May 29, 2019

জুন যন্ত্রনা!

প্রায় প্রতি বছরই ঠিক জুন মাসের আগে আগে চারদিক থেকে ফোন আসা শুরু হয়। কী ব্যাপার? ব্যাপার কিছু না, ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে যে সব প্রতিষ্ঠান তাদের অর্থ-বছর শেষ হচ্ছে। তার মানে আগের বছর করা হয়নি এমন সব জুনের মধ্যে শেষ করতেই হবে! এবং ডেভেলপমেন্ট এর একটা বড় কাজ হল সহজবোধ্য কার্টুন/ ইলাস্ট্রেশন দিয়ে আম-জনতা বুঝবে এমন কিছু করে প্রিন্ট ম্যাটেরিয়াল তৈরী করা। বেশ ভাল কথা। এ ধরনের কাজ করতে আমরা পছন্দই করি, প্রধান কারণ এতে পকেটে দু' চার টাকা আসে।

ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই আমি এসব কাজ করার ব্যাপারে বেশ বাছাই করার চেষ্টা করতাম। কাজের স্কেল, কে করাচ্ছে, আর উদ্দেশ্য - ইত্যাদী পছন্দ হলে কাজটা করতাম, এভাবে GIZ, UNICEF, Action Aid, BRAC, FIVDB এমন আরো অনেক এন জি ও এবং জি ও (সরকারী) কাজ করা হয়েছে। তবে ইদানীং এসব কাজ করা বাদ দিচ্ছি, তার কারণ বুঝতে হলে বাকীটা পড়তে হবে।  যেমন-

সম্ভাব্য ক্লায়েন্টের সাথে আমার কথোপোকথন

-হেলো মেহেদী ভাই ভালো আছেন?

-জ্বী ভালো, কে বলছেন?

-চিনলেন না? ওই যে বছর পাঁচেক আগে একবার একটা কাজ করলাম আমরা। (অর্থাৎ পাঁচ বছর পর আমি শুনেই চিনে ফেলব তাকে)

-স্যরি ভাই নাম মনে পড়ছে না।

-আরে আমি----(ওমুক)

-জ্বী ভাই বলেন।

-ভাই, একটা কাজ করতে হবে যে, বেশী না মাত্র ৪০ টা ড্রয়িং, ফুল কালার, পরশু দিন লাগবে একটু করে পাঠায়ে দেন।আমি ইমেইল আইডি দিচ্ছি, আর ভাই একটু ডিটেইল হবে আর কি কাজ-হেহে।

-ভাই, ইমেইল আইডি পরে পাঠান, আমি আদৌ কাজটা করবো কি না, ফ্রি আছি কিনা সেটা আগে জানতে হবে তো।

-ও হ্যাঁ হ্যাঁ, মানে ভাই পারবেন না?

-পারবো, কিন্তু ড্র্যয়িং প্রতি আমাকে একদিন সময় দিতে হবে। আর কাজের আগে ৩০% এডভান্স আমার একাউন্ট এ দিতে হবে।

-মানে? ৪০ টা ড্রয়িং সময় লাগবে ৪০ দিন?

-হ্যাঁ।

- কিন্তু কিন্তু আমাদের সময় তো ভাই মাত্র ৭ দিন।

- কিন্তু আমার তো তা না, আমার সময় অনেক। ডেডলাইনটা আপনার, আমার না। আপনার ডেডলাইনের যন্ত্রনা আমি কেন নেব? আমি হ্যাপি লাইফ কাটাই, ঘুরি ফিরি ছবি আঁকি, টেনশন নিয়ে কাজ করি না।

-ও কিন্তু ভাই এটার কিন্তু বেশ ভাল পেমেন্ট ছিল।

- কিছু যায় আসে না ভাই। আল্লা হাফেজ।

এসব আলোচনার শেষ পর্বে এসে হাসিও পায়, বিরক্তও লাগে। এইটুকু পেশাদার এখনো আমরা হচ্ছি না কেন কে জানে। যাই হোক সবাই এরকম না, সংখ্যায় অল্প হলেও বেশ কিছু ভালো ক্লায়েন্ট আছেন, তাঁরা ভদ্র ও পেশাদার। আমার দিক থেকে আমিও সময়মতই সব কাজ যা দরকার তার চেয়ে বেশী ই করে দেই, তাই সেসব প্রজেক্টে সমস্যা হয় না। বেশ কিছু অনুরোধের ঢেঁকি প্রজেক্টও থাকে মাঝে মাঝেই। (এ বছরও আছে)। আর সাথে চলছে পুরোদমে জুনের অর্থ-বছর শেষের আগের রেলগাড়ি প্রজেক্ট। একের পর এক কাজ নামিয়ে যাচ্ছি।
জয় জুন!

কিছু স্ক্রিন শট তুলে দি' গত কিছু দিনের কাজের-

১৩ পৃষ্ঠার কমিক্স, চরাঞ্চলের বন্যা পূর্ববর্তী প্রস্তুতিমূলক সতর্কতা- ইত্যাদী।


হাত ধুই- ভাল থাকি এই ধরনের ক্যাম্পেইন। 

আবর্জনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ, এই দুইটা মূলত বিলবোর্ড হচ্ছে, প্রিন্ট শেষ।



বেশ আগে শুরু করা কাজ, এখনো চলছে। সকাজের মাঝামাঝি স্ক্রিপ্ট পালটে যাওয়াতে আবার করতে হচ্ছে। এটা এনিমেশন প্রজেক্ট

ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের প্রমো এনিমেশনের স্টোরিবোর্ড

হাত ধোয়া নিয়ে আরেক প্রস্থ।


যাই হোক, এই জুন এন্ডিং অর্থ বছরের প্রকোপে মে মাসের অনেকটাই আমার কাটে আঁকার টেবিলে। আর বছরের বাকী সময়টা কাটাই আঁকার টেবিলে।

May 26, 2019

নিহিলিন ক্লাব: হরর গল্প

২০১৭ সালের অক্টোবর, প্রায় ৮ মাস টানা টেক্সট বুকের কাজ করে হাঁফিয়ে উঠেছি মিতু আর আমি দু'জনেই, কাজ করতে করতে মাঝে মাঝেই দু'জনে বই যে ছুটি মিললেই নেপাল যাব। অবশেষে সময় মিললো, আর এবারে নেপাল ঘুরতে গিয়ে হল দারুণ একটা অভিজ্ঞতা
সময়টা ছিল দাশাইন- মানে ওদের দূর্গা পূজা। আর আমরা প্রায় পুরোটা সময়েই ছিলাম পোখারায়, সবাই উৎসবের আগের সময়ে বেশ ব্যস্ত। পথে পথে মৌসুমী খুচরা বিক্রেতা। তার মধ্যে ফেরার আগে কাঠমাণ্ডুর পথে হাঁটছি এমন সময় এক প্রৌঢ় লোক দেখলাম বাঁশী বিক্রি করছে। দরদাম করতে বুঝলাম ব্যাটা যাচ্ছেতাই একটা দামে বাঁশী গছাতে চাইছে,  চলে আসবো কিন্তু মিতু ততক্ষণে দেখি কিনে ফেলেছে। ব্যাটা হাসিমুখে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কাছে যেতেই বলল- আরে দাশাইনের আগে একটু বেশী-ই না হয় দিলা। আমরা হই ওদিকে পাহাড়ে থাকি। আজ রওনা হয়ে যাব, কাল পৌঁছাবো। এর মাঝে আর এদিক আসবো না। কিনে নাও কিনে নাও। ঠিক তখনই চট করে একটা গল্প মাথায় চলে এল। আগেরদিন পোখারায় এক ক্যাফেতে আরেক ছেলের সাথে পরচিয় হল, সে নেপালের মুস্ট্যাং এলাকার লোক। সেও বলছিলো দাশাইনের পর পর বাড়ি যাবে। মনে হল বিদেশী ট্যুরিস্টদের জন্যে এই কৃত্রিম শহরে থাকা অনেক মানুষই আসলে সেই হাজার বছর আগের আদিম একটা আবহে থেকে অভ্যস্ত এখনো। সময় পেলেই সে সেখানে চলে যায়। আর জায়গাগুলো এমন দুর্গম পাথুরে যে মানুষ চট করে সেটা আমূল পালটে দিতে পারেনি এখনো। এমন কি হতে পারে না যে সেই দূর্গম কোন এক পাহাড়ি গ্রামের এক যাদুকর ঠিক দাশাইনের সময় নেমে আসে শহরে? সাথে তার যাদুবিদ্যার প্রাচীন পুঁথি, হয়ত একটা বাঁশী। অথবা কোন এক মুখোশ? যেটা কিনা তাদের গোপন গোত্রের প্রাণসংহারী দেবতা আজেলের?

মাস তিনেক আগে কিশোর আলোর পাভেল একটা কমিক্স চাইতেই মনে হল তাই তো সেই গল্পটাই তো বলা যায়- যদিও সেটা আর শেষে সেরকম হুবহু কিছু থাকেনি। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন, এবারের কিশোর আলো সংখ্যায় বেরিয়েছে তার শেষ পর্ব।



সাথে সেই ট্যুরের কিছু ছবি দিয়ে দিলাম 







হ্যাংওভার কাটিয়ে

একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...