কাইয়ূম চৌধুরী মারা গেছেন, আজ রাতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত মিউজিক ফেস্টিভ্যাল এ বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে উনি মঞ্চেই পড়ে যান, হাসপাতালে নেবার পর তাঁকে মৃত ঘোষোণা করা হয়। আশি বছর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুস্থ্য ও কর্মক্ষমভাবে কাজ করে যাওয়া এই 'সেইজ' প্রজাতির মানুষটির অকাল মৃত্যু হয়েছে এটা বলা যাবে না। কিন্তু কী এক বিষন্ন কারণে খুব অস্থির লাগছে। স্যারের সাথে একদিনই কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। আমাদের কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশনের প্রথম প্রদর্শনীতে আমাদের অন্যতম উপদেষ্টা র'নবী স্যারের বাসায় গিয়ে জানতে চাই উনি উদ্বোধন করবেন কি না। জবাবে উনি বলেন সবচেয়ে ভাল হয় 'কাইয়ূম ভাই' করলে। আমি মনে মনে বলি তাহলে তো খুবই ভালো হয়, র'নবী স্যার ফোন দিলেন- কাইয়ূম ভাই, তরুণ কার্টুনিস্টরা একটা এসোসিয়েশন করেছে, আপনি কি ওদের প্রথম প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করতে পারবেন?' এ পাশের কথা থেকে বোঝা গেলো উনি এক কথায় রাজী। ফোন রেখে র'নবী স্যার জানালেন তোমরা হয়ত জানো না, কাইয়ূম ভাইও কিন্তু 'চৌকা' নামে কার্টুন এঁকেছেন আগে, চৌধুরীর 'চৌ' আর কাইয়ূমের 'কা' মিলে চৌকা।
২০১০ সালে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে তরুণ কার্টুনিস্টদের সামনে উপবিষ্ট বাঁ থেকে শিশির ভট্টাচার্য, রফিকুন নবী, কাইয়ূম চৌধুরী ও আহসান হাবীব |
প্রদর্শনীর দিন সবার আগে উনি এসে হাজির, আমরা বিব্রত কারণ 'তরুণ' কার্টুনিস্টদের অনেকেই আমরা আসতে পারি নি। যাই হোক, তাতে ওনার কোন সমস্যা নেই। খুবই সহজ স্বাভাবিক এই মানুষটা ঘুরে ঘুরে আমাদের অকিঞ্চিতকর কার্টুন গুলি দেখতে লাগলেন। আর সে সময়ে আর কেউ ধারে কাছে না থাকায় আমি সাথে সাথে ঘরতে থাকি । তখন টুকটাক কথা হয়। মহৎ মানুষগুলির একটা কমন চরিত্র দেখি তাঁরা এতই অবিশ্বাস্য রকম সাধারণ যে না জানলে বোঝা যায় না এঁদের আসল মাপ।
এই মানুষগুলি একজন একজন করে চলে যায় আর আমি ভাবি- এই মানুষগুলির কোন রিপ্লেস কি আদৌ আছে? এই ব্যচটা যারা বাংলাদেশকে হতে দেখেছেন, যারা একটা ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে আবার শুরু করেছিলেন, এই লোক গুলি কি আর হওয়া সম্ভব? বাংলাদেশের গ্রাফিক জগত মোটামুটী এক হাতে আরেক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই গুরুকে সালাম। ভালো থাকুন
যেখানেই থাকুন।