সব্যসাচী মিস্ত্রী (না উনি ইলেকটৃক বা কাঠ মিস্ত্রী না, বড়জোর রঙ মিস্ত্রী বলা যায়) 'র কাছে শিখবার একটা দারুণ আগ্রহ হয়েছিলো সেই ২০০৮ এ। উন্মাদের কার্টুন কোর্সে উনি একটা ক্লাস নিয়েছিলেন, তাতেই বুঝেছিলাম 'লোকটা জানে'। তাই যখন দেখলাম গ্রাফা থেকে কনসেপ্ট আর্ট এর ওপর একটা কোর্স হবে আর সেটা নেবেন সব্যদা তখন নিজের নতুন মাটির ব্যংকটা আবার ভাংলাম (কোর্সের ফি ৮০০০ টাকা, আমি এ পর্যন্ত ৮ টা মাটির ব্যাংক এভাবে ভেঙ্গেছি, যার প্রতিটাই কিনবার সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে এটা এক বছরের আগে ভাঙ্গা যাবে না।)। আব্বাকে যখন বললাম যে আমি একটা ড্রয়িং শেখার ক্লাসে ভর্তি হয়েছি, উনি কতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন
- তুই না পারস?
- আব্বা এরা ভালো।
-এরা কারা?
- ওই চারুকলার, ভালো আঁকে।
-বয়স কত?
-অনেক (বলা বাহুল্য সব্যদা থার্টির একটু এদিক ওদিক), প্রফেসররাও আছেন।
যাই হোক, অনেক কষ্টে ব্যপারটার যৌক্তিকতা আব্বা ও আম্মাকে বোঝানো হল যে আমি আসলেই আঁকতে জানি না আর এখানে গেলে আমার আঁকা ডেভেলপ করবে। অতঃপর ২৪ শে সেপ্টেম্বার ২০১০ থেকে শুরু হল আমাদের কোর্স, হপ্তায় দু'দিন- শুক্র, শনি। ক্লাস শেষ হবে এ মাসের ১৪ তারিখ। প্রথমে কোর্সের শিডিউল দেখে ভেবেছিলাম এই সময়ের মধ্যে এই কারিকুলাম শেষ করা সম্ভব না। কিন্তু এ পর্যন্ত যা বুঝলাম তা হল এই কোর্স ঠিক আঁকতে শেখাবার কোর্স না, এটা ভাবতে শেখাবার কোর্স। এবং আমি ভাবতে শিখছি। এই সময়ে নিজের স্টেরিওটাইপ হয়ে পড়া ড্রয়িং থেকে বের হবার জন্য এটা খুব জরুরি ছিলো।
ইচ্ছা আছে সবগুলি লেকচার সংক্ষেপে এখানে পোস্ট দেবার, এখন কোর্স থেকে কিছু ছবি ও কাজ পোস্ট দেই
সব্যদা, কম্পোজিশনকে বেসিক জিওমেট্রিতে দেখা...
টি-ব্রেক (সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাস)
সব্যদা, ওয়াকমে আকাম
জুবায়ের, থ্রি পয়েন্ট পার্সপেক্টিভ এর প্যাঁচ বোঝানো হচ্ছে
বিশ্রম্ভালাপ
'চরিত্র' নিয়ে কথা
কি আকছস?
এই মুহুর্তে চলছে ক্যারেক্টার ডিজাইন পার্ট। মোট পাঁচটা গ্রুপ করে প্রত্যেককে আলাদা গল্পের নাম দিয়ে বলা হয়েছে একটা গল্প বানাতে ও সেই সাথে ক্যরেক্টার ডেভেলপ করতে। আমার গ্রুপে পড়েছে 'দাদুর মশা নিধন অভিযান' অনেক ভাবনা চিন্তা করে মোটামুটি তিনটা কনকৃট আইডিয়া থেকে যেটা দাঁড়া করিয়েছি সেটা অনেকটা এরকম--
দাদু এক ক্ষেপাটে সংগ্রাহক, তাঁর সংগ্রহশালায় একদিন এক মশা ঢুকে পড়ে তাকে বিরক্ত করতে থাকে। বারবার সেটাকে তাড়াতে ব্যর্থ হয়ে দাদু এবার সেটাকে বিরাট এক থাবড়া মারতে গেলে সেটা তার নিজের নাকেই লাগে আর সেই ফাঁকে পড়ে যায় তার চশঅমা। এই চশমা ছাড়া দাদু কিছুই দেখতে পান না। রেগেমেগে সেই চশমা খুঁজতে গিয়ে দাদুর হাত ঠেকে তাঁর সংরহশালার এক উৎকট দর্শন বন্দুকে, সেটা টেনে নিয়ে তিত্নি এলোপাতাড়িভাবে মশাটাকে মারতে চেষ্টা করেন। দেখা যাবে তাতে মশাটা সাময়িকভাবে আহত হয় ঠিকি কিন্তু একটু পপ্রেই আবার উঠ বসে। দাদু ওদিকে তার চশমা খুঁজে যাচ্ছেন। এদিকে মশাটা দেখা যাবে ওই কিম্ভুত বন্দুকের আরক গুলির প্রভাবে একট থেকে দু'টো হয়ে যাবে, তারপর আবার দাদুকে এটাক করবে, এবার দাদু আবার সেই বন্দুক দিয়ে সেটাকে মারতে যেতেই মশাগুলো এবার নিজেদের ডুপ্লিকেট করতে ক্রতে পুরো রুম ছেয়ে ফেলবে। একসময় আকাশ বাতাশ কালো করে খালি মশা দেখা যাবে। দাদুর ল্যাববাড়ির বাইরে থেকে দেখা যাবে ওপরে মশার বিরাট কুণ্ডলি। (বাইরে সন্ধ্যা হচ্ছে)সেটা একসময় একটা বিরাট হাতের রুপ নেবে-- ভেতর থেকে তখোনো দাদুর চেঁচামেচি আর গোলাগুলি শব্দ পাওয়া যাবে। হাতটা এবার গোটা বাড়িটাকে মুঠোয় নেবে-- সেইসাথে তার শরীর তৈরি হবে। বিরাট এক মশক দানব হয়ে সে গোটা বাড়িটা টপ করে গিলে ফেলবে। সেকটু পর একটা সশব্দ ঢেকুড় তুল্বার পর সেই চশমাটা এসে মাটিতে পড়বে।
সেটার কিছু রাফ ডুডলিং দিয়ে দিলাম,
দাদু, পিঠে ছাতা এন্টেনা
দাদুর ল্যাব
দাদুর 'চরিত্র'খসড়া- ০১
দাদুর 'চরিত্র'খসড়া- ০২
দাদুঃ প্রথম খসড়া
দাদুর ল্যাব বাড়ী (তেজগাঁয়ের এক ভাঙ্গা ফ্যক্টরি দেখে করা)
দাদুর ল্যাব বাড়ী, আরো পলিশড
এরপর আরো ডিটেইলে গোটা গল্পটাই পোস্ট দিয়ে দিচ্ছি...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
হ্যাংওভার কাটিয়ে
একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...
-
আইডিয়া পাওয়া বা ক্রিয়েটিভ কাজ ইত্যাদিকে এখনো আমাদের সমাজে একটা অলৌকিক প্রতিভা হিসেবে ভাবা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সত্যও বটে। ত...
-
দীর্ঘ দশ মাস পর ২০১৮ সালের বিজ্ঞান বিভাগের নবম-দশম শ্রেণির ৫ টা (গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান) ও আর্টস ও কমার্স বি...
-
এইবার আমরা হুইলের আসল কাজটা দেখি। মানে রঙ করার সময় এটা আসলে কি কাজে লাগে। একটা ছবি রঙ করার সময় আসলে মূল যে ব্যপারটা মাথায় আগে আনতে হবে সেটা ...
মারমার কাটকাট!
ReplyDeleteহে মহা "সাংঘাতিক্স"।বড়ই কৌতুহল হইতেছে।আরও কিছু দেখান
ReplyDeleteKhub moja pelam apnar lekha pore. Dadur lab ghor ta amar boroi pochondo hoyeche! Chaliye jan. Workshop-e dekha hobe.
ReplyDelete