May 25, 2012
May 07, 2012
May 04, 2012
চিত্রগল্প (কমিক্স)
বাংলাদেশে কমিক্স এর চল নেই।
অন্ততঃ এখনো।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে যেভাবে পারছেন- করছেন এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ধরা খেয়ে বসে যাচ্ছেন। ওদিকে পাঠক শ্রেনীর অভিযোগ তারা কমিক বুক এর জন্যে চাতকের মত বসে থাকেন। যদি বাংলা 'ভালো' কমিক্স হয় তবে তারা সেটা বিনা বাক্য ব্যায়ে গাঁটের পয়সা বিলিয়ে কিনবেন। এটুকু শুনে অবাক লাগাটা স্বাভাবিক। পাঠককুলে কমিক্স এর এত চাহিদা থাকলে সেটা বিক্রি হয় না কেন? যেহেতু এই বছর আমি নিজে কমিক্স করব এমন একটা সংকল্প করেছি সেহেতু কাজে হাত দেবার আগে এই অত্যন্ত জরুরী প্রশ্নটার উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। কাজটা করতে গিয়ে আমি তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলেছি
১। যারা কমিক্স আঁকেন
২। যারা কমিক্স ছাপেন ও বিক্রি করেন
৩। যারা কমিক্স পড়েন (বা পড়তে চান)
এই তিনটি শ্রেনীর সাথে কথা বলে আমি যা বুঝেছি সেটা লিখতেই এই পোস্ট।
১। যাঁরা কমিক্স আঁকেন তারা প্রায় সবাই আসলে তাঁদের সর্বোচচ চেষ্টাই করেন। তাই কেন বিক্রি হয় না সেটা ভেবে তাঁরাও অবাক হন। তাঁদের ধারনা আমাদের এখনকার প্রজন্ম আসলে যে কোন ধরনের পড়াশোনার থেকেই পিছিয়ে গেছে। সেটার মতই কমিক্স পড়াটাও কমে গেছে। তবে আমি এই মতের সাথে সায় দিচ্ছি না কারণ সেই একই ঘটনা তো জাপান বা আমেরিকায় বা লন্ডনে আরো বেশী হবার কথা। সেখানে তবে কিভাবে রীতিমত কমিক্স এর ইন্ডাস্ট্রি চলছে? আর আমাদের যারা পড়াশোনা করে না জেনারেশন তারা কেন গিগায় গিগায় ডিসি মার্ভেল ডাউনলোড করে কমিক্স পড়ছে? আর বাংলা কমিক্স পাই না বলে হা হুতাশই বা করছে কারা তবে? আসলে এখানে পাঠককুলের একটা ছোট্ট শব্দ 'পাই না' তেই আসল উত্তর আছে। আমি যতই ভাল কমিক্স বানাই সেটা যদি পাঠকের কাছে না যায় তবে তার কোন মানে নেই। না হবে ব্যবসা না হবে ইন্ডাস্টৃর যাত্রা। এখন কথা হল পাঠক পায় না কেন? এবার আমরা কমিক্সগুলো যাদের পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেবার কথা ছিল তাঁদের কাছে যাই।
২। যাঁরা কমিক্স ছাপেন তাঁরা একটা কথাই বলেন সেটা হল 'এগুলা চলে না'। আচ্ছা এবার আসা যাক চলে না কেন? মানে যারা কমিক্স পাই না পাই না করে কাঁদেন তারা কেনেন না কেন?
৩। পাঠকদের মন্তব্য হল
-কমিক্স শুধু বইমেলাতেই বছরে একবার দেখি।
-দাম অনেক বেশী
-বৈচিত্র্য নাই, সে একই জিনিস
খেয়াল করুন তাহলে ব্যপারটা কী দাঁড়াচ্ছে। প্রথমত সারা বছর কমিক্স পাওয়া যাবে এই ভরসা কোন প্রকাশক আজো তৈরী করতে পারেন নি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন এটা চলে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হল একমাত্র পাঞ্জেরী প্রকাশন ছাড়া আমি আর কাউকে সারা বছর কমিক্স প্রকাশ করতে দেখিনি। অর্থাৎ প্রকাশকগণ শুধু মাত্র বছরে একটা মাস বইমেলাতে গুটিকয়েক কমিক্স প্রকাশ করে সেটার বিক্রিবাটা দেখে বাকী বছর আর এই জিনিস করেন না।
এবার দ্বিতীয় ব্যপারে আসুন ক্রেতারা বলছেন -দাম অনেক বেশী। অনেকেই বলবেন, কই ৩০-৪০ টাকার মধ্যেও তো কমিক্স আছে। সত্য কথা, কিন্তু সেটার সংখ্যা অনেক কম। শান্ত ভাইয়ের কল্পদূত আর সেই প্রাগৈতিহাসিক সূচীপত্র ছাড়া আর কারো নিউজপ্রিন্ট এ সাদা কালো কমিক্স আছে কি? কোন প্রকাশক কমিক্স করা মানেই ধরে নেন সেটা চার রঙ্গা ঝকমকা করে করতে হবে। এটা খেয়াল করতে ভুল হয়ে যায় যে কমিক্স এর পাঠক কিন্তু ঠিক শিশুরা না, কিশোর থেকে তরুন ইত্যাদী। তাই কোন বাচচাদের বই যদি আমি দারুণ রঙ ও বাঁধাই দিয়ে দাম রাখি পাঁচশো টাকা সেটা আসলে সেই বাচচা কেনে না, কেনে তার বাবা-মা। আর কমিক্স এর পাঠককে কিশোর বয়েসীদের কমিক্স টা কিনতে হবে তার জমানো পকেটখরচ থেকে। সুতরাং এইখানে চাকচিক্যের বদলে দাম যাতে হাতের মুঠোয় থাকে সেই চেষ্টা করতে হবে। গত মেলায় ও তার আগের মেলায় আমি সব স্টল ঘুরে ঘুরে কমিক্স ও চিল্ড্রেন বুক উলটে পালটে দেখেছি। অসাধারণ একটা কমিক বুক* পেয়েছিলাম কিন্তু সেটার গায়ের দাম ছিলো ২৩৪ টাকা, রেয়াত দিয়ে টিয়েও দু'শ টাকা পড়ে যায়। বলাই বাহুল্য সেটা ব্যবসা সফল হয় নি। এই ধরনের একটা সমস্যা এড়াতে জাপান কিন্তু একটা দারুণ উদ্যোগ নিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানীরা আমেরিকান অনেক কিছু বর্জনের পাশাপাশি কার্টুন কমিক্স ইত্যাদিও বর্জন করে। তার বিপরীতে দাঁড়ায় তাদের 'মাঙ্গা' (MANGA) মানে জাপানী কমিক্স (যদিও এটা নিয়ে বিতর্ক আছে)। এই জাপানী কমিক্সগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল এগুলি অত্যন্ত সস্তায় ছাপা হত। সাদা কালোতে আর নিউজপৃন্টে পেপারব্যাক আকারে ছাপা হওয়ায় খুব সহজে এই বইগুলি মানুষের হাতে চলে যায়।
অর্থাৎ কমিক্স টাকে আবেগের জায়গা থেকে না দেখে একেবারে খাঁটি ব্যবসায়িক একটা পণ্য আকারে ভেবেচিন্তে ডিজাইন করলে সেটা সফল হতে পারে।
আর হ্যাঁ, পাঠকদের শেষ অভিযোগটা অনেক বেশী গুরুত্বপুর্ণ। বিষয় বৈচিত্র। সেই একই নন্টে ফন্টে, চাচা চৌধুরী ইত্যাদি থকে বের হতে না পারলে নতুন পাঠকেরা তা নেবে না। ইন্টারনেটের যুগে দুই এক ক্লিকেই ঘুরে দেখে নিতে পারেন কমিক্স এখন কত রকমের বিষয় নিয়ে ডিল করছে। কমিক্স এখন রীতিমত সাহিত্যের সম্মান পাচ্ছে। গ্রাফিক নভেল সম্পর্কে তো আমরা এখনো সেভাবে জানি-ই না। আর সম্প্রতি Scott Mccloud তাঁর UNDERSTANDING COMICS এ একেবারে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে কমিক বুক এখনো তার সম্ভাব্য পাঠক শ্রেণীর শতকরা ২ ভাগের কাছেও পৌঁছাতে পারেনি। কমিক্স এখোনো কিছু পেশীবহুল সুপার হিরো আর গ্যাগ এর মাঝে আটকে আছে।
যাই হোক এত কিছু বলার পরে এখন একটাই প্রশ্ন- সবই তো বুঝলাম, এবার কি করা? ঠিক এই কথাটা আমিও ভাবছি। আসলে কোন কাজ করবার ভাল উপায় হল কাজটা করে ফেলা। এক্ষেত্রে প্রথমে আমরা যারা আঁকব বলে ভেবেছি তারা যে বিষয়গুলি মাথায় রাখছি সেগুলো হল-
১. কমিক্সের গল্পটা অবশ্যই ভালো হতে হবে- গল্প ভালো না হলে ড্রয়িং এ সেটা শোধরানো যাবে না
২. প্রডাকশন কস্ট পেরিয়ে দামটা যেন হাতের নাগালে থাকে, এবং
৩. সেটা কিভাবে পাঠকের হাতে যাবে তার একটা প্রোপার প্ল্যানিং করা
প্রোপার প্ল্যানিং এর অংশ হিসেবে আমরা যারা আঁকতে চাচ্ছি তারা জাতীয় দৈনিকে এই কমিক্সের চরিত্রগুলি এঁকে আগে মানুষের কাছে যেতে চাচ্ছি। যেমন এই বৈশাখে প্রথম আলো থেকে যেই কিশোর সংখ্যা বের হল সেখানে প্রায় ২৫ পৃষ্ঠা কমিক্স করা হয়েছে! (আগ্রহীগণ জোগাড় করে দেখে নিতে পারেন) এবং সেখানে বেশ কিছু নতুন ধরনের কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ বছরের শেষ নাগাদ অন্তত একটি কমিক্স সংকলন অথবা গোটা দশেক কমিক্স এর বই আমরা পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পারবো, যেগুলোর-
১.দাম থাকবে হাতের নাগালে এবং
২. গল্পে থাকবে বৈচিত্র্য
আশা করি পাঠককুলের সাড়া পাওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে , এই পোস্ট মারফত সবার কাছে গঠনমূলক পরামর্শ চাচ্ছি- চাইলে মেইল করতে পারেন mehedihaque@gmail.com এ
সি.কে. জাকি সিরিজের থেকে দুই পৃষ্ঠা- আরাফাত আর আমার করা |
ওই কিশোর সংখ্যা থেকে আমার এক পৃষ্ঠা হরর কমিক্স |
May 01, 2012
ধ্রুবদা'র বই
এই বই গত বছর ধ্রুবদা'র থেকে আমাদের কাঠপেনসিলের জন্যে আনা। শেষ মূহুর্তে আমাদের স্টল পাওয়া অনিশ্চিত হওয়াতে এটা আর শুরু করা হয়নি। আজ ছুটির দিনে একটানে গোটা লেয়াউট শেষ করলাম। ভাবছি এটা প্যাস্টেলে করব। ডিজিটাল করতে করতে ঘরের সব রঙ এ ছাতা পড়ে যাচ্ছে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
হ্যাংওভার কাটিয়ে
একটা সময় ছিল সব জায়গায় লেখা থাকতো (অবশ্যই এখনো আছে) 'রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ'। এখন অবস্থা উলটো। এখন যেন রাজনীতি ছাড়া অন্য আলাপ জমেই না। ...
-
আইডিয়া পাওয়া বা ক্রিয়েটিভ কাজ ইত্যাদিকে এখনো আমাদের সমাজে একটা অলৌকিক প্রতিভা হিসেবে ভাবা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সত্যও বটে। ত...
-
দীর্ঘ দশ মাস পর ২০১৮ সালের বিজ্ঞান বিভাগের নবম-দশম শ্রেণির ৫ টা (গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান) ও আর্টস ও কমার্স বি...
-
এইবার আমরা হুইলের আসল কাজটা দেখি। মানে রঙ করার সময় এটা আসলে কি কাজে লাগে। একটা ছবি রঙ করার সময় আসলে মূল যে ব্যপারটা মাথায় আগে আনতে হবে সেটা ...