November 06, 2019

কার্টুন ফ্যাক্টরির এক যুগ

এ বছরটা ইচ্ছেকৃতভাবে বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে বিলিয়ে দিলাম, আর কোন বছর এই পরিমাণ অন্যের প্রজেক্ট করেছি বলে মনে পড়ে না, গায়ের রঙের জন্য চোখের নিচের কালি কেউ দেখতে পাচ্ছে না বলে বোঝা যাচ্ছে না, মিতুকে দেখিয়ে বোঝাতে হচ্ছে যে অবস্থা কত খারাপ, সে চোখ বন্ধ রাখলে মনে হয় সানগ্লাস পরে আছে। যাই হোক, কাজ কর্ম শেষের দিকে, সামনের বছর অন্তত ৬ মাস ঘুরে বেড়াবো সেই কারণে আমাদের এই আত্মাহুতি। এর মাঝে হঠাত নাঈমের ফোন, ক্যাজুয়াল চুলের সিরিয়াস আর্কিটেক্ট কাম আঁকিয়ে নাঈম কার্টুন নিয়ে-আরো অনেক কিছুর মতই- বেশ সিরিয়াস, সে পাশ করেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন থেকে, সে ছাত্র থাকা অবস্থায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্টুন প্রেমী দলটা সম্পর্কে জানতে পারি ওর মাধ্যমেই। দলটার নাম 'কার্টুন ফ্যাক্টরি', এখন কী ব্যাপার? ব্যাপার হল তাদের ১২ বছর পূর্তি! শুনে টের পেলাম বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, এই সেদিন মনে হয় শুনলাম এরকম একটা দল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কার্টুন দল আঁকাআঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাদের কাজ কর্মও বেশ ভালো, আর এখন দেখতে দেখতে এক যুগ?? যাকগে, প্ল্যান কী? প্ল্যান হল প্লেনে করে আমি মিতু আর হালের ইলাস্ট্রেশন সেনসেশন ও আরেক আর্কিটেক্ট তীর্থ ভাই যাব সিলেটে। বলা যায় ঝটিকা সফরে। সকালে প্লেন, দুপুরে খাওয়া, বিকেলে প্রোগ্রাম রাতে শেষ করে ঘুম, পরদিন দুপুরে আবার রিটার্ন টু ধুলার শহর।

এর মধ্যে চলছে আমাদের আঁকান্তিসের কার্টুন কোর্স, আর অন্যান্য ক্লায়েন্ট কাজ জমা তো আছেই, তারপরেও ১২ বছর পূর্তি বলে কথা, তার ওপর কার্টুনের দল, না বলা কঠিন, সুতরাং হাবিজাবি সামলে ঠিকই অক্টোবরের ২৫, ২০১৯ সকালে আমাদের তিনজনকেই পাওয়া গেল বিমানবন্দরের ডমেস্টিক টার্মিনালে, এর পরের ইতিহাস দুঃখের ইতিহাস, ছোট করে বললে সকাল ১১ টার প্লেন ছাড়ে ১টার পরে, কারণ প্রথম যে বিমানে উঠেছিলাম সেটায় যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, আবার অন্য বিমান না আসা পর্যন্ত সেখানেই শ' দুইয়েক যাত্রীকে বসে থাকতে হয়েছে, কারণ চাইলেই নাকি নেমে বিমান বন্দরের টার্মাকে হাঁটাহাঁটি করার উপায় নেই। সেটাও সমস্যা হত না, যদি বিমানে এসি ছাড়া থাকতো বা নিদেনপক্ষে জানালা খোলা যেত। ইঞ্জিন বন্ধ- তাই দুই ঘন্টা আমরা এতজন ঘামতে ঘামতে বিমানে ঠায় বসা। তাই বাসে বা ট্রেনে যাবার চাইতে কম কষ্টের হয়নি জার্নি।

সে যাক, বিমানবন্দরে নেমেই উষ্ণ অভ্যর্থনা কার্টুন ফ্যাক্টরি দলের, বিখ্যাত পাঁচ ভাই হোটেল দুপুরের জমজমাট খাওয়া দাওয়া, এর পর শাহজালালের গেস্ট হাউজে পাখির গোসলের মত স্কেলে পাখির বিশ্রাম সেরে সরাসরি অডিটোরিয়ামে। সেশন ভালোই হল, অবাক হলাম সবার ধৈর্য দেখে, আমি নিজে কার্টুন আঁকি কিন্তু এই তিন ঘন্টা টানা কার্টুন নিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজর শোনার ধৈর্য্য আমার হবে না, এরা কার্টুন (অথবা আতিথেয়তা) নিয়ে খুবই সিরিয়াস , যাই হোক সেশনের আগে কার্টুন ফ্যাক্টরির কার্টুন প্রদর্শনী দেখে এসেছি আমরা, বাইরেই কাপড় ও চাটাই ঘেরা প্রদর্শনী, বেশ কিছু কাজ ভাল লাগল, কয়েকটায় বেশ পেশাদারী ছোঁয়া আছে। এভবে দশ বছর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো যথেষ্ট কঠিন কাজ (নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি), এতদিন এভাবে এতগুলি ব্যাচ ধরে এটা ধরে রাখাও কঠিন। একটা উত্তর পাওয়া গেল জেনে যে কার্টুন ফ্যাক্টরির প্রতিষ্ঠাত ও অন্যান্য সিনিয়র সদস্যদের মোট ৬ জনই এখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! সংগঠনের এতদিন চালু থাকার পেছনে এদের বিরাট অবদান আছে।

অভিনন্দন কার্টুন ফ্যাক্টরি! সামনের ১২ বছর আরো দারুণ কাটুক সেই কামনা রইলো।





গুরুগম্ভীর আলোচনা ১

লঘুগম্ভীর আলোচনা

প্রেম দৃষ্টি

ফ্যাক্টরির প্রদর্শনীর ভীড়



No comments:

Post a Comment

হ্যাংওভার কাটিয়ে

একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...