ইদানীং নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই বারবার ধরা খাচ্ছি, আঁকান্তিস নামে যে গ্রুপটা খুলেছিলাম সেখানে সপ্তাহান্তে একটা কিছু কন্টেস্ট ডাকি (নিজেই)। তারপর সেটার ডেডলাইন নিয়ে মাথা নষ্ট (আসলে এই বছর ঢাকা কমিক্স ছাড়া আর কোন কাজ করবো না পণ করে এখন দেখা যাচ্ছে ঢাকা কমিক্স ও করি না, ক্লায়েন্ট এর কাজ ও নেই না)। যাই হোক এবারের পাতা ফাঁদ এর নাম মেছো ভূত। মানে যে যেভাবে পারে মেছো ভূত আঁকবে। পোস্ট দেবার পর প্রথমে আবিষ্কার হল অনেকেই এটা কী জিনিস সেটা বুঝতে পারছে না! কী ভয়ানক। আমার তখন মনে হল সে ক্ষেত্রে এটা বেশ উচিত কাজই হচ্ছে, বিদেশী ক্রিয়েচার আঁকার সাথে নিজেদের জিনিসপাতিও আঁকতে হবে, আর এটা একটা প্র্যাকটিসও বটে। চ্যালেঞ্জটায় আমি নিজে সবচেয়ে ভালো করে এঁকে সবচেয়ে বেশী 'লাইক' কামাবার বদলে যেটা করতে চাইলাম সেটা হল কিভাবে আসলে ক্যারেক্টার ডিজাইন করে সেটা শেখার চেষ্টা, সেটা সবার সাথে ভাগ করে নেবার জন্যেই এই পোস্ট। ক্যারেক্টার ডিজাইনের ক্ষেত্রে যা যা পেশাদার আঁকিয়েরা করে নেট ঘেঁটেঘুটে তার যা বুঝলাম তার সাথে নিজের বুদ্ধি মিলিয়ে ধাপ গুলি যা দাঁড়ালো তা এই-
১. রেফারেন্স জোগাড়-
ছবি এবং লেখা, যত সম্ভব। এখন গুগলের যুগে এটা না পাবার কোন অজুহাতই দেবার উপায় নেই। যা আঁকতে হহবে সেটা হুট করে প্রথমেই না এঁকে যত সম্ভব মানুষ ইতিমধ্যেই সেটা কিভাবে ভাবে বা দেখে সেটা দেখতে হবে, ছবি নামাতে হবে, এবং অবশ্যই সেটা সম্পর্কে জানার জন্যে পড়ে ফেলতে হবে। ধরা যাক আঁকব একটা স্পেশ শিপ। তাহলে প্রথমেই এই ধরনের যত রকম ছবি আমার ভালো লাগে সেটা নামিয়ে দখতে হবে, আর সেটা মুগ্ধ হয়ে দেখা না, দেখতে হবে খুঁটিয়ে, একেবারে জহুরী চোখে, এর ডানা কেমন, কেন এমন, এরোডিনামিক্স কি আসলে স্পেস এ কাজ করে কি না যেখানে বাতাস নেই, কী কী জিনিস স্পেশশিপ এ অবশ্যি থাকতে হয়। কন্সেপ্ট এর অংশটা কিন্তু আমি মনে করি পরে, কারণ আমার ক্ষেত্রে ফাংশন মানে কী কী জিনিস কেন লাগে সেটা দেখলে পরে কনসেপ্ট আসে। যেমন এই ভূতের ক্ষেত্রে আমি প্রথমে জোগাড় করলাম আমাদের এইদিকের আঁকিয়েরা কি কী এঁকেছে সেই আদিকাল থেকে সেগুলি-
১৯০৯ সালের আঁকা (!) শাঁকচুন্নী। |
প্রাচ্যে ভূত যেভাবে দেখা যায় |
নন্টে ফন্টে থেকে এডাপ্টেশন |
নন্টে ফন্টে থেকে আবার |
ঠাকুরমার ঝুলি থেকে |
https://en.wikipedia.org/wiki/Ghosts_in_Bengali_culture
আরো জ্ঞানান্বেষীদের জন্যে :D
বৈদিক সাহিত্যে ভূত
http://www.mahavidya.ca/wp-content/uploads/2008/06/sawatsky-jerrah-demons-yes.pdf
ডাকিনী যোগিনী নিয়ে তূলনামূলক ডেমনোলজি নিয়ে আলোচনা (খবর আছে)
http://www.uky.edu/Centers/Asia/SECAAS/Seras/2013/2WhiteAdventures.pdf
মূল প্রসংগ ছিলো মেছো ভূত, দেখা যাক আমাদের উইকি পিডিয়ার আর্টিকেল সেটা নিয়ে কী বলে,
Mechho Bhoot: This is a kind of ghost who likes to eat fish. The word Mechho comes from Machh that means 'fish' in Bengali. Mechho Bhoot usually lives near to the village ponds or lakes which are full of fish. These kinds of ghosts urges the late night fishermen or a lone person who carries fish with him to give them their fish by saying in a nasal tone - "Machh Diye Ja" (meaning "give me the fish"). If the person disagrees to leave the fish for the Mechho Bhoot, it threatens to harm them. Sometimes they steal fish from kitchens in village households or from the boats of fishermen.
মানে মোটামুটি নির্দোষ ভূত, আর অন্যদিকে যেটা টের পেলাম আঁকিয়েরা প্রায় সময়েই আমাদের ভূতকে এঁকেছে বায়বীয় করে, আসলে ভূত সম্ভবত এভাবেই 'ক্রিয়েচার' থেকে আলাদা, সে বায়বীয়, এই আছে এই নেই, দেহ তাই সম্পূর্ন না, আসলে হ্যালুসিনেশন এ দেখা কোন কিছু সম্পূর্ন না হবারই কথা। যাই হোক এবারে পরের ধাপ এ আসি, পড়াশোনা অনেক হল।
২. সিলুয়েট ভাবনা
দুনিয়া সেরা ক্যারেক্টার ডিজাইনার রা বলেন অন্তত ১০০ টা সিলুয়েট থাম্বনেইল করতে। আগে জেনে নেই এটা কী জিনিস, সিলুয়েট মানে খালি অবয়বটা, অর্থাৎ নাক মুখ চোখ কান না, খালি আউটলাইন এ আঁকলে একটা জিনিস যেমন দেখতে, বা আরো সহজে বললে কোন জিনিসের ছায়া যেভাবে পরে, শুধু কালো অবয়ব, উদাহরণ-
সিলুয়েট, খালি কালো করে অবয়বটা আঁকা, কিন্তু তাতেই বোঝা যাচ্ছে চরিত্রটা কী বা কে, এমন কি কোন যুগের তা-ও। |
এবারে যেই ক্যারেক্টার ডিজাইন করতে যাচ্ছি সেটারই বেশ কিছু যা মাথায় আসে তাই সিলুয়েট আঁকতে হবে। যা মাথায় আসে বলা হল ঠিকই কিন্তু সেটা এই যে এতক্ষণ পড়াশোনা করলাম আর আগের রেফারেন্স দেখলাম তার সাথে মিলতে হবে। যেমন আমি জানি মেছো ভূত পুকুরের পাড় এ স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় থাকে তাহলে তার গা নিশ্চই একটু ভেজা ভেজা শ্যাওলা পড়া হতে পারে? লুকিয়ে থাকা লাজুক ভূত, তাহলে সে হয়ত ক্যামোফ্লেজ হয়ে থাকে। এই ভাবনা গুলি কিন্তু তার থাকার জায়গা বা ধরন পড়ে নিয়েছি বলেই সহজ হচ্ছে, আমরা আমাদের কাজে যাবার আগে কিছু সিলুয়েট প্র্যাকটিস দেখে নেই,
এবারে মেছো ভূত এর কিছু সম্ভাব্য সিলুয়েট (অবশ্যই ১০০ টা না!)
ব্যাপারটা সহজ না, তবে যেহেতু আমি আগে থেকে ঘেঁটে দেখেছি যে ভূত আঁকতে গেলে এদিকের আঁকিয়েরা যেটা করেন সেটা হল, পেট মোটা, হাত পা সরু, কান কুলোর মতও (দাঁত মূলোর মত) তাই সেগুলি মাথায় রেখে কিছু সিলুয়েট করা। শেষের সারি অনেকটা ক্রিয়েচার ধরনের হয়ে গেছে। সব আঁকার পর দূর থেকে দেখে আমার ওপরের বাঁ তেকে ৫ নম্বর টা পছন্দ হল।
এবারে সেই সিলুয়েট ধরে একটা বাচ্চা ভূত এর ডিজাইন শুরু, এবারে কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটাই কন্ট্রোল এ। এটা সবচেয়ে ভাল ক্যারেক্টার না, কিন্তু এটা আমি জানি কি জন্যে এভাবে করা। |
এখন কিন্তু কাজ মোটে শুরু। শুরু থেকেই মনে এই পাঁচটা প্রশ্ন থাকতে হয় এখন এসে সেটাকে আরেকটু পরিষ্কার করার পালা, যে প্রশ্নগুলি ক্যারেক্টার কে করতে হবে,
১. সে কী করে
২. সে কী চায়
৩. সে কোথায় থাকে
৪. তার জগত টা কী নিয়ে
৫. তার সীমাবদ্ধতা কী
এই প্রশ্নগুলির উত্তর জনা থাকলে একটা ক্যারেক্টার নিয়ে অনেকদূর এগোনো যায়। মেছোভূতের এই প্রশ্নের উত্তর দেই
১. সে কী করেঃ
সে মাছ খায়, বাজার থেকে মাছ কিনে বাড়ি ফিরতে গেলে অনেক কে পেছন থেকে ডাক দেয়,
'মাঁছ দিঁয়ে যাঁ'
২. সে কী চায়ঃ
মাছ খেতে :) , আসলে শুধু খাওয়াটা কারো একমাত্র চাওয়া না, আমরা এখানে কিছুটা কল্পনা শক্তি খাটাই। হয়ত একটা মছ ভূত পরিবার, চারদিক খাল বিল ভরাট হতে হতে তাদের আর মাছ খাবার জায়গা নেই, হাঁটূরে দের থেকে যাও চেয়ে চিনতে পাচ্ছে তাতে ফর্মালিন, এখন এই ভূত সমাজকে টিকিয়ে রাখতে জোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। প্রথম আন্দোলন- নদী বাঁচাও। তাহলে আমরা এই আইডিয়া থেকে আরো অনেক পার্শ্ব চরিত্র আনতে পারব- নদী দখল কারী দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ডেভেলপার, সাধারণ মানুষ। তখন গল্পপ বলাও সহজ হবে।
৩. সে কোথায় থাকেঃ
গ্রাম বাংলার জলা জায়গায়, পুকুর, খাল, বিলের পাড়ে, যেখানে জলজ গাছপালা ঘণ। এর থেকে আমরা তার গায়ের রঙ, টেক্সচার ভাবতে পারি। এমনিতে এই এলাকার প্রাণির দেখতে ক্যামন, তাদের ক্যামোফ্লাজ কেমন সেটার রেফারেন্স দেখে নিতে পারি, ক্যারেক্টারের কালার আর টেক্সচার করতে এটা বেশ কাজের।
৪. তার জগত টা কী নিয়েঃ
মাছ, নদী খাল, বিল, হাঁটুরে, গাছ, পরিবার
৫. তার সীমাবদ্ধতা কীঃ
সে লাজুক, দিনের এলা সামনে আসতে পারে না। আর যারা বিশ্বাস করে না তাদের সে দেখা দিতে পারে না। ঠান্ডার সময় তাদের গলায় নাকি সুর চলে আসে, আর তখনই তাদের ক্ষিদে থাকে বেশী। ফলে সবাই জানে তারা নাকি সুর এ কথা বলে। আসলে তাদের গলা মোটা (এটা বানালাম।)
আসলে চাইলে একটানে এক বসাতেও দুর্দান্ত ক্যারেক্টার ডিজাইন করা যায়, তবে কারো যদি সেটা নিয়ে বড় গল্প বলা বা কমিক্স করার ইচ্ছা থাকে তবে এভাবে বলা ভাল। অনেক কন্ট্রোলে থাকে। আর এটা মাত্র শুরু, ক্যারেক্টার ডিজাইন এর পরের ধাপ গুলি সংক্ষেপে আশা করি আগামীকাল দেয়া যাবে।
(চলবে)
দারুন
ReplyDelete(Y)
Deleteদারুন লেখা :)
ReplyDeleteThanks
Deleteউপকৃত হইলাম :)
ReplyDeleteপরের পার্ট আসতেসে :D
Deleteবাপরে বাপ! আমি ভাবতাম "মন থেকে একটা ভূতের দৃশ্য আকো" টাইপ! এ যে দেখছি "গবেষণা"!
ReplyDelete