, দিনশেষে আঁলিয়সে যখন শুরু হল সেই প্রদর্শনী তখন কিন্তু এর পেছনের গরিবী হাল আর কারো চখেই পড়লো না। শেষে এসে দুর্দান্ত জম্পেশ হল সেই প্রদর্শনী।
তার মানে সেই শূন্য হাতে (পকেটে) আমরা সেই ১৫ বছর আগের ইন্টারনেট বিহীন সময়ে যদি প্রদর্শনী করে ফেলতে পারি তবে এখন এই সময়ে এসে কেন পারবো না? যেই ভাবা সেই কাজ। আমাদের ৫ বছর ধরে অস্থায়ী অফিসে কারওয়ানবাজারের স্টার কাবাবে মিটিং চল্ল বারবার। ঠিক হল আমরা কার্টুনিস্টেরাই চাঁদা দিয়ে এবারের প্রদর্শনী করে ফেলব। হিসাব নিকাশ করে দেখা গেল তাতে মাথাপিছু খুবই অল্প পড়ছে। তাহলে আর বসে থাকা কেন? শুরু হয়ে গেল সব কাজ। ডিজিটাল যুগের সুবিধা টের পাওয়া গেল অচিরেই। ইভেন্টের মাধ্যমে সবাই জেনে গেল, মেইলের মাধ্যমে চলে এল কার্টুন। পৃন্ট হয়ে ফ্রেমে চলে গেল সব কাজ। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রায় সবাই কাজ দিয়ে দিল।
আগামীকাল বিকেল ৩ টায় শুরু হবে এবারের প্রদর্শনী, আমাদের প্রদর্শনী। অনেকটা পদ্মা সেতু করে ফেলার অনুভূতি হচ্ছে। স্পন্সর ছাড়াই এ সময়ে এত ব্যাবহুল একটা কাজ আমরা সবাই মিলে করে ফেললাম।
এবং এবারের ফ্রেমগুলি কাঠের :D
সবাইকে প্রদর্শনীতে আসার অনুরোধ জানাই।
Enter your comment...ইচ্ছে থাকা সত্তেও আসতে পারছি না। তবে এটা বলতে চাই, জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন এই কার্টুন শিল্প কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। সেলুট জানাই আপনাকে।
ReplyDelete