সম্প্রতি একটা প্রদর্শনী হয়ে গেলো ঢাকার আঁলিয়ঁস ফ্রাসেজ এ। সেটার বিশেষত্ত্ব হল এই যে সেটা এই দেশের প্রথম ক্যারিকেচার প্রদর্শনী। সেটার আরেকটা বিশেষ ব্যাপার হল এটা একটা একক প্রদর্শনী। কার্টুনিস্ট মিতুর আঁকা ৩০ টি ক্যারিকেচার নিয়ে পুরো পনেরো দিন ধরে চলে এই প্রদর্শনী। প্রথমে বলে নেয়া ভাল শুধু ক্যারিকেচার আমাদের এখানে এখনো আলাদা একটা পেশা বা পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়নি। যতটুকু যা হয়েছে সেটা হয়েছে কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্যের হাত ধরে। কিন্তু তারও একটা বড় অংশ হল রাজনৈতিক কার্টুন আঁকার প্রয়োজনে যট্টুকু না আঁকলেই না। আমেরিকান-ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে আর বিশেষ করে ব্রাজিল ও ইরানে ক্যারিকেচার রীতিমত কার্টুন শিল্পের একটা বিরাট ক্যাটাগরি। ইরানে যেবার যাই সেবার বেশ কিছু আঁকিয়ের ভিজিটিং কার্ড এ নিজের পরিচয় হিসেবে লেখা দেখেছি 'ক্যারিকেচারিস্ট'। এবং তাদের কাজ দেখে বুঝেছি সেটা তারা লিখতেই পারেন। ক্যারিকেচার কে তারা একেবারে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। শুধু চেহারার এক্সাজারেশন এ তারা আটকে থাকেন নি, ড্রয়িং এর দক্ষতা আর ফর্ম এর এক্সাজারেশন এর সাথে যেই ব্যক্তিকে আঁকা হচ্ছে তাঁর ক্যারেক্টারিস্টিক্স এমন অসাধারণভাবে ধরা হয়েছে যা আমাদের আঁকায় আমরা আসলে ভাবি-ই না। এবং আরেকটা দারুণ ব্যাপার হচ্ছে সবাই য দূর্দান্ত স্কিল্ড তা কিন্তু না। কিন্তু সেগুলি ছাপিয়ে গেছে তাদের ইমাজিনেশন। (আগ্রহীরা প্রথম দিকের লিজেন্ড Al Hirschfeld আর এ যুগের Turcius এর কাজ ঘেঁটে দেখতে পারেন)।
আমাদের ক্যারিকেচার অনেকদিন একটা জায়গায় আটকে থাকার কারণ আমি মনে করি আবারো সেই শিশির স্যার। উনি অনেকটা আমাদের কার্টুনের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মানে ওনার পরেও যে আরো এগোনো যেতে পারে সেটা বিশ্বাস করা ও করানো দুই-ই কঠিন কাজ। দেখা যায় যে যাই করে স্কিল এর শেষ স্ট্যান্ডার্ড আসলে শিশির ভট্টাচার্য। এমনকী আমি এ-ও দেখেছি শিশির স্যার কোন ক্যারেক্টার যদ্দিন না আঁকছেন তদ্দিন সবাই বসে থাকে, উনি আঁকার পর এক্সাজারেশনটা কেমন হতে পারে সেটা দেখে নিয়ে তবে তারা আঁকেন। এমন কী একটা চেহারাকেই যে অনেক দিক থেকে ডিস্টর্শন করা যায় সেটাও যেন কারো চোখে পড়তে পারে না। টানা ২০ বছর বাংলাদেশের কার্টুন ও ক্যারিকেচার এই বলয় থেকে বের হতে পারে নি, এই প্রদর্শনীটি নিয়ে এত কথা বলার একটা কারণ হল এই প্রদর্শনীর কাজগুলি সেই আটকে জায়গা থেকে প্রায় পুরোটাই বের হতে পেরেছে। এইভাবে বাংলাদেশে আগে ক্যারিকেচার হয়নি। একটা চেহারার ক্যারিকেচারাইজেশন এ যে আসলে সব এলিমেন্ট না থাকলেও দিব্যি চলে যায় সেটা আগে আমরা ভাবিনি, ভাবলেও সাহস করে উঠিনি। আমরা গ্রামার আর জিওগ্রাফিতে নিজেদের আটকে নিয়েছিলাম। মিতুর এই কাজগুলি আমাদের বলে দিল সেই বলয় থেকে বের হবার সময় হয়ে গেছে।
কাজগুলির নৈর্ব্যাক্তিক এনালাইসিস করে বলা যায় কাজ গুলি খুবই সরল ফর্ম একরার চেষ্টা করা হয়েছে। ডিজিটালি আঁকা ক্যারিকেচারগুলিতে স্কিলের ঘাটতি অনেকটাই গোছানো প্রেজেন্টেশন আর কম্পোজিশনের কারণে উতরে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় (যেমন শিশির ভট্টাচার্যের ক্যারিকেচার এ)যদিও তার সেই পুরোনো প্রথাগত স্কুলটাই আবার ফলো করার চেষ্টা দেখা যায় তবু শেষ পর্যন্ত বাকী কাজগুলি আমাদের মুগ্ধ করে। ড্রয়িং গুলিতে বেশ কিছু এনাটমিগত ভুল বের করা যাবে, কম্পোজিশন নিয়েও অনেক কিছু বলার থাকতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ যখন ববিতার রিক্সা পেইন্টিং মোটিফ এ আঁকা ক্যারিকাচার আর তার পরেই রুনা লায়লার শুধু মুখ ব্যাদানরতা চেহারাটি চিনতে পারে তখন অংকন দক্ষতার প্রাসঙ্গিকতা হারায়। সাররিয়াল কিছু এক্সাজারেশন মিতুর প্রথা থেকে দূরে থেকে 'অরিজিন্যালি' ভাবতে শেখার গুণটাকেই প্রমাণ করে। আর কিছু কিছু ক্যারিকেচার বিষয়গুণে পেইন্টারলি হয়ে দাঁড়ায়। চার্লি চ্যাপলিন বা সালভাদর দালি, ফ্রিদাকে নিয়ে যখন পাশাপাশি ফ্রেমে থাকে তখন ক্যারিকেচারিস্ট এর আরেকটা বিশেষত্ব বোঝা যায়- চরিত্রগুলিকে সে শুধু আঁকার জন্যেই আঁকেনি, এদেরকে সে একেবারে ব্যক্তিগতভাবে চেনে। এদ্দিন শুধু চেহারা আঁকার ক্যারিকেচার প্রথা সে এখানে ভেঙ্গেছে। চরিত্রকে তাদের জগত সহ পার্সোনিফাই করাটা ক্যারিকেচারিস্ট এর জানাশোনার পরিধিকেই সত্বায়িত করে।
মিতুকে অভিনন্দন ও একইসাথে ধন্যবাদ, নিজের অজান্তেই সে বাংলাদেশের ক্যারিকেচার এ একটা নতুন যুগের শুরু করেছে। তবে সেটাকে বহুদূরে নেবার আছে, শুধু ফ্যান্টাসি দিয়ে আন্তর্জাতিকমানে যাওয়া যায় এটা আমি বিশ্বাস করি না। তাতে এনাটমি লাইট এন্ড শেড কালার থিওরি- ইত্যাদীর পালকও যোগ করতে হবে। আশা করি সেটা সম্পর্কে আঁকিয়ে ওয়াকিবহাল আছে। অসীম চন্দ্র রায়ের দূর্দান্ত রিয়েলিস্টিক ঘরানার পাশাপাশি এই মূহুর্তে এই ধরনের কাজের আমাদের খুবই দরকার ছিল।
( নীচে প্রদর্শনীর ক্যারিকেচারগুলি দিয়ে দেয়া হল)
বিবি রাসেল, রুনা লায়লা, হাসান... :D :D :D
ReplyDeleteখালেদা জিয়ার একটা ক্যারিকেচার আছে। ওটাকে মিস্ করছি। :D