December 23, 2016

MZI


রুহান রুহান কমিক্স এর মূল ক্যারেক্টার এর চুলের স্টাইল আসলে জাফর ইকবাল স্যার এর থেকে ইন্সপায়ার্ড, আজ স্যার এর ৬৪ তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে আঁকা।

December 14, 2016

তাগড়া

ঠিক দশ বছর আগের কথা, সেন্টার ফর লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ থেকে আমার বস আহসান হাবীব কে ডেকে পাঠালো, তারা মুক্তিযুদ্ধের কমিক্স সিরিজ করবে। আমিও মহা উত্তেজিত হয়ে তাঁদের মিটিং এ গেলাম বসের ডাকে। প্ল্যানটা দারুণ, তাঁদের অর্থায়নে একের পর এক কমিক্স হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। প্রথম গল্প হিসেবে সিলেক্ট করা হল মেজর (অবঃ) কামরুল ইসলাম এর একটা বইয়ের একটা ছোট গল্প , সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা সেই গল্প নিয়েই আমার প্রথম কমিক্স এর কাজ শুরু (এর আগে যদ্দূর মনে পড়ে কোন কমিক্স ছাপা হয় নি)। ড্রাফটিং পেন আর জল রঙ এ হাতে এঁকে ১৫ কি ২০ দিনের মাথায় কাজ জমা দিলাম। সেটা ছাপাও হল। কিন্তু কী এক আশ্চর্য কারণে সেই বই কখনো মার্কেট এ এলো না। বরং পরের বইমেলায় অবাক হয়ে দেখলাম সেই একই গল্প নিয়ে গ্রামীণ ফোনের অর্থায়নে বিরাট ঘটা করে আরেকটা কমিক্স বের হয়েছে, এবং এখানে উদ্যোগ নিয়েছে সেই একই সেন্টার ফর লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ। আমি কিছুই বুঝলাম না, আহসান ভাইও বোঝেন নি। আমরা আসলে আর বোঝার চেষ্টাও করিনি। কর্পোরেট আর স্পন্সরের কোন এক মারপ্যাঁচ এ পড়েছিলাম আমরা অতি সরল কার্টুনিস্ট গোষ্ঠী। সে যাক গে। অনেক দিন পর সেই কমিক্স এর একটা কপি খুঁজে পেতে মনে হল অন্তত এখানে শেয়ার দিয়ে রাখি। কিছু মানুষ অন্তত দেখুক।
ভাল কথা সেই কমিক্স প্রজেক্ট ওখানেই থেমে গিয়েছিল। আমরাও আর যোগাযোগ করিনি।
















December 09, 2016

২০১৬

এ বছর দারুণ গেল। বলতে গেলে তেমন কোন কাজই করিনি। গত বছর এমন অসম্ভব কাজের চাপ এ ছিলাম যে সব কাজ শেষ করে প্রতিজ্ঞা করেছি পরের বছর রেস্ট। আর আগের বছর অন্তত তিনটা বইয়ের কাজ করেছিলাম যেটা শেষ মুহূর্তে বের হয় নি, মানে সেটা এই বছর হবে। তার মানে কিছু না করেও তিনটা বই নেমে যাচ্ছে।

এবারে ইয়ার ইন রিভিউ টাইপ এই পোস্ট টা দেয়া যাক,

১. এক গাদা বই পড়েছি।

২. মুভি দেখেছি প্রায় প্রতিদিন। এ বছর সিরিজ আর সিজন ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি।

৩. দুইটা দেশ ঘুরেছি, মালদ্বীপ আর শ্রীলংকা, অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ট্রাভেল গাইড ছিল নাসরীন সুলতানা।

আমি আর মিতু, প্রথম সেলফি, সেলফি যে আসলে মিরর ওঠে এটা সেদিন জেনেছি।

মালদ্বীপ এর হুরা আইল্যান্ড এ স্নরকেলিং।

শ্রীলংকার মিহিন তালে তে।


শ্রীলংকার উইলপাটু রিজার্ভ ফরেস্ট এ ক্যাম্পিং।

৪. আঁকিনি বলা যাবে না। এঁকেছি প্রচুর, কিন্তু কোনটাই সেই অর্থে ক্লায়েন্ট এর কাজ না, মানে টাকা কামাইং কাজ না। নিউ এইজ এ পলিটিক্যাল কার্টুন অনেক কমে গেছে এই বছর। সেটা আমার কারণে না। গোটা দেশেই রাজনৈতিক প্রতিবাদ এর খরা চলছে। একটা চাপা ভয় সবাইকে আটকে রেখেছ বেশ অনেক দিন থেকে। তারপরেও সব বড় ঘটনায়ই এঁকেছি। সংখ্যায় কম, এই যা।

৫. ব্লগ এ এন্ট্রি কমে যাবার একটা বড় কারণ হল এই বছর বেশীরভাগ পোস্ট পড়েছে ফেইসবুক পেইজ এ। এখন থেকে ভাবছি যা-ই পোস্ট করব মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্ট আগে ব্লগ এ তুলে সেটার লিংক পেইজ এ দেয়া হবে।

৫. মাঝে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কমিক আর্ট এর সম্পাদক জন এ লেন্ট এসেছিলেন। এই কিংবদন্তিতূল্য মানুষটার সাথে দেখা হওয়াও একটা ভাগ্যের ব্যাপার। যে ক'দিন তিনি ছিলেন তাঁকে নিয়ে সব কার্টুনিস্টদের কাছে গিয়েছি। তাঁর একটা সাক্ষাৎকার ও নিয়েছি উন্মাদ এর জন্যে।

ঢাকা কমিক্স এর আপডেট

৬. ঢাকা কমিক্স এ অনেক সময় দিয়েছি। ব্যবসা সম্পূর্ন আলাদা কাজ, এটা অনেকটা গেম খেলার মত। খুবই জটিল গেম। তিন বছর এ ঢাকা কমিক্স মোটামুটি একটা ভাল জায়গায় পৌঁছেছে। এই বছর এর সব থেকে বড় অর্জন হল আমাদের কমিক্স ভারতের পশ্চিমবঙ্গে- মূলতঃ কলকাতায় জায়গা করে নিয়েছে! শ্রীমান শান্তনু ঘোষ এর কল্যাণে ও হাসান খুরশীদ রুমী ভাইয়ের মধ্যস্থতায় ব্যাপারটা সম্ভব হয়েছে।

৭. ঢাকা কমিক্স এর নিজস্ব একটা অফিস নেয়া হয়েছে। একেবারেই ছোটখাটো, তবে কাজ করার জন্যে যথেষ্ট। সেখানে আমি আর কার্টুনিস্ট আসিফ প্রতিদিন রুটিন করে কমিক্স আঁকছি। এটা একটা গোডাউন আর শো রুম এর মত ও কাজ করছে।

ঢাকা কমিক্স স্টুডিও

৮. রুহান রুহান এর তৃতীয় পর্বের প্রায় ৬০ পৃষ্ঠা এঁকে শেষ করেছি। মোট ২২০ পৃষ্ঠার কমিক্স। এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। এটা নিয়েই আলাদা একটা পোস্ট দেব যেদিন শেষ হবে।
৬০ পেইজ থেকে কিছু স্যাম্পল। বড় করে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন




৯. ঢাকা কমিক্স এর একজন অফিস এসিস্ট্যান্ট রাখা হয়েছে। তাকে নিয়ে বই লিখে ফেলা যাবে। ফোন না ধরার ও সময় মত কাজ না করার যেই সব অদ্ভূত কারণ সে বলে তা দেখে আমরা ভাবছি ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর ডিপার্টমেন্ট এ তাকে নিয়ে নেয়া যাবে। শেষ আপডেট হল অফিসের ওয়াই ফাই পাসওয়ার্ড তাকে দেয়া হচ্ছে না বলে সে অফিসে আসার আগ্রহ পাচ্ছে না।

১০. এর আগে এটা ব্লগে বলেছি তাও আবার না বললেই না। এ বছর ঢাকা কমিক্স কাজী আনোয়ার হোসেন এর সাথে একটা কমিক্স নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে! তাঁর পঞ্চ রোমাঞ্চ অবলম্বনে আমরা ৫ জন মিলে ১৫০ পৃষ্ঠার কমিক্স নামাচ্ছি একটা!


কাজীদা'র সাথে!
১১. সব শেষে সবথেকে বড় সংবাদ। ঢাকা কমিক্স এর কাজ ও ব্যাক্তিগত কমিক্স এর কাজ বিবেচনায় আমি এ বছর নারায়ণ দেবনাথ কমিক্স পুরস্কার পেতে যাচ্ছি! পুরস্কার তুলে দেবেন 'না' স্বয়ং! এটা একেবারে পরাবাস্তব অনুভূতি। একটা বড় ভূমিকা ছিল শান্তনু ঘোষ এর।
নারায়ণ দেবনাথ ঘোষোণা লিখছেন!

তাঁর লেখা!
বছর এখনো শেষ হয়নি, তাও মনে হচ্ছে প্রেশার না নিয়েও ধীরে সুস্থে খারাপ গেলো না তো। আশা করি সামনের দিকে আরো ভাল যাবে। দেখা যাক।




October 24, 2016

আয়নাবাজী প্রচ্ছদ


উন্মাদ এর পরের সংখ্যার জন্যে করা প্রচ্ছদ। অমিতাভ রেজা বিজ্ঞাপন চক্রের থেকে বের হয়ে একটা সিনেমা শেষ মেশ শেষ করতে পেরেছেন সেজন্যে তাঁকে সাধুবাদ। এই দুষ্ট চক্রে কত সম্ভাবনা যে শেষ হয়ে গেল। 
আহসান ভাই দেখে এসে বললেন, ভালো হইসে, দেইখো- আর তার পরেই এটা নিয়ে একটা প্রচ্ছদ করা যায় কি না জিজ্ঞেস করলেন। আওয়ামী লীগ এর কাউন্সিল, রামপাল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একাধিক কার্টুন 'বিশেষ কারণ' এ ছাপা না হওয়ায় সেই ফাঁকতাল এ অন্য সব কাজ এগোচ্ছি। পলিটিক্যাল কার্টুনের জন্যে বাজে দিন যাচ্ছে, জন এ. লেন্ট ক'দিন আগে বলে গেলেন 
সেলফ সেন্সর ইজ দ্যা ওয়ার্স কাইন্ড অফ সেন্সরশিপ।
কথা সত্য। কোন একদিন আমার অপ্রকাশিত কার্টূন সমগ্র বের হবে আশা করি।


October 16, 2016

ড. লেন্ট

ড.লেন্ট এর সাথে ১৩/১০/১৬
পৃথিবী বিখ্যাত কার্টুন ও কমিক্স বিশেষজ্ঞ INTERNATIONAL JOURNAL OF COMIC ART এর সম্পাদক ডঃ জন এ লেন্ট এখন বাংলাদেশে।উনি এর আগে ১৯৯৩ সালে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় তিনি উন্মাদ অফিসে এসেছিলেন, আহসান হাবীব ভাই কর্তৃক ওনার একটা সাক্ষাতকার ও উন্মাদ এ ছাপা হয়। অশীতিপর এই ভদ্রলোক সারা দুনিয়ার কমিক্স ও কার্টুন নিয়ে আঁকলেও তাঁর মূল আগ্রহ এশিয়ার ওপর। তাঁর কিছু বইয়ের নাম দেয়া যাক-

  • Asina comics (2015)
  • The Asian Film Industry
  • Comic Art in Africa, Asia, Australia, and Latin America Through 2000: An International Bibliography
  • Women and Mass Communications: An International Annotated Bibliography
  • Bibliography of Cuban Mass Communications
  • Cartooning in Africa
  • Comic Art of the United States Through 2000, Animation and Cartoons

এমন মোট ৫৫ টা বই, আর সেই সাথে শতাধিক আর্টিকেল। কার্টুন কমিক্স এর দুনিয়ায় হিস্টরি লেখার ক্ষেত্রে মোটামুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (দাড়িগোঁফ এও মিল আছে)।

এই দিকপাল এর সাথে আমার প্রথম যোগাযোগ হয় ইমেইল এ, কোন এক কার্টুন সাইট ঘাঁটতে গিয়ে দেখি সেখানে ''ASIAN COMICS'' নামের একটা বই বের হচ্ছে। সেটার সূচীতে গিয়ে খুঁজে দেখি বাংলাদেশ নাই! আমার মন খারাপ হল, ভদ্রলোক বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন, অন্তত দেশটার নাম থাকা উচিত ছিল। আমি মোটামুটি অভিমান ভরা একটা মেইল করে দিলাম যে বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ান কমিক্স করাটা ঠিক হয় নি। পরদিনই মেইল এর জবাব এল। (সেটা নিয়ে আগে এখানে বলেছিলাম)। আসলে বইটায় একটা চ্যাপ্টার ঠিকই ছিল ছোট করে। আর তিনি আরো জানালেন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যদি আমি লিখতে চাই সেটা বরং বেশী কাজের হবে, এর আগে নাকি একাদিক ব্যক্তিকে উনি বলেছিলেন তাঁর IJOCA তে লিখতে, কিন্তু কেউ লেখা দেয় নি। উলটা ধরা খেয়ে এবার লেখা শুরু করলাম, বাংলাদেশের কার্টুন আর উন্মাদ মিলিয়ে একটা একাডেমিক টাইপ আর্টিকেল। সেটার ইংরেজী ও ভাষা ঠিকঠাক করেদ দিলেন প্রথমে আমার বড়ো দুলাভাই, আরেক আমেরিকান ডঃ মাশুক সালেহীন, এর পরে নিউ এইজ এর ডেপুটি এডিটর ওয়ান এন্ড অনলি আক্কাস ভাই। লেন্ট আমার আর্টিকেল পেয়ে মুগ্ধ, এত ভাল ইংরেজী। আমি বললাম- হেহে ওই আর কি। যাই হোক সেই আর্টিকেল ছাপাও হল, এবং কার্টুনিস্ট আসিফ কিছুদিন আগে নীলক্ষেতের চিপা থেকে তার একটা কপিও জোগাড় করে উন্মাদ এ দিয়ে গেল।

এর প্রায় এক বছর পর লেন্ট মেইল দিলেন- উনি বাংলাদেশে আসবেন, দিন তারিখ ঠিক নেই, তবে এলে উনি এখানের রাজনৈতিক কার্টুন আঁকিয়েদের ইন্টারভিউ করবেন।এশিয়ার পলিটিক্যাল কার্টুনিস্ট দের নিয়ে তিনি একটা বই লিখবেন। আসলে আমি যেন কার্টুনিস্ট দের ঠিকানা জোগাড়যন্ত্র করে দেই। ততদিনে তিনি গুগল টুগল করে আমার কাজকর্ম নিয়ে মোটামুটি জেনে গেছেন। আমি একপায়ে খাড়া। এই মানুষটার সাথে দেখা হওয়া একটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যপার। 

অবশেষে ডঃ লেন্ট এখন ঢাকায়। তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়ে মোটামুটি সারপ্রাইজড হলাম, কারণ তিনি আমার জন্যে তাঁর লেখা এশিয়ান কমিক্স, IJOCA এর আমার লেখা সহ কপিটা আর সেইসাথে মালয়শিয়ান কিংবদন্তী কার্টুনিস্ট ZUNAR স্বাক্ষরিত তাঁর কার্টুন সংকলন বইটা নিয়ে এসেছেন। এশিয়ান কমিক্স এর পাতায় আমার উদ্দেশ্যে লিখে দেয়া কথাগুলি এখানে তুলে দেবার লোভ সামলানো গেলো না।
:) হ্যাপি কার্টুন।
আমার গিফট :D ফ্রম জন এ লেন্ট
জুনার এর সাইন করা বই !
1993 সালের র'নবী স্যার

এশিয়ান কমিক্স বই এ বাংলাদেশ চ্যাপ্টার

এশিয়ান কমিক্স এর উৎসর্গ পাতা

উন্মাদ :)
:) শেষ চমক এশিয়ান কমিক্স এর মধ্যে ঢাকা কমিক্স






August 09, 2016

কাজীদা'র গল্প আঁকি :D

জীবনের দারুণ একটা অর্জন হল কমিক্স আঁকার সুবাদে কাজী আনোয়ার হোসেনের সাথে দেখা হওয়া এবং তাঁর একটা গল্প আঁকতে পারা। ঢাকা কমিক্স থেকে বের হতে যাচ্ছে তাঁর বিখ্যাত এডাপ্টেশন ভিত্তিক গল্প সংকলন পঞ্চ রোমাঞ্চ নিয়ে গ্রাফিক নভেল। মোটামুটি সবাই এঁকে ফেলেছে, এদিকে আমি ব্যবসার কাজে বেশী জড়িয়ে যাওয়াতে পিছিয়ে আছি। শাহরিয়ার (খান) ভাই আমাকে অনেক আগেই এটা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন, সম্প্রতি ব্যাপারটা নিয়ে আবার বল্ল কার্টুনিস্ট মিতু। সম্ভবত আমাকে ঢাকা কমিক্স চালানোর জন্যে এবারে কাউকে নিতে হবে :/ 




চুক্তি

এর পর মিষ্টিমুখ ও ফুলেল শুভেচ্ছা। যদিও কাজীদা' মিষ্টি খান না।
আমরা উত্তেজিত।'পঞ্চ রোমাঞ্চ' ভাল ভাবে করা গেলে চাই কি পরে কোন না কোন রানা'ও করা যেতে পারে। তবে কথা হল, ভিজ্যুয়াল করা হইয়নি এমন চরিত্র হঠাৎ আঁকতে গেলে সবার মন রক্ষা হয় না।
দেখা যাক কী হয় :)



August 07, 2016

উন্মাদ জল রঙ প্রচ্ছদ

অনেকদিন পর জল রঙ এ ও হাতে কলমে উন্মাদ এর প্রচ্ছদ করলাম। এবারে ঈদের নাটক দেখে ভিরমি খেয়ে ক'দিন পর খাতা পেন্সিল এ একটা ড্রাফট করি, নীচে প্রথম ড্রাফট (সঙ্গত কারণেই এই ড্রাফট এর একটি খুবই যৌক্তিক অংশের ট্রান্সপারেন্সি পরে বাদ দেয়া হয়)। যাই হোক, ধাপগুলি ক্যাপশন এ বলে যাই-
এটা হল একেবারেই রাফ পেন্সিল, তবে হ্যাঁ সত্যি কথা হল এই রাফ এর আগে প্রায়
সবারই চেহারা আলাদা করে খাতায় স্টাডি করে করে একটা পর্যায়ে বুঝে নেয়া হয়েছিল

এবারে সেই রাফ পেইজ এর ওপর আরেকটা সাদা কাগজ (এখানে সেই একই খাতার আরেকটা কার্টৃজ) রেখে পেন্সিল এ আবার ক্লিন করে সবটা আঁকা হল এই ধাপটা যতটা হাল্কা করে আঁকা যায় পরের জলরং এর ক্ষেত্রে ততই ভাল। লাইট ট্রেস করার জন্যে আমি আমার উইন্ডোজ সার্ফেস টা ব্যবহার করেছি। সেই অর্থে এটাকে ডিজিটাল জল রঙ বলা যেতে পারে ;প

ইংকিং- কোন স্পেশাল প্পেন না, এটা ৫ টাকা দামের ম্যাটাডোর কালো কলম। যে কোন চায়ের দোকানেও পাবেন।
আমি আসলে ড্রয়িং শিখেছি ইকোনো ডি এক্স দিয়ে তাই কমদামী বলপেন আমার সবসময়ই পছন্দের।

ইঙ্কিং শেষ। খেয়াল করার আছে যে সব ক্যারেক্টার এর চারদিকের লাইনটা আমি আরেকটু মোটা করে ডাবল লাইন করে করে এঁকেছি।
এতে বড় দুটো ফর্ম- মানে অভিনেতাদের দলাটা আর পরিচালকের ফিগার আলাদা করে 'রিডেবল' হল।
এবারে জল রঙ। আমার হারাতে বসা প্লাস্টিক প্যালেট, আর রান্নাঘর থেকে একটা স্টিলের বাটি। ভাল কথা জল রঙ যে কম্পানীর ই কিনবেন খেয়াল রাখুন সেটা 'আরটিস্ট সিরিজ' লেখা আছে কি না। স্টুডেন্ট সিরিজ একেবারেই নতুন শেখার জন্যে। তবে আমার মতে আর্টিস্ট টা কেনাই ভাল।

রঙের ক্ষেত্রে আমি যেটা করি সেটা হল 
১.ছবির ওপরের বাম কোণা থেকে আঁকা শুরু করি, এতে করে হাতে লেগে কোন জায়গার রঙ নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে না।
২. যেটার রঙ অবভিয়াস, যেমন গায়ের রঙ আমি বার্ন্ট সিয়েনা, বা হলুদ দেবই। সেটা আগে করা। 

মোটামুটি ভাবে শেষ করা। অনেকদিন পর করায় যেটা হল, রঙ মাখিয়ে গেছে অনেক জায়গায়,
আর রঙ করার আগে কেমন দ্বিধা লাগছিলো কোন রঙ কোথায় দেব সেটা।


ঠিক করেছি আরো কিছু কাজ আবার জল রঙ এ করব।






May 29, 2016

মেছো ভূত

ইদানীং নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই বারবার ধরা খাচ্ছি, আঁকান্তিস নামে যে গ্রুপটা খুলেছিলাম সেখানে সপ্তাহান্তে একটা কিছু কন্টেস্ট ডাকি (নিজেই)। তারপর সেটার ডেডলাইন নিয়ে মাথা নষ্ট (আসলে এই বছর ঢাকা কমিক্স ছাড়া আর কোন কাজ করবো না পণ করে এখন দেখা যাচ্ছে ঢাকা কমিক্স ও করি না, ক্লায়েন্ট এর কাজ ও নেই না)। যাই হোক এবারের পাতা ফাঁদ এর নাম মেছো ভূত। মানে যে যেভাবে পারে মেছো ভূত আঁকবে। পোস্ট দেবার পর প্রথমে আবিষ্কার হল অনেকেই এটা কী জিনিস সেটা বুঝতে পারছে না! কী ভয়ানক। আমার তখন মনে হল সে ক্ষেত্রে এটা বেশ উচিত কাজই হচ্ছে, বিদেশী ক্রিয়েচার আঁকার সাথে নিজেদের জিনিসপাতিও আঁকতে হবে, আর এটা একটা প্র্যাকটিসও বটে। চ্যালেঞ্জটায় আমি নিজে সবচেয়ে ভালো করে এঁকে সবচেয়ে বেশী 'লাইক' কামাবার বদলে যেটা করতে চাইলাম সেটা হল কিভাবে আসলে ক্যারেক্টার ডিজাইন করে সেটা শেখার চেষ্টা, সেটা সবার সাথে ভাগ করে নেবার জন্যেই এই পোস্ট। ক্যারেক্টার ডিজাইনের ক্ষেত্রে যা যা পেশাদার আঁকিয়েরা করে নেট ঘেঁটেঘুটে তার যা বুঝলাম তার সাথে নিজের বুদ্ধি মিলিয়ে ধাপ গুলি যা দাঁড়ালো তা এই-

১. রেফারেন্স জোগাড়-
ছবি এবং লেখা, যত সম্ভব। এখন গুগলের যুগে এটা না পাবার কোন অজুহাতই দেবার উপায় নেই। যা আঁকতে হহবে সেটা হুট করে প্রথমেই না এঁকে যত সম্ভব মানুষ ইতিমধ্যেই সেটা কিভাবে ভাবে বা দেখে সেটা দেখতে হবে, ছবি নামাতে হবে, এবং অবশ্যই সেটা সম্পর্কে জানার জন্যে পড়ে ফেলতে হবে। ধরা যাক আঁকব একটা স্পেশ শিপ। তাহলে প্রথমেই এই ধরনের যত রকম ছবি আমার ভালো লাগে সেটা নামিয়ে দখতে হবে, আর সেটা মুগ্ধ হয়ে দেখা না, দেখতে হবে খুঁটিয়ে, একেবারে জহুরী চোখে, এর ডানা কেমন, কেন এমন, এরোডিনামিক্স কি আসলে স্পেস এ কাজ করে কি না যেখানে বাতাস নেই, কী কী জিনিস স্পেশশিপ এ অবশ্যি থাকতে হয়। কন্সেপ্ট এর অংশটা কিন্তু আমি মনে করি পরে, কারণ আমার ক্ষেত্রে ফাংশন মানে কী কী জিনিস কেন লাগে সেটা দেখলে পরে কনসেপ্ট আসে। যেমন এই ভূতের ক্ষেত্রে আমি প্রথমে জোগাড় করলাম আমাদের এইদিকের আঁকিয়েরা কি কী এঁকেছে সেই আদিকাল থেকে সেগুলি-



১৯০৯ সালের আঁকা (!) শাঁকচুন্নী। 

প্রাচ্যে ভূত যেভাবে দেখা যায় 

নন্টে ফন্টে থেকে এডাপ্টেশন

নন্টে ফন্টে থেকে আবার

ঠাকুরমার ঝুলি থেকে
আর ভূত নিয়ে পড়তে গিয়ে ক'দিন মোটামুটি আছন্ন হয়ে আছি। উতসাহীরা অন্তত নীচের উইকিপিডিয়ার বেসিক লিংকটা ঘুরে আসতে পারেন

https://en.wikipedia.org/wiki/Ghosts_in_Bengali_culture

আরো জ্ঞানান্বেষীদের জন্যে :D 

বৈদিক সাহিত্যে ভূত
http://www.mahavidya.ca/wp-content/uploads/2008/06/sawatsky-jerrah-demons-yes.pdf

ডাকিনী যোগিনী নিয়ে তূলনামূলক ডেমনোলজি নিয়ে আলোচনা (খবর আছে)
http://www.uky.edu/Centers/Asia/SECAAS/Seras/2013/2WhiteAdventures.pdf

মূল প্রসংগ ছিলো মেছো ভূত, দেখা যাক আমাদের উইকি পিডিয়ার আর্টিকেল সেটা নিয়ে কী বলে,
Mechho Bhoot: This is a kind of ghost who likes to eat fish. The word Mechho comes from Machh that means 'fish' in Bengali. Mechho Bhoot usually lives near to the village ponds or lakes which are full of fish. These kinds of ghosts urges the late night fishermen or a lone person who carries fish with him to give them their fish by saying in a nasal tone - "Machh Diye Ja" (meaning "give me the fish"). If the person disagrees to leave the fish for the Mechho Bhoot, it threatens to harm them. Sometimes they steal fish from kitchens in village households or from the boats of fishermen.
মানে মোটামুটি নির্দোষ ভূত, আর অন্যদিকে যেটা টের পেলাম আঁকিয়েরা প্রায় সময়েই আমাদের ভূতকে এঁকেছে বায়বীয় করে, আসলে ভূত সম্ভবত এভাবেই 'ক্রিয়েচার' থেকে আলাদা, সে বায়বীয়, এই আছে এই নেই, দেহ তাই সম্পূর্ন না, আসলে হ্যালুসিনেশন এ দেখা কোন কিছু সম্পূর্ন না হবারই কথা। যাই হোক এবারে পরের ধাপ এ আসি, পড়াশোনা অনেক হল।

২. সিলুয়েট ভাবনা
দুনিয়া সেরা ক্যারেক্টার ডিজাইনার রা বলেন অন্তত ১০০ টা সিলুয়েট থাম্বনেইল করতে। আগে জেনে নেই এটা কী জিনিস, সিলুয়েট মানে খালি অবয়বটা, অর্থাৎ নাক মুখ চোখ কান না, খালি আউটলাইন এ আঁকলে একটা জিনিস যেমন দেখতে, বা আরো সহজে বললে কোন জিনিসের ছায়া যেভাবে পরে, শুধু কালো অবয়ব, উদাহরণ-
সিলুয়েট, খালি কালো করে অবয়বটা আঁকা, কিন্তু তাতেই বোঝা যাচ্ছে চরিত্রটা কী বা কে, এমন কি কোন যুগের তা-ও।
এবারে যেই ক্যারেক্টার ডিজাইন করতে যাচ্ছি সেটারই বেশ কিছু যা মাথায় আসে তাই সিলুয়েট আঁকতে হবে।  যা মাথায় আসে বলা হল ঠিকই কিন্তু সেটা এই যে এতক্ষণ পড়াশোনা করলাম আর আগের রেফারেন্স দেখলাম তার সাথে মিলতে হবে। যেমন আমি জানি মেছো ভূত পুকুরের পাড় এ স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় থাকে তাহলে তার গা নিশ্চই একটু ভেজা ভেজা শ্যাওলা পড়া হতে পারে? লুকিয়ে থাকা লাজুক ভূত, তাহলে সে হয়ত ক্যামোফ্লেজ হয়ে থাকে। এই ভাবনা গুলি কিন্তু তার থাকার জায়গা বা ধরন পড়ে নিয়েছি বলেই সহজ হচ্ছে, আমরা আমাদের কাজে যাবার আগে কিছু সিলুয়েট প্র্যাকটিস দেখে নেই, 



এবারে মেছো ভূত এর কিছু সম্ভাব্য সিলুয়েট (অবশ্যই ১০০ টা না!)

ব্যাপারটা সহজ না, তবে যেহেতু আমি আগে থেকে ঘেঁটে দেখেছি যে ভূত আঁকতে গেলে এদিকের আঁকিয়েরা যেটা করেন সেটা হল, পেট মোটা, হাত পা সরু, কান কুলোর মতও (দাঁত মূলোর মত) তাই সেগুলি মাথায় রেখে কিছু সিলুয়েট করা। শেষের সারি অনেকটা ক্রিয়েচার ধরনের হয়ে গেছে। সব আঁকার পর দূর থেকে দেখে আমার ওপরের বাঁ তেকে ৫ নম্বর টা পছন্দ হল।
এবারে একটা ছোট্ট টিপ। এটা বেসিক এনিমেশন কোর্স করার সময় ড্রিমার ডনকির অপু ভাই আর তওফিক ভাই, আশীষ ভাইয়েয়া দেখিয়েছিলেন। একই ক্যরেক্টার এর একেকবার একেকটা পার্ট ছোট বড় চ্যাপ্টা সরু ইত্যাদি করে করে দেখা কোন অনুপাতটা ভাল লাগে। আমার মনে হয় বাঁ থেকে তিন নাম্বারটার অনুপাত মজার।

এবারে সেই সিলুয়েট ধরে একটা বাচ্চা ভূত এর ডিজাইন শুরু, এবারে কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটাই কন্ট্রোল এ। এটা সবচেয়ে ভাল ক্যারেক্টার না, কিন্তু এটা আমি জানি কি জন্যে এভাবে করা।

৩. ক্যারেক্টার এর ৫ টি প্রশ্ন
এখন কিন্তু কাজ মোটে শুরু। শুরু থেকেই মনে এই পাঁচটা প্রশ্ন থাকতে হয় এখন এসে সেটাকে আরেকটু পরিষ্কার করার পালা, যে প্রশ্নগুলি ক্যারেক্টার কে করতে হবে,

১. সে কী করে
২. সে কী চায়
৩. সে কোথায় থাকে
৪. তার জগত টা কী নিয়ে
৫. তার সীমাবদ্ধতা কী

এই প্রশ্নগুলির উত্তর জনা থাকলে একটা ক্যারেক্টার নিয়ে অনেকদূর এগোনো যায়। মেছোভূতের এই প্রশ্নের উত্তর দেই

১. সে কী করেঃ 
সে মাছ খায়, বাজার থেকে মাছ কিনে বাড়ি ফিরতে গেলে অনেক কে পেছন থেকে ডাক দেয়,
'মাঁছ দিঁয়ে যাঁ'

২. সে কী চায়ঃ 
মাছ খেতে :) , আসলে শুধু খাওয়াটা কারো একমাত্র চাওয়া না, আমরা এখানে কিছুটা কল্পনা শক্তি খাটাই। হয়ত একটা মছ ভূত পরিবার, চারদিক খাল বিল ভরাট হতে হতে তাদের আর মাছ খাবার জায়গা নেই, হাঁটূরে দের থেকে যাও চেয়ে চিনতে পাচ্ছে তাতে ফর্মালিন, এখন এই ভূত সমাজকে টিকিয়ে রাখতে জোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। প্রথম আন্দোলন- নদী বাঁচাও। তাহলে আমরা এই আইডিয়া থেকে আরো অনেক পার্শ্ব চরিত্র আনতে পারব- নদী দখল কারী দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ডেভেলপার, সাধারণ মানুষ। তখন গল্পপ বলাও সহজ হবে।

৩. সে কোথায় থাকেঃ
গ্রাম বাংলার জলা জায়গায়, পুকুর, খাল, বিলের পাড়ে, যেখানে জলজ গাছপালা ঘণ। এর থেকে আমরা তার গায়ের রঙ, টেক্সচার ভাবতে পারি। এমনিতে এই এলাকার প্রাণির দেখতে ক্যামন, তাদের ক্যামোফ্লাজ কেমন সেটার রেফারেন্স দেখে নিতে পারি, ক্যারেক্টারের কালার আর টেক্সচার করতে এটা বেশ কাজের।

৪. তার জগত টা কী নিয়েঃ
মাছ, নদী খাল, বিল, হাঁটুরে, গাছ, পরিবার

৫. তার সীমাবদ্ধতা কীঃ
সে লাজুক, দিনের এলা সামনে আসতে পারে না। আর যারা বিশ্বাস করে না তাদের সে দেখা দিতে পারে না। ঠান্ডার সময় তাদের গলায় নাকি সুর চলে আসে, আর তখনই তাদের ক্ষিদে থাকে বেশী। ফলে সবাই জানে তারা নাকি সুর এ কথা বলে। আসলে তাদের গলা মোটা (এটা বানালাম।)

আসলে চাইলে একটানে এক বসাতেও দুর্দান্ত ক্যারেক্টার ডিজাইন করা যায়, তবে কারো যদি সেটা নিয়ে বড় গল্প বলা বা কমিক্স করার ইচ্ছা থাকে তবে এভাবে বলা ভাল। অনেক কন্ট্রোলে থাকে। আর এটা মাত্র শুরু, ক্যারেক্টার ডিজাইন এর পরের ধাপ গুলি সংক্ষেপে আশা করি আগামীকাল দেয়া যাবে।

(চলবে)

চলছে ফরেন কমিকস