April 21, 2014

বাংলাদেশ কার্টুন ফেস্ট ২০১৪

বাংলাদেশ কার্টুন ফেস্ট এর দ্বিতীয় অনুষ্ঠান অবশেষে হল। গত বছর দুই দুইবার গ্যালারি বুইং দেবার পরেও রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে প্রোগ্রাম পছাতে হয়। অবশেষে, সেই দৃক গ্যালারিতেই ১৫,১৬,১৭ ই এপ্রিল প্রদর্শনী হল। যথারীতি ভীড়ে ভীরাক্কার। পা ফেলার জায়গা নাই ধরনের অবস্থা। বাংলাদেশের আর কোন প্রদর্শনীতে এত ভীড় আর হয় না। তারোপর এখানে আবার ছিলো ফৃ লাইভ ক্যারিকেচার। সেদিন আহসান ভাই (আহসান হাবীব) বলছিলেন-
এই যে কার্টুনিস্ট ছেলে মেয়েগুলা একটানা সারাদিন ফর ফৃ টানা আঁকলো এটা কি দারুণ একটা ব্যাপার না? আর যার ক্যারিকেচার করা হল সে সেটা দেখার পর যে হাসিটা দেয় সেটা দেখতেও তো ভালো লাগে। অন্যান্য ইভেন্টগুলিতে এই ব্যাপারটা মিসিং। মন থেকে ভালোবেসে মানুষের জন্যে কিছু করা হয় না। সব কিছুতেই ব্র্যান্ডিং আর ব্যবসার গন্ধ।
সব শেষে দৃক এ ঘুরতে ঘুরতে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। মনে পড়লো ১৫ বছর আগের থেকে দেখা সেই স্বপ্ন। একদিন এরকম ভাবে একটা ফেস্টিভ্যাল টাইপ কিছু করবো। সবাই সেটা দেখে মজা পাবে, আর অন্তত কার্টুনের ফ্রেমগুলি দৈন্য দশা থেকে বের হয়ে আসবে ঝাঁ চকচকে প্রেজেন্টেশন হবে। (এর জন্যে একটা বিরাট ধন্যবাদ পাওনা সব কার্টুনিস্টদের আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শোরগোলের ছোট বড় ভাইদের।) জীবদ্দশায় গোল পূরণ হবার একটা সমস্যা আছে। এর পর কি করবো সেটা ভাবতে ভাবতে মাঝে একটা হতাশা চলে আসতে পারে। সেদিন স্টিফেন ফ্রাই নামের এক আমেরিকান কমেডিয়ানের ইন্টারভিউ শুনছিলাম, উনি বলছিলেন- নেভার সেট আ গোল। তাহলে দুইটা সমস্যা, যদি গোল পূরণ হয় তবে তারপর কী করবে খুঁজে না পেয়ে হতাশ লাগবে, আর যদি গোল পূরণ না হয় তবে তো পুরোটাই হতাশা। যাই হোক, হতাশা আসার আগেই আবার পরের কমিক্স নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আর প্রদর্শনীর আরো ডিটেইল এখানে না লিখে আজকের প্রথম আলোর ফান সাপ্লিমেন্ট রস+আলোতে বের হওয়া আমার লেখাটা এখানে তুলে দি'
লিংক ০১
লিংক ০২

প্রদর্শনীর শুরুতে
মঞ্চে বাম থেকে আমি, সিম্পোজিয়াম পত্রিকার সম্পাদক ইফফাত হোসেন (ইভেন্টের স্পন্সর),
কার্টুনিস্ট জাহিদ হাসান বেনু, বস আহসান হাবীব

আমেরিকান সেন্টার এর স্পোকস্ম্যান কেলি ম্যাক্কার্থি।
আমার করা ক্যারিকেচার নিয়ে হাস্যমূখী। মহিলা কার্টুন খুবই পছন্দ করেন।
ইন্ডিপেন্টডেন্ট টিভির নিউজ কাস্টার
ক্যারিকেচার হাতে- এরপরেরগুলিও আমার করা কিছু লাইভ ক্যারিকেচার


























শান্ত ভাইয়ের স্মরণে তাঁর নামে একটা পদক চালু করা হয়েছে এবার থেকে
এবারের শান্ত পদক কার্টুনিস্ট রাজীব এর হাতে।



April 13, 2014

আঁকান্তিস লক্ষ্মী প্যাঁচা: বিহাইন্ড দ্যা সিন

আঁকান্তিস গ্রুপে পোস্ট করা একটা কল এর ফাঁদে (নিজেই নিজের) পড়ে পুরা একদিন ঝিম মেরে ছিলাম। বিষয় ছিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে লক্ষ্মী প্যাঁচা আঁকা। কোন প্রতিযোগিতা নয়। এমনি এমনি। সেটা আঁকতে গিয়ে আবার সেই নাপিত সিন্ড্রোম (যেই নাপিত এনাটমি শিখবার পর আর ফোঁড়া কাটতে পারতো না) এ আটকালাম। প্যাঁচা এত সুন্দর আর অদ্ভূত একটা পাখি। শৈশবে আমি কিছুদিনের জন্যে একটা প্যাঁচা পালার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমাদের বাড্ডায় তখন আদারে বাদারে বুনো খাটাশ, সাপ, সোনা ব্যাং শিয়াল ইত্যাদির বাস। সারাদিন পকেটে নিজের বানানো মাটির গুলি আর গুলতি নিয়ে ঘুরে বেড়াই। ভাত শালিক আর গো শালিক দেখলেই মারার চেষ্টা করি। আমার দূর্বল নিশানা দেখে নিতান্ত বিরক্ত হয়ে তারা উড়ে যায়। এমন সময় হঠাত একদিন ফকির বাড়ি দিক থেকে হই হই রই রই। কোন একটা প্যাঁচা ঘুমাচ্ছিলো ফকির বাড়ির হাবি কাকা (হাবিব) মাটির ঢেলার এক নিক্ষেপে সেটাকে ধরাশায়ী করেছে। এত সহজে সেটা পারার কারণ দুইটা এক. প্যাঁচা দিনে দেখে না। দুই. ঢেলাটা হাবি কাকা মেরেছে। তার হাতের নিশানা কিংবদন্তী তূল্য। বানের সময় ছিপ নৌকায় ধ্যানীর মত সামনের দিকে বসে থাকা হাবি কাকা সহজে হাতের ট্যাঁটা ছোঁড়েন না। তবে ছুড়লে সেটাতে অবশ্যই বিঁধে দিবেন শোল, মহাশোল বা গজাইর। যাই হোক। চলৎশক্তিহীন সেই প্যাঁচা কিভাবে কিভাবে স্থান পেল আমার রুমে। (সব সময় একটা বেশী বুঝি ভাব সেই সময় থেকেই ধরায় এলাকার আমার বয়েসীদের মধ্যে আমি পান্ডা গোছের ছিলাম, যে কোন সমস্যার শেষ পরামর্শ দেয়ার দায়িত্ব তাই আমার ঘাড়ে আসতো। বাসায় আনার পর ভীড় করে সবাই দেখতে আসত সেটা। খয়রী রঙের বেশ বড়সড় প্যাঁচাটা, খুবই ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন। একান্ত প্রয়োজন মনে না করলে সে মাথা নাড়ায় না। আমি সবচেয়ে মজা পেলাম যে একটা পাখি সেটা মানুষের মত সোজাসুজি তাকিয়ে থাকে। মুরগীর মত বিরক্তিকরভাবে মাথা নাড়ায় না। সবাই মিলে এবার তার খাবারের বন্দোবস্ত করতে লেগে গেলাম। পড়লাম বিপদে। এই পাখির মূল খাবার নাকি ইঁদুর! কেঁচো হলে সেটা সমস্যা ছিলো না। সেটা আমাদের সাথে নারিকেলের মালাইয়ে ভরা থাকতো। কিন্তু ইঁদুর ধরি কিভাবে? পরে আমার নানু জানালেন 'তেলাচুড়া' মানে আরশোলা বা 'উচ্চুঙ্গা' মানে ঘাসফড়িং ও এরা খায়। ব্যস ধানক্ষেত দাবড়ে আমরা ধরা শুরু করলাম নধর সব ঘাসফড়িং। এবং সেই ভদ্র পাখিটি সেটা বিনা বাক্যে খেয়ে ফেলত। এখনো তার ডানার ক্ষত ঠিক হয় নি। মাঝে মাঝে ছাদে নিয়ে যেতে সে ওড়ার মত ভাব করে কিন্তু পারে না। আমরা সবাই এর ভক্ত হয়ে গেছি তদ্দিনে। তার একটা নামও দিয়ে দিয়েছি। 'মিঃ গোবা'-নামের কোন মানে নেই। দেখতে ভদ্রলোক তাই সামনে মিস্টার আর গোবেচারা বলে গোবা। যাই হোক তাকে ছাদে নিয়ে যাবার সময় একটা সমস্যা দেখা গেলো। তাকে দেখামাত্র কোত্থেকে রাজ্যের কাকের দল বিকট চিতকার করতে করতে এসে পড়ে। এবং তাকে আক্রমণ করে। নানু জানালেন প্যাঁচা কাকের শত্রু। তারা রাতেরবেলা ছোঁ মেরে কাকের বাচ্চা নিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের যুক্তি হোল মিঃ গোবা তো ভদ্রলোক। সে তো আর এই কাকগুলির কারো ক্ষতি করে নি। যাই হোক। আমরা সাথের গুলতি নিয়ে মিঃ গোবা কে পাহারা দেই। তদ্দিনে বাসায় তার জন্যে একটা ফৃজের ফেলে দেয়া প্যাকিং বক্স কেটে একটা বাসা বানানো হয়েছে। গোবা মাঝে মধ্যে নিজেই সেটায় ঢুকে বসে থাকে। আর দিনের বেলা প্রায় পুরোটা সময় খালি ঘুমায়। এভাবে সপ্তা খানেক যাবার পর আমরা একটা সিক্স এ সাইট টুর্নামেন্ট খেলে দুপুরে ফিরছি। বাসার কাছাকাছি আসতে দেখি পেছনের পাটক্ষেতের পাশে এক গাদা কাক জটলা করে চেঁচামেচি করছে। ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে বাসায় ঢুকে মিঃ গোবাকে কোথাও দেখতে পেলাম না। ছুটে জানালা দিয়ে পেছনের ক্ষেতে তাকিয়ে দেখি একগাদা কাক একসাথে হয়ে মিঃ গোবার নিথর দেহে বার বার ঠোকর মারছে। সে কোন ফাঁকে একা একা বের হয়ে গেছিলো। ছুটে বের হয়ে যতক্ষণে পৌঁছালাম ততক্ষণে সব শেষ। ভদ্রলোক মিঃ গোবা নিথর হয়ে মরে পড়ে আছে। কাকগুলি আমাদের দেখে নিরাপদ দূরত্বে বসে কা কা করছে। গোবার ঠোঁটের কষে লাল রক্ত! মাথায় আগুন তুলে আশে পাশের সব মাটির ঢেলা তুলে কাকগুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করলাম, ততক্ষণে অন্যরাও এসে গেসে। কিন্তু তাতে করে তো আর মিঃ গোবা ফিরে আসবে না। আমরা মিঃ গোবা কে কবর দিলাম। কবরের ওপরে তার একটা সাদাটে পালক গুঁজে দিলাম। সেই পাটক্ষেতের পাশেই তার কবর। আমার রুমের জানালা দিয়ে সেটা দেখা যায়। পরের বর্ষা আসা পর্যন্ত সেটা দেখা যেত। আর ঘরে মিঃ গোবার ফেলে যাওয়া কিছু পালক, তার খাবার বাটি, ফ্রিজের প্যাকিং বক্স দিয়ে বানানো বাসা। আপনজন হারানোর বেদনা সেটাই ছিলো আমার প্রথম। সেই থেকে প্যাঁচা পাখিটার অপর আমার আলাদা একটা ভালো লাগা আছে। দেখলে একই সাথে ভালো লাগে,আবার সেই প্যাঁচাটার কথা ভেবে মন খারাপও হয়। মিঃ গোবার মৃত্যুর পর আমি আর কোন পাখি মারার চেষ্টা করিনি। তবে সেদিনের পর থেকে কাক কে আর পাখি মনে করিনি। অনেক দিন পর্যন্ত যে কোন ভাবে একটা কাক মেরে প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কাক অনেক ধূর্ত।



হ্যাংওভার কাটিয়ে

একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...