February 28, 2014

সোয়ারীঘাট স্কেচবুকিং

আমাদের একটা স্কেচবুকিং গ্রুপ আছে, নাম আঁকান্তিস। গত বছর দুইয়েক টানা ফি হপ্তায় ঢাকার আদারে বাদারে গলিতে কানা গলিতে স্কেচ বুক নিয়ে আমরা চষে বেরিয়েছি। তাতে ফল হয়েছে অভূতপূর্ব। যারা স্কেচবুক করেছে তাদের ড্রয়িং অনেক প্রাণবন্ত আর ডিটেইল হয়েছে। বিশেষ করে দেখার চোখ আরো ভালো হয়েছে তাদের। আসলে দেখা আর খেয়াল করা যে আলাদা ব্যাপার সেটা আঁকান্তিস না হলে আমরা হয়ত বুঝতে অনেক দেরি করতাম। এই স্কেচবুকিং এখন এই গ্রুপের নিয়মিত সদস্যদের একতা পার্ট অফ লাইফ হয়ে গেছে। কখনই কোথাও অকারণ বসে থাকতে আর বোর লাগে না। সাথে সাথে স্কেচবুক বের হয়ে যায়, এমন কী ব্যাপারটা ঢাকার দূর্বিষহ ট্রাফিক জ্যামকেও পরাস্ত করতে পারে, মনে করুন আপনি সি এন জি তে কোথাও যাচ্ছেন, তখন মূল বিরক্তিটা শুরু হয় কখন গাড়ি ছাড়বে সেটা ভেবে। কিন্তু যদি এটা করা হয় যে গাড়িতে বসে আপনি স্কেচবুকে কিছু আঁকছেন তখন কিন্তু উলটো হবে। গাড়ি ছাড়লে বরং বিরক্ত লাগবে, কারণ তখন হয়ত কিছু একটা এঁকে প্রায় শেষ করে এনেছেন, যেটা এখন আর আঁকা যাচ্ছে না :) । যাই হোক। এখন আরেকটা মজার কাজ শুরু হয়েছে আমার সেটা হল- স্কেচবুক ছাড়াও আঁকা! মানে কি না মনে মনে আঁকা। এটা যে কী অসাধারণ একটা অনুভূতি সেটা বোঝানো যাবে না। নীচের এই ড্রয়িং আসলে আমার এমন একটা মনের খাতায় আঁকা স্কেচ। সোয়ারীঘাট থেকে নৌকা নিয়ে বুড়িগঙ্গায় বন্ধু সমভিব্যাহার এ বাতাস (ও চানাচুর) খাওয়া আমার অনেক আগের অভ্যাস। সেখান থেকে সন্ধ্যামিলান দেখতে দেখতে হঠাত মনে হলে সুবাদার ইসলাম খাঁ জিঞ্জিরার পাড় থেকে দেখছেন ঢাকার নদীতট। মনে মনে ভাবছেন মগ জলদস্যূর আক্রমণ কোনভাবে ঠেকানোর উপায় খুঁজে পেলে এই নতুন নদীতীর এ দারুণ একটা শহর পত্তন করা যায়। সন্ধ্যার শেষ আলো মিশে যেতে হঠাৎ কোন অচেনা মন্দির থেকে বেজে উঠলো ঢাক এর আওয়াজ! যাই হোক স্বপ্নালু কন্সেপ্ট আর্ট যেন চোখের সামনে ঘটে যায় সব। মন স্কেচবুক আসলে সবচেয়ে ড্রিমি। সেই জিনিস মাথায় নিয়ে সেদিন নিজের স্টুডিও তে আঁকতে বসে গেলাম, যা দাঁড়ালো তার মোটামুটি স্টেপ বাই স্টেপ।


এটা  কানাডিয়ান কনসেপ্ট আর্টিস্ট ববি চিউ এর থেকে শেখা, arrange> New window খোলা, এতে যেটা হয় বড় করে যুমড ইমেজ নিয়ে কাজ করলেও কোণা দিয়ে পুরো ক্যনাভাস কেমন দেখাচ্ছে তা বোঝা যায়। একেবারে প্রথম ধাপে চাইলে ছোট ক্যানভাসটাতেও কাজ করে নেয়া যায়। এ দু'টো স্ক্রিন সিনক্রোনাইজড হয়ে থাকে, মানে একটায় আঁকলেই দেখবেন একসাথে দুই ক্যানভাসেই আঁকা হচ্ছে। ভালো কথা সবার আগে একটা নতুন লেয়ার খুলে হালকা ডিস্যাচুরেটেদ রঙ ফিল করে নেয়া হয়েছে।
একটা ফ্ল্যাট ব্রাশ (সাধারণতঃ ডিফল্ট যে সব ব্রাশ দেয়া থাকে আমি সেগুলি-ই একটু ইদিক উদিক করে কাজ চালাই) নিয়ে ভ্যালু ড্রয়িং শুরু (এটাও আরেকটা লেয়ার খুলে নিয়ে)।

এবার আরেকটা লেয়ার (বিনা পয়সায় যেহেতু খোলা যাচ্ছে সেহেতু সব আলাদা কম্পোনেন্ট আলাদ আলাদা লেয়ারে রাখার একটা বদভ্যাস হয়ে গেছে। নিউ লেয়ার খোলার শর্টকাট হোল Ctrl+Shift+N)

এবারে যেই লেয়ার এ দালানকোঠার সিল্যুএট টা করেছিলাম সেটা সিলেক্টেড অবস্থায় Ctrl+L দিয়ে লেভেল স্লাইডার এনে মাঝের ভ্যাল্যু স্লাইডার ডান দিকে ঠেলেঠুলে পছন্দসই একটা জায়গায় জিনিসটা ডার্ক করে ছেড়ে দিলাম।

মূলতঃ পানি আর দালানকোঠা সহ সবকিছু এঁকেছি ওপরের লেয়ার এ, আর ব্যাকগ্রাউন্ডটা একেবারে প্রথম যে লেয়ারটা খোলা হয়েছিলো সেখানেই আছে। এবারে সেই প্রথম বা একেবারে পেছনের লেয়ার এর রঙ এর চেয়ে আরেকটু হালকা একটা রঙ নিয়ে রেডিয়াল গ্রেডিয়েন্ট  টুল দিয়ে একটা আলোর ইফেক্ট মেরে নেয়া হল। অনেক ডার্ক কোন ফর্ম এর ঠিক পেছনেই এই কাজটা আমি করি, এতে করে সামনের ফর্মটা আরো ডার্কিশ হয়। সামনের পানিতেও একটু আলো ফেলা হল সেই গ্রেডিয়েন্ট টুল দিয়ে।

এবারে আবার একটা লেয়ার। এই লেয়ার এর কাজ হল শুধু বাতি গুলি আঁকা। নদীর তীর থেকে রাতের বেলা অসংখ্য বাতি দেখা যায়। নতুন লেয়ার এ আঁকার কারণ হল এখানে সবই আঁকা হবে একেবারে সাদা টোন এ, আর সেখানের আলো গ্লো করানর জন্যে ফটোশপে একটা দারুণ অপশনই দেয়া আছে সেটা দেখি-

সেটার নাম Outer Glow, শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ। লেয়ার এ ডাবল ক্লিক করে এবারে এই আউটার গ্লো এ ক্লিক করে ঠেলাঠেলি করলেই বোঝা যাবে এর কাজ। আমি সাধারণতঃ সব শেষ এর Opacity একটু কমিয়ে দেই, নয়ত আলোটা বেশী চোখে লাগে।

শেষে যা দাঁড়ালো তা মোটামুটি এই।
এখানে বেশ কিছু এডভান্সড টার্ম ব্যাবহার করেছি। কারণ ধরে নিচ্ছি এটা দিয়ে যারা উপকৃত হতে চাইছেন তারা ইতিমধ্যে এইসব টার্ম জানেন।
হ্যাপি ড্রয়িং :)


4 comments:

  1. জোস তোহ :D

    ReplyDelete
  2. দাদা, আমরাও প্রায় সময় সোয়ারী ঘুরতে ঘাট যাই, তবে আমরা এইপাড়ের বুড়িগঙ্গার ওয়াশপুর বাসিন্দারা আঁটিবাজার থেকে যাই সোয়ারীঘাটের ইঞ্জিনের নৌকা গুলোতে করে। মাঝে মাঝে বিকেল ৫টার পর আঁটিবাজার থেকে ইঞ্জিনের নৌকাগুলো ছাড়েনা, তখন খোলামোড়া থেকে ছোট লঞ্চ/সীট্রাক গুলোতে করে যাই। সন্ধার পর সোয়ারীঘাটের ছোট ছোট নৌকা গুলো জোনাকীর মতো জ্বলে থাকার দৃশ্য যে কখনো ভূলবার নয়,সেকথা বহুবার মনে এসেছে। তবে কখনো স্কেচবুক নিয়ে স্কেচ করা হয়না, মনে হয় যেন অন্ধকারের এই বিন্দু বিন্দু স্বর্গীয় আলোর দিকে চেয়ে থাকার মজা নেগেটিভ ভিউতে আঁকতে পারার চেয়ে সহজ............।।
    -হৃদয়

    ReplyDelete

চলছে ফরেন কমিকস