হাতে ধরা কার্ফিউ পাসটার দিকে কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছি। নিজের দেশে এরকম একটা পরিস্থিতি জীবদ্দশায় দেখব তা ভাবিনি কখনো। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চোখে পড়লো যেন এক পরাবাস্তব ঢাকা। কোথাও কেউ নেই। ফার্মগেটের ব্যস্ত সড়ক, আনন্দ সিনেমা হল, হলিক্রস কলেজের মোড়, প্রবল ব্যস্ত কারওয়ান বাজার-সব যেন খাঁ খাঁ করছে। এর মাঝে আমাদের ডেইলি নিউ এইজের ‘প্রেস’ স্টিকার সাঁটানো গাড়িটা চলছে যেন ভুতুড়ে কোন সিনেমার দৃশ্যের মত, যেন বা মৃত নগরীতে একমাত্র প্রাণের চিহ্ন।
কেউ নেই বলাটা অবশ্য ঠিক হল না। আছে, পুলিশের আর্মার্ড কার, কিছু ইতস্তত বিক্ষিপ্ত লাঠিসোটা, ইট-সুরকি, আর ছেঁড়াখোরা কিছু ডিজিটাল ব্যানার, একটু খেয়াল করে তাকালে বোঝা যায় একটা ছোটখাটো ঝড় বয়ে গেছে এখানে। সব পেরিয়ে নিজের অফিসের গাড়ি বারান্দা পাড় করে উঠতে উঠতে মনে হল পলিটিকাল কার্টুন আঁকতে গিয়ে এমন জলজ্যান্ত পলিটিকাল মুভমেন্ট দেখে ফেলাটা খুব বেশি কার্টুনিস্টের ভাগ্যে হয়ত জোটে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঠেকাতে সরকার সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে, তার অংশ হিসেবে ইন্টারনেট শাটডাউন চলছে। তাই, ঘরে বসে ‘হোম অফিস’ আর হচ্ছে না। ফলে এই দুর্দম কার্ফিউ এর মধ্যেও যেতে হচ্ছে যার যার অফিসে, বিশেষ করে মিডিয়া কর্মীদের। এরকম কাছাকাছি একটা ঘটনা ঘটেছিলো সেই ১৯৯০ এর দশকে, শৈশবের স্মৃতিতে সেটা খুব বেশি স্পষ্ট নয়, তবে স্বৈরশাসক শব্দটা বোধকরি সে সময়েই দেশের মানুষ খুব ভালোভাবে জানতে পারে। আর এই ২০২৪ এ এসে সেটা একেবারে তথ্য প্রমাণ সহ ভালভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে সবার চোখের সামনে।
মূল ঘটনার সূত্রপাত তো সেই অনেক আগে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মত একটি ন্যায্য ও জনমানুষের দাবীকে যখন পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনি দিয়ে নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিলো, স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের যখন রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পিটিয়ে ফেরত পাঠিয়েছিল তখনই রাজনীতি সচেতন ও বোদ্ধারা ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন এই ‘২৪ এর জুলাইয়ের মত কিছু একটা ঘটনার। যোগ বিয়োগ করে এটাও দেখানো সম্ভব যে সেই সড়ক আন্দোলনের কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা বা ২০১৮ এর কোটা আন্দোলনের মুষ্টিবদ্ধ হাতই পরবর্তীতে পরিণত হয়ে যোগ দিয়েছে এই জুলাই বিদ্রোহে। তবে আরো অনেক কিছুর মতই এই অভ্যুত্থানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় তরুণদের হাতিয়ার হিসেবে পপুলার আর্ট ফর্মের ব্যবহার। যার মধ্যে ছিলো গ্রাফিতি (চটজলদি গেরিলা পদ্ধতিতে করা দেয়াল লিখন/+ ড্রয়িং), ছিল র্যাপ সঙ্গীত ও অবশ্যই- রাজনৈতিক কার্টুন। এ যেন চেপে রাখা কোন গ্যাস-কামরার হঠাৎ বিস্ফোরণ।
রাজনৈতিক কার্টুন শেষ হয়ে গেল কিনা এইরকম আলচনা যখন চলছিল, এবং ডেইলি নিউ এইজ সহ হাতে গোণা দুই একটা পত্রিকা ছাড়া যখন রাজনৈতিক কার্টুন নেই বললেই চলে তখন জুলাইয়ের এই অগ্নিঝরা সময় যেন চারিদিকে রাজনৈতিক কার্টুন, আর্ট ও গ্রাফিতির শত ফুলকি ছড়িয়ে উদয় হল। জুলাই অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরে জুলাই কার্টুনের সংকলনের কাজে থাকার সুবাদে বলতে পারি এই একমাসেরও কম সময়ে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তরুণেরা এঁকেছেন ৬০০’রও বেশি কার্টুন! তরুণেরা রাজনীতি সচেতন নন, বা তারা আদৌ দেশের কোন সংকটে ভ্রূক্ষেপ করবে না এমন তত্ত্বকথা তরুণেরা তাদের কাজের মাধ্যমে মাটিচাপা দিয়ে দিল আরেকবার। জুলাই অভ্যুত্থানের যেকোন কথাই তাই ঘুরে ফিরে শুধু তরুণদের জয়গানে গিয়ে শেষ হবে, কার্টুনও ব্যাতিক্রম নয়।
তবে এই লেখাটা কিঞ্চিত ব্যক্তিগত কাজের স্মৃতিচারণ বলা যায়, এই আন্দোলন সম্পর্কিত কাজগুলি নিয়ে স্মৃতিচারণ। আর সেটা শুধু লেখায় বোঝানোর চাইতে কবে কোন কাজটা কী পরিস্থিতিতে আঁকা সেটা কাজটা সহ লিখে দেয়াই শ্রেয়।
শুরু করতে হলে অবশ্যই ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ‘সমাপ্তি’ ঘোষণা করার ঠিক পর পর আঁকা এই কাজটার কথা বলতে হবে। ছয় বছর পর যা অনেকটা ভবিষ্যতবাণীর মত ফলে গেল।
জুলাই আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যে আমার প্রথম আঁকা ছিল এই কাজটা।
ছাত্রদের বিক্ষোভ দমনে 'ছাত্রলীগ ই যথেষ্ট' বলে ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণা ও ছাত্রলীগ+পুলিশ মিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলায় ১০ জনের ও বেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়। এই কার্টুনটি ঘটনার দিন (১৬ জুলাই, ২০২৪) এ ফেইসবুক এ আমার পেইজেই আপলোড করি। এবং এটা সম্ভবত আমার অন্যতম কাজ যা দশ হাজারের বেশি মানুষ শেয়ার করেছে ও কয়েক লক্ষ মানুষ দেখে রিয়্যাক্ট করেছে। মনে রাখা ভালো যে এই ধরনের কাজ আমি টানা এঁকে গেলেও শুধু ভয় থেকেই মানুষ শেয়ার ও করতেন না বহুদিন। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানাতেন যে ভাল হয়েছে। ব্যস ওই পর্যন্তই। আর এই কাজটার এত ছড়ানো প্রমাণ করে কত মানুষ কি ভয়ানক ক্ষিপ্ত ছিল সরকারের সিদ্ধান্তে। তারা আর ডিজিটাল আইনের তোয়াক্কা করছিলো না।
আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন- এই প্রশ্ন করায় আয়মান সাদিকের প্রতিষ্ঠান টেন মিনিটস স্কুলের ৫ কোটি টাকার অনুদান বাতিল করে দেয় আইসিটি মিনিস্ট্রি, যেটা আবার সাথে সাথে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন। এবং তার পরপর সাংবাদিকদের তিনি জানান- দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য। এই নিয়েই ক্যুইক কার্টুন ছিল এটা। এই দিনেই রংপুর এ প্রকাশ্যে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে উপর্যুপরি গুলি করে মারা হয়। এটা জানতে পারি রাতে, দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়ানো এক যুবককে একের পর এক গুলি করে যাচ্ছে পুলিশ আর একসময় সে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। এই দৃশ্যটাই পুরো আন্দোলনে গণমানুষকে যুক্ত করে দেয়। আর মানুষ ও এর পর থেকে আর যেন গুলিকে ভয় পাচ্ছিলো না।
ছাত্রলীগ আনলিশড- নিউ এইজে এর পরদিন (১৭ জুলাই, ২০২৪) প্রকাশিত
২৫ জুলাই, অলরেডি কারফিউ জারি করেছে সরকার। ওবায়দুল কাদের বলেছে- 'শ্যুট এট সাইট' বলা আছে। এর মধ্যে ইন্টারনেট শাটডাউন করেছে আইসিটি মিনিস্ট্রি। যদিও জনগণকে বোকা বোঝাচ্ছেন তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলক। ইন্টারনেট নাকি 'দুষ্কৃতিকারীদের' নাশকতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ( কথা সত্য, দুষ্কৃতকারী তো বটেই।)
এই কাজটা যেদিন করি সেদিন রাস্তায় আর্মি নেমে গেছে, ট্যাংক ঘুরছে আশেপাশে। অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি। যেতে যেতেই মনে হল হত্যাকাণ্ডে আর দমনে এই সরকার এরশাদকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এবং ৯০ দশকের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকারীরা হয়ত বলতে বাধ্য হবে যে এরশাদ এর চেয়ে ভালো ছিল। সেই থেকেই এই কাজ। নিউ এইজ এ এই কাজ বের হওয়ার পরদিন সম্পাদক নুরুল কবীর ডেকে বললেন, এটার বিরাট রিঅ্যাকশন পেয়েছেন তিনি। এটা নাকি আমরা একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি, এরশাদের সাথে তুলনা! তবে আজকে এসে বুঝতে পারছি বাড়াবাড়িটা আমরা করিনি।
৩০ জুলাই, এটাও ফেইসবুক এ আমার পেইজে দেয়া। তখন ভয়ানক গোলাগুলি চলমান। হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও মতান্তরে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে, ততদিনে বেশি কিছু শিশু বাড়িতে থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে! নিজের দেশের সরকার যখন গণহত্যায় নামে তখন তার চেয়ে অসহায় আর কিছু হতে পারে না। মৃত্যুর সংখ্যা তখন কাগজে কলমে যতদূর মনে পরে অলরেডি ১০০ ছাড়িয়েছে।
আগস্ট ১ এ নিউ এইজের জন্যে আঁকা। রংপুরে পুলিশ প্রকাশ্যে গুলি করে মারে আন্দোলনকারী আবু সাঈদকে। তার ভিডিও ছড়িয়ে পরে গোটা বাংলাদেশে। এর পরেই এফআইআর- এজাহারে তারা লেখে আন্দোলনকারীদের ছোঁড়া ইটপাটকেল এ মারা গেছে সে। এমনকি তার হত্যাকারী হিসেবে এক কিশোর ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কি যে অবিশ্বাস্য অত্যাচার ও অন্যায় সবার চোখের সামনে ঘটেছে তা এখনো ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। এর মাঝে যাতে কেউ কিছু জানতে না পারে তার জন্যে মাঝে মাঝেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, পুরোটা সময় ই প্রায় বন্ধ/ ডাউন করে দেয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। আমাদের ন্যূনতম ইন্টারনেট এর মধ্যে যোগাযোগ বা তথ্য আদানপ্রদান করতে হয়েছে VPN সার্ভিস ব্যবহার করে। রীতিমত যুদ্ধ পরিস্থিতি।
আগস্ট ৩, এ সময়ে এসে আসলে সবার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যা হয় হোক। মরে গেলেও আমরা আন্দোলন থামাচ্ছি না। আর একত্রে যেই তরুণেরা কখনোই রাজনীতি নিয়ে তেমন একটা ভাবে নি, বা আঁকেনি তারাও সবেগে এঁকে যাচ্ছিলো। সেদিন এই কাজটি আপ করা।
আগস্ট ৫, ঐতিহাসিক দিন। সকাল থেকেই থমথমে সব। নিউজ চ্যানেলও একই খবর লুপে ফেলে রিপিট করছে। বাইরে কার্ফিউ, ছাত্রলীগ নেতারা রক্তের হোলি খেলার ঘোষণা দিয়েছে। শ্যুট এট সাইট বিদ্যমান। হঠাৎ আমার বন্ধুদের ফোন উত্তরা থেকে। তারা সবাই রাস্তায় নামছে কার্ফিউ অমান্য করে। এই আন্দোলনের মূল যে স্পিরিট সেটা এসেছে এরকম গণমানুষ থেকে। কারণ আমার বন্ধুরা কার্ফিউ অমান্য করে রাস্তায় নামার মানুষ না। কোনভাবেই যার আন্দোলনে নামার কথা না সে-ও এই ভয়ানক সিরিজ হত্যাকাণ্ড দেখে রাস্তায় নেমে গেছে। টিভিতে ওদিকে দেখা যাচ্ছে বেলা দুইটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তখনই বুঝে ফেললাম শেখ হাসিনা আর নেই। খুব সম্ভব এই মুহুর্তে তাঁর সেইফ এগজিটের ব্যবস্থা চলছে। তখন তখন ই এই কার্টুন টি আঁকি। এবং বিকেল নাগাদ সে কথাই সত্য হয় (যা অবিশ্বাস্য), শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।
৬ আগস্ট, নিউ এইজের কার্টুন, য পলায়তি, স জীবতি। সব নেতা কর্মিদের ফেলে সপরিবারে পলায়ন। রাস্তায় রাস্তায় তখন আনন্দ মিছিল, শাহবাগ, বাংলা মটর, মিরপুর রোডে মানুষের ঢল, কিন্তু সেখানে শামিল না হয়ে আমি সরাসরি যোগ দিয়েছি আমার ডেস্কে, কারণ আমার সহকর্মীরাও তা-ই করছেন। মনে আছে যখন এই কাজটা করছি তখন ঠিক নিউ এইজ অফিসের নিচে চলছে মারামারি, পাশেই সময় টিভির অফিসে হামলা করেছে একটি দল। মাঝে মাঝেই শুনতে পাচ্ছি আমাদের অফিসেও আগুন এই লেগে গেল বলে, এর মাঝে তাড়াহুড়ো করা এই কাজ, যা পরবর্তীতে দেয়ালে দেয়ালে অনেকবার নতুন করে এঁকেছেন তরুণেরা। এমনকী জুলাই অভ্যুত্থানের কার্টুন নিয়ে ড. শহীদুল আলমের সম্পাদনার বইটির (July Uprising: Satire and Ridicule Cartoon that demolished a dictator) প্রচ্ছদ হিসেবেও এই কাজটি নির্বাচিত হয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পর নৈরাজ্যের চুড়ান্তে চলে যায় দেশ, ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় যা এমনকি ১৯৭১ এও অক্ষত ছিল। সরকারী স্থাপনা ভাংচুর, আর সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার তো আছেই। সেদিন থেকেই এই সরকার ও এর সাথে জড়িত অন্যান্য গোষ্ঠীর সমালোচনায় আমাদের কাজ শুরু হয়ে আবার। আমি মনে করি আমাদের সাংবাদিকদের এবং অবশ্যই সেই সাথে বিশেষ করে রাজনৈতিক কার্টুনিস্টদের মাথায় রাখা উচিত ন্যায়ের লড়াইটা কখনো কোন নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে না, লড়াইটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সেটা যে-ই করুক। এ ব্যাপারে আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক কার্টুনের দিকপাল, মাস্টার আর্টিস্ট শিশির ভট্টাচার্যের একটি বইয়ের থেকে কোট করে লেখাটা শেষ করছি,
“ন্যায় অন্যায় বিচারের শক্তিটাই একজন কার্টুনিস্টকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দল থাকে, একজন কার্টুনিস্ট তিনি কখনই কোন পক্ষের হয়ে কাজ করেন না- কোন দলের প্রতি তার ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ, দুর্বলতা বা ঘৃণা কখনই প্রকট হয়ে প্রকাশিত হয়ে যাওয়া মনে করি একজন কার্টুনিস্টের দুর্বল দিক। তবে যে দলই সরকার গঠন করুক, কার্টুনিস্টের মূল টার্গেট কিন্তু সরকার, সরকারের সমালোচনা, ত্রুটি এসব ব্যাপারে কড়া নজর রাখা। তাই বলে বিরোধী দলের কখনই মনে করা ঠিক হবে না যে, কার্টুনিস্ট তাদের দলের। সেজন্য বিরোধীদেরো ছাড় দেবার অবকাশ নেই। নিরপেক্ষতা ব্যাপারটি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর। একটা শক্তিশালী এবং নির্ভেজাল শক্ত অবস্থান কার্টুনিস্টের অবশ্যই প্রয়োজন। যেখানে দাঁড়িয়ে সে সবকিছুর সমালোচনা করবে। এখনো পর্যন্ত আমার মতে সেই অবস্থানটা হচ্ছে দেশ, দেশের মানুষ, তার অবস্থান, গর্ব করার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ত্বের প্রশ্ন , এবং মানবতাবোধ।” - শিশিরের কার্টুন, একুশে পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ফেব্রুয়ারি, ২০০২
লেখক মেহেদী হক, সিনিয়র কার্টুনিস্ট, দ্য ডেইলি নিউ এইজ