আমাদের শান্ত ভাই আর নেই... এখনো কথাটা মাথায় ঢোকেনি, তাঁর আঁকা কমিক্স পড়েই বড় হয়েছি, উন্মাদে তাঁর আঁকা দেখে মনে হত এমন যদি আঁকতে পারতাম, সেই শান্ত ভাই আজ বিকেলে শাহবাগে গণআন্দোলনে স্লোগানরত অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। শান্ত ভাই, আমি আমার একজন ভাই হারিয়েছি, পরশুদিন ফোন এ কথা হয়েছিল, বলেছিলাম কমিক্স প্রকাশনী খুলেছি, এবং সেটা তাঁরই দেখাদেখি। বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই আক্ষরিক অর্থে এক হাতে বাংলা কমিক্স করে যাচ্ছিলেন। 'কল্পদূত' নামের সেই প্রকাশনীর কমিক্স পড়েনি এমন আশির দশকের শিশু কিশোর কমই পাওয়া যাবে। প্রতি বছর মেলায় স্টল পেলেও এই প্রথমবার উন্মাদের সাথে তাঁকেও স্টল দেয়া হয়নি। তাতেও এই হাস্যমুখী বিনীত শান্ত ভাইয়ের কোন অভিযোগ ছিলো না। কমিক্স প্রকাশনী করছি শুনে সাথে সাথে বাচচাদের মত খুশী হয়ে বলেছিলেন,-
'এইবার জোর পাব বুঝলা?, চল একদিন বসি'
বলেছিলাম মেলায় আসেন, দেখা হবে। সেই দেখা হ্ল, কথা হল না। কি ভয়ানক অভিমানে বুকের ভেতরে মুচড়ে উঠলো তা বোঝানো যাবে না। কেন যেন মনে হল এই জরদ্গবের দেশে বাংলা কমিক্স এর জগদ্দল একা ঠেলতে ঠেলতে হঠাৎ যেন আমার কথা শুনে নিশ্চিন্তে চলে গেলেন। কত বছর চিনি তাঁকে? চোদ্দ? পনেরো? এমনই হবে। এতদিন একসাথে কাজ করলেও কখনো তাঁর নামে কোন বাজে কথা শুনিনি, কখনো কারো সাথে বাজে ব্যবহার করেননি। আর এমন বহুমুখী প্রতিভা নিয়েও কি অসম্ভব বিনয়ী ছিলেন। তাঁর লেখা ছড়া, রহস্য গল্প, কমিক্স এর ধারে কাছে আসতে আজকালের অনেকেরই সারাজীবন সাধনা করতে হবে, তাঁর মুক্তার মত হাতের লেখা দেখে মুগদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকেছি কতবার... সেই শান্ত ভাই মাত্র ৪২ এ নেই। ভালো মানুষের বাঁচে না বেশীদিন... বেশ কয়েকবার দেখলাম সেটা। তাঁর ১২৭, ব্যাংকার্স রো'র বাড়িটা থেকে বের হতে হতে দুঃখের বদলে কেন যেন ভয়ানক অভিমানে গলা বন্ধ হয়ে এল।
এ সময়ে চলে গেলেন কেন?
অসময়ে চলে গেলেন কেন?
No comments:
Post a Comment