June 21, 2012

কেন সুপার হিরো কনসেপ্ট আমাদের সাথে 'যায় না'


কমিকবুকের কাজ চলছে, আর সেটা করতে গিয়ে কিছু অদ্ভূত সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। যেমন- আমাদের 'সুপারহিরো' কেমন হবে?ল্যাঙ্গট পড়া কাঁধে লাল পর্দা উড়ানী কোন বাঙ্গাল সাঁই সুঁই করে 'সেভ দ্যা ওয়ার্ল্ড' করে বেড়াচ্ছে- এমন একটা দৃশ্য কেন যেন হাসির উদ্রেক করে। সত্যি, এমন কিছু দাঁড়া করাবার চেষ্টা কিন্তু কম করা হয়নি। কিন্তু সেটা ক্লাউনি ইমেজ থেকে বের হতে পারেনি আজো। সেটা কেন হয়নি বা কেন হচ্ছে না তা ভাবতে গিয়ে আমরা কিছু চমকপ্রদ উপলব্ধির মধ্য দিয়ে গেছি। আমরা প্রথমেই আমাদের বৃহত ভারতবর্ষের 'সুপারহিরো' দের নাম মনে করার চেষ্টা করি,


সিদ্ধার্থ গৌতম (বুদ্ধ)
লালন ফকির
বড়ু চন্ডীদাস
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
মহাত্মা গান্ধী
অতীশ দীপংকর
শাহজালাল রঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাজী নজরুল ইসলাম

(নাগাড়ে যেসব নাম মন এল তা-ই লেখা হয়েছে, পাঠকেরা যে যার মনের মত আরো যোগ করে নিতে পারেন)
খেয়াল করুন এঁরা কেউই 'একশন হিরো' না। ইউরোপ আমেরিকার সাথে আমাদের এখানে একটা বড় পার্থক্য আছে। ওঁদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে পেশীর জোরে, সেই সাথে প্রযুক্তির কর্কশ শব্দে। আর আমাদের এইদিকে ব্যাপারটায় সবসময় একটা আধ্যাত্মিক, যাদুকরী, মায়াবী শক্তির ব্যাপার ছিল। এখানের সুপারহিরোরা তাঁদের 'আইডিয়া'র জোরে অতিমানব। গায়ের জোরে নন। অপরদিকে যে সব বৃটিশ আমেরিকান সুপারহিরো আমরা দেখি তার বেশীরভাগই ভয়ানক শারীরিক শক্তি কেন্দ্রিক পেশীবহুল আর গেজেট নির্ভর। একটা বড় অংশের জন্ম কোন এক 'বৈজ্ঞানিক' দূর্ঘটনায়। অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর সেভিয়র হিসবে। এমনকী অনেকাংশেই সেটা পলিটিক্যাল কারণে সৃষ্টি! তাই ইউরোপ আমেরিকানদের লোহা ইস্পাত আর মিগ বিমানের পাশে এখন আয়রন ম্যান উড়ে যাওয়াটা যেমন স্বাভাবিক লাগে আমাদের খালবিলের বাংলাদেশে সেটা বরং হাস্যকরই লাগবে। ভাবুনতো ঢাকার রাস্তায় প্যান্টের ওপর লাল ল্যাঙ্গট পড়ে এক সুপারহিরো হেঁটে যাচ্ছে। 


এবার প্রশ্ন হল আমাদের এখনকার হিরো (সুপার হবার দরকার নাই) তাহলে কেমন হবে? আমরা পড়াশোনা করে দেখতে পাই ওপরে আমাদের হিরো হিসেবে যাদের নাম যাদের নাম লেখা হল তাদের অনেকেই কিন্তু গায়ে গতরে মারামারিও করেছেন। শাহজালাল (রঃ), আর লালন ফকির এই দু'জনেই 'সাধারণ' মানুষের হয়ে লাঠি হাতে নিয়েছেন। তবে এঁদের মূল হাতিয়ার ছিল জীবনদর্শন, মানবদর্শন। তার মানে এখানে হিরো হতে হলে আপনাকে দার্শনিক হতে হবে- অন্ততঃ আপনার কাজের পেছনে একটা পরিপূর্ণ দর্শন থাকতে হবে। খেয়াল করে দেখবেন পশ্চিমা সুপারহিরোদের খুব কমই এমন দর্শন আছে। সেখানে সবসময় এক উন্মাদ ধরনের ভিলেন হাজির হয়, যার উদ্দেশ্য আমেরিকা  (মানে কিনা পৃথিবী, আমেরিকানদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকেই পৃথিবীর সমার্থক বোঝানো হয়) দখল। মানে RULE THE WORLD, পাওয়ার পাফ গার্লস সিরিজের মোজোজোজোর গানের মত- Everybody Wants to rule the world. আর তখন 'হিরু'এসে একটা Save the world করে থাকে। এই প্লটটার পেছনে কাজ করছে সেই  আড়াই হাজার বছর আগে লেখা এরিস্টটলের সাম্রাজ্য টিকানোর একটা কৌশল- একটা কৃত্রিম শত্রু বানিয়ে জনগনকে বোঝাও যে ওই ভয়ানক শত্রুকে ঠেকানোর শক্তি একমাত্র তোমার মত অত্যাচারী শাসকেরই আছে!
যাই হোক, ভিন্ন আলোচনায় চলে যাচ্ছি, লেখার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের সুপারহিরো কেন নাই, বা কেন এখানে 'ওভাবে' ভাবা যায় না। আমার ব্যক্তিগত মতটাই এখানে বলে যাচ্ছি। বর্তমানে একাধিক কমিকবুকের কাজ করে যাচ্ছি বলে এই সমস্যাটা আবার সামনে আসায় এই ভাবনা। আমার মতে এখানে কমিকবুক হিরোরা যা হতে পারে তা এই রকম


১। যাদুকরী, ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা- ম্যান্ড্রেক অনেকটা যেমন

২। পেশী শক্তিতেই সে চলে কিন্তু সেটা একটা দারুণ দর্শন মনে নিয়ে- অরণ্যদেব- আমার মতে সেরা কমিকবুক ডিজাইন

৩। আধিভৌতিক, অতিপ্রাকৃত জগতের জ্ঞান আছে এমন- হেলবয় (মুগ্ধ হয়ে মাইক মিগ্নোলার একগাদা হেল্বয় পড়লাম)

৪। কুসংস্কার ভেঙ্গে দেয় টাইপ কেউ- মিসির আলী?

আমরা এই কয়েকটা টাইপের ওপর আমাদের হিরোগুলিকে দাঁড়া করাতে চাইছি। আর সেই সাথে বিরাট ইন্সপিরেশনাল জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাপানিজ মাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রি। ওসামু তেযুকা, মিয়াযাকি থেকে হালের কেইজি নাকাযাওয়া এদখিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে গল্প বলতে হয়। আমার মতে জাপান থেকে বরং আমাদের বেশী শিখবার আছে। মাথা ধরানি, হাড় জ্বালানি মার্ভেল ডিসির টাইট কম্পোজিশনে পেশীর দলা সহ একদল মারকুটে গোলায়াথের লাফালাফির চেয়ে আমার কাছে তেজুকা অনেক আরামপ্রদ।

যাই হোক, অনেকেই বাংলাদেশের সুপারহিরো বানাতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন (কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার শরীফ ছাড়া) । সেই ধরা খাবার কারণটা মনে হয় কিছুটা বলতে পেরেছি। তবে এর সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমরা এর উল্টোদকে গিয়ে কিছু করে দেখাতে না পারি। 
দেখা যাক কি হয়



আনাড়ী এনিমেশন

কালো টাকা হচ্ছে সাদা, করছে কে তা? কে আর? দাদা

এইয়া নিয়ে একটা ক্যারেক্টার নামাতে চাচ্ছি, কমের মধ্যে।

চলছে ফরেন কমিকস